সূচীপত্র
সরকারের কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের দমন পীড়নে সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে এবং ৯ দফা দাবি পেশ করেছে–কোটা আন্দোলন ২০২৪
কোটা সংস্কার আন্দোলন– কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও সরকারি চাকরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি জনমত। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থাকে সংস্কার করা এবং মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এটি গড়ে উঠে। কোটা ব্যবস্থা হলো একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি বা গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা, সংখ্যালঘু, নারী এবং অন্যান্য বিভিন্ন শ্রেণির জন্য কোটা রয়েছে। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং বঞ্চিত শ্রেণির মানুষকে সুযোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এটির উৎপত্তি হয়েছে।
কোটা ব্যবস্থার প্রজ্ঞাপনে কি বলা হয়েছে? সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সহ কর্পোরেশনগুলোতেও সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯-২০ গ্রেডের সকল নিয়োগে ৭% কোটা অনুসরণ করা হবে এবং অবশিষ্টাংশ ৯৩% মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে। ৭% কোটার মধ্যে ৫% মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য রাখা হয়েছে এবং ১% প্রতিবন্ধী ও ৩য় লিঙ্গের মানুষদের জন্য এবং ১% ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য রাখা হয়েছে। এখানে নারী কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য কোন কোটা রাখা হয়নি। নতুন কোটার প্রজ্ঞাপনের অনতিবিলম্বে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ চলতি মাসের ২৩ তারিখ হতে কার্যকর হবে। এখন কোটা সংক্রান্ত পূর্বের সকল আদেশ /পরিপত্র বা যে কোন আইন বাতিল বলে গন্য হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবি গুলো কি কি? ১। ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ২। ছাত্র হত্যার দায় নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। ৩। যেসব এলাকায় ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার পুলিশের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে বরখাস্ত করতে হবে। ৪। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরকে পদত্যাগ করতে হবে। ৫। নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৬। ছাত্র হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আটক ও হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে। ৭। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্রসংসদ চালু করতে হবে। ৮। অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হলগুলো খুলে দিতে হবে। ৯। আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থী যেন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪ / নয় দফা দাবী কি সরকার মেনে নিবে?
কোটা সমস্যার সমাধান হলেও এখন ছাত্র-ছাত্রীগণ বৈষম্য বিরোধ আন্দোলন তথা দেশ সংস্কারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। সরকার ৯ দফা দাবী মেনে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের একাংশ দোষী প্রমানিত হবে এবং এতে করে তাদের বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে চলে যেতে পারে এবং দেশের রাজনীতিতে নতুন মোর আসতে পারে।
Caption: We want justice Movement
সরকারি সিদ্ধান্ত আপডেট ২০২৪ । সরকার দাবীর বিপরীতে ৫টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে
- বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের সাথে সরকার প্রধান আলোচনায় বসতে চায়।
- আটককৃত বা ধরে নেওয়া শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
- বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বশাসিত পেনশন প্রত্যয় স্কিমটি বাতিল করা হয়েছে।
- সমস্যা সমাধানে উচ্চপদস্থ নেতাদের দিয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে সরকার।
- রংপুরের আবু-সাইদের হত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্য এর মধ্যে ২ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী সমন্বয়কগণ কি প্রধানমন্ত্রীর সাথে বসবে?
আন্দোলনকারীদের সাথে প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং তিনি বলেছেন তাদের জন্য গণভবন খোলা থাকবে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কগণ সরকার প্রধানের সাথে আলোচনায় বসতে চান না। তারা তাদের ৯ দফা দাবী বাস্তবায়ন পর্যন্ত মাঠেই থাকবে এবং দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কেউ কেউ বলছেন, খুনিদের সাথে আবার বসার কি আছে? এবং হত্যাকারীদের কাছে কি বিচার চাইবো।
গত শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিবৃতিতে বলা হয়, “সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে হত্যার প্রতিবাদে এবং ৯ দাবিতে আগামীকাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।আরো বলেন, “সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে হত্যার প্রতিবাদে এবং ৯ দাবিতে আগামীকাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও রবিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলো।‘আন্দোলন চলাকালে কোনো ট্যাক্স দেওয়া হবে না, কেউ কোনো অফিসে যাবেন না, সচিবালয় বন্ধ থাকবে। গণভবন ও বঙ্গভবনে কোনো গাড়ি প্রবেশ করবে না। সব কিছু বন্ধ থাকবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল দেওয়া যাবে না।
সূত্র: ইনডিপেন্ডডেন্ট নিউজ