লাইলাতুল কদর নামাজ পড়ার নিয়ম । শবে কদর বা লাইলাতুল কদর সম্পর্কে আলোচনা দেখুন

রোজা বা রমজান মাসে লাইলাতুল কদর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত- মুসলমানদের জন্য ক্ষমার একটি রাত হিসেবে এটিকে দেখা হয়- কেউ কেউ এ রাত ধরতে ইতেকাফে বসে যান–লাইলাতুল কদর নামাজ পড়ার নিয়ম

শবে কদরের নামাজ কিভাবে আসলো? ইসলামী ধর্মগ্রন্থ কোরআন ও হাদিসে শবে কদরের নামাজের স্পষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। তবে, শবে কদরের রাতে বেশি ইবাদত করার, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার, কোরআন তিলাওয়াত করার, দোয়া ও মোনাজাত করার, এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে লাইলাতুল কদরে কিয়াম করে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হবে।” ([সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ৭৬০; সহিহ বোখারি: হাদিস নং ২০১৪]) । অনেকে মনে করেন যে শবে কদরের নামাজ হজরত আলী (রাঃ) থেকে এসেছে। হজরত আলী (রাঃ) বলেছেন: “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে শবে কদরে একশ রাকাত নামাজ পড়তে দেখেছি।” ([মুস্তাদরাকে হাকিম: হাদিস নং ৩৫০৯])।

তবে, এই হাদিসটির সনদ দুর্বল বলে মনে করা হয়। অনেকে আবার মনে করেন যে শবে কদরের নামাজ কোরআনের এই আয়াত থেকে এসেছে: “ইন্না অঁহনানা নাজ্জালনা ফী লাইলাতুল কদর।” ([সূরা আল-কদর: ১]) । এই আয়াতের অর্থ হল: “নিশ্চয়ই আমি (কোরআন) লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি।” কিছু লোক মনে করেন যে এই আয়াতে উল্লেখিত “নামাজ” শব্দটি শবে কদরের নামাজকে বোঝায়। তবে, অনেকে মনে করেন যে এটি কোরআন তিলাওয়াতকে বোঝায়। পরিশেষে, শবে কদরের নামাজের উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট কোন মতামত নেই। তবে, শবে কদরের রাতে বেশি ইবাদত করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি উত্তম ঐতিহ্য।

কদরের নামাজ কতটা উত্তম? ভাবা যায় “লাইলাতুল কদরের” রাত্রিতে ১ সেকেন্ড ইবাদাত ২৩ ঘন্টা ইবাদতের করা চেয়েক উত্তম। ১ মিনিট ইবাদাত ৫৮ দিন ইবাদতের চেয়ে উত্তম। ১ ঘন্টা ইবাদাত ৯.৮ বছর ইবাদাতের চেয়ে উত্তম। এবং ২৪ ঘন্টা মানে ১ রাত ইবাদাত করলে ৮৩ বছর ইবাদাত করার চেয়ে উত্তম।সুবাহানআল্লাহ!!  আমরা অনেকেই এটা ধারণা রাখি যে ২৭ রামজানেই শবে কদরের রাত।আসলে এই ধারণা বা চিন্তা সম্পূর্ণই ভুল। শবে কদর ২০ রমজান থেকে ৩০ রমজানের ভিতরে যেকোনো বিজোড় রাতে হয়ে থাকে। যেমনঃ ২১,২৩,২৫,২৭,২৯।

কদরের রাতে নবী কি করতেন / শুধু নামাজ নয় যে কোন প্রকার ইবাদতে মশগুল হতে হবে

নবী কি কদরের রাতে শুধু নামাজ পড়তেন? হ্যাঁ, হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে নামাজ পড়তেন। তবে, শুধু নামাজই তিনি করতেন না। শবে কদরের রাতে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেসব কাজ করতেন তার মধ্যে রয়েছে। নামাজ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে দীর্ঘক্ষণ নামাজ পড়তেন। তিনি তাহাজ্জুদ নামাজ, তরাবীহ নামাজ, এবং সাধারণ নামাজ আদায় করতেন। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে দীর্ঘক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করতেন। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে আল্লাহর কাছে দীর্ঘক্ষণ দোয়া ও মোনাজাত করতেন। ইতেকাফ হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে মসজিদে ইতেকাফ করতেন। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে আগামী বছরের জন্য পরিকল্পনা করতেন।

শবে কদরের রাতে নবীর (সাঃ) বিশেষ কর্ম কি ছিল?হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে তার পরিবার ও সাহাবীদের সাথে সময় কাটাতেন। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে দরিদ্র ও অভাবীদের সাহায্য করতেন। হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) শবে কদরের রাতে পাপীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। উপসংহার: শবে কদরের রাতে হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেবল নামাজই পড়তেন না, বরং তিনি বিভিন্ন ধরণের ইবাদত-বন্দেগি করতেন। তিনি এই রাতটিকে আধ্যাত্মিক উন্নতির একটি বিশেষ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করতেন।

কদরের নামাজ কত রাকাত করে পড়তে হয়?

দুই রাকাত, দুই রাকাত করে আপনি যত খুশি পড়তে পারবেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবেন, দোয়া পড়বেন, ইস্তেগফার পড়বেন ও তওবা করবেন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। এ ছাড়া বিশেষ কিছু সুরা পড়তে হবে, এটা লোকমুখে প্রচলিত আছে, তবে এর কোনো ভিত্তি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *