সূচীপত্র
দেশের প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বেসরকারি এতিমখানার প্রায় ৬২ হাজার এতিম শিশুকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভাতা প্রদান করা হয় – বেসরকারি এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট ২০২৩
এতিম ভাতা কি? – ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের জনগণ অবহেলিত দুঃস্থ এতিম শিশুদের প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণে বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশের সকল ধর্মীয় জনগনেরই এতিম শিশুদের লালনপালনের জন্য বেসরকারিভাবে এতিমখানা পরিচালনা করে আসছে। বেসরকারি এসকল এতিমখানা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমাজসেবা অধিদফতর হতে সহযোগিতা প্রদান করা হয়। বেসরকারিভাবে এতিমখানাসমূহ প্রথমতঃ স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী নিবন্ধন প্রদান এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন প্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানাসমূহের শিশুদের প্রতিপালন, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয় যা ক্যাপিটেশন গ্রান্ট নামে পরিচিত। বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বেসরকারি এতিমখানার প্রায় ৬২ হাজার এতিম শিশুকে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট প্রদান করা হচ্ছে। দরিদ্র এতিম শিশুদের মানবসম্পদে পরিনত করাই ক্যাপিটেশন গ্রান্টের প্রধান উদ্দেশ্য।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতরের কার্যক্রম শাখা বেসরকারি এতিমখানা নিবন্ধন এবং প্রতিষ্ঠান শাখা ক্যাপিটেশন গ্রান্ট পরিচালনা করে। পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) এর নেতৃত্বে অতিরিক্ত পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, সমাজসেবা অফিসার সদর দপ্তর পর্যায়ে ক্যাপিটেশন গ্রান্ট কার্যক্রম পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট। জেলা পর্যায়ের উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার এবং শহর সমাজসেবা অফিসার মাঠ পর্যায়ের বেসরকারি এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্রান্ট কার্যক্রম তদারকি এবং মাঠ পর্যায় ও সদর দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে থাকেন।
এতিম ভাতা কাদের দেওয়া হয়? ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এতিম শিশুদের প্রতিপালনের জন্য বেসরকারি এতিমখানায় আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। স্নেহ-ভালবাসা ও আদর-যত্নের সাথে লালন পালন নিশ্চিতকরণ করা হয়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান নিশ্চিতকরণ করা হয়। শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষতা সাধন নিশ্চিতকরণ করা হয়। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা প্রদান করা হয়। পুনর্বাসন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার/শহর সমাজসেবা অফিসার তাঁর কার্যালয়ের আওতাধীন বরাদ্দপ্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানার বিলের বিপরীতে অর্থ উত্তোলন করে স্থানীয় “সোনালী ব্যাংকে” বেসরকারি এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট শিরোনামে একটি চলতি হিসাবে সংরক্ষণ করবেন এবং উক্ত হিসাব হতে “ক্রস চেক” এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এতিমখানার অনুকূলে অর্থ প্রদান করবেন। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে, বিলের অর্থ প্রদানে অহেতুক বিলম্ব গ্রহণযোগ্য নয়। ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বাবদ মাথাপিছু মাসিক বরাদ্দকৃত ২,০০০/- টাকা হতে খাদ্য বাবদ ১,৬০০/- টাকা, পোষাক বাবদ ২০০/- টাকা এবং ওষুধ ও অন্যান্য বাবদ ২০০/- টাকা হারে ব্যয় হবে। বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ হিসাব আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের
শর্তাবলী কি কি? ন্যূনতম ১০ জন এতিম নিবাসী নেই এমন কোন এতিমখানার জন্য ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। সমাজসেবা অধিদফতরের নিবন্ধনকৃত নয় অথবা এতিম শিশু নেই এমন কোন এতিমখানাকে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। ১৮ বছরের উর্দ্ধে কোন এতিমকে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। যে সব এতিমখানার বিরুদ্ধে মামলা / অভিযোগ আছে তাদের মামলা / অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বরাদ্দ দেয়া যাবে না। উপরিউক্ত শর্ত বা শর্তাদির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলে সংশ্লিষ্ট এতিমখানার জন্য গ্র্যান্ট স্থগিত রেখে সংশ্লিষ্ট উপপরিচালক, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজসেবা অধিদফতরকে অবহিত করবেন।
এতিমখানা টাকা কোথায় পায়? / সরকারি ভাবে এতিম ভাতা প্রতিটি এতিম খানায় প্রদান করা হয়
বেসরকারি এতিমখানার ৫-৯ বছর বয়সী এতিম অর্থ্যাৎ পিতৃহীন বা পিতৃমতিৃহীন দরিদ্র শিশুর শতকরা ৫০ ভাগ শিশু। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় ও শহর সমাজসেবা কার্যালয় এবং দেশব্যাপি প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বেসরকারি এতিমখানাকে প্রতিটি এতিমের জন্য মাসিক ১০০০ টাকা হারে বার্ষিক ১২০০০ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।
২০২২-২৩ অর্থ বছরে বেসরকারি এতিমখানার ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট ১ম কিস্তি বরাদ্দ ও মঞ্জুরি PDF Download
প্রতিবছর কি পরিমাণ অর্থ সরকার ছাড় করে থাকে? অর্থবছরভিত্তিক ক্যাপিটেশন গ্রান্ট এর হিসাব
অর্থবছর | উপকারভোগীর সংখ্যা | জনপ্রতি মাসিক বরাদ্দ | সর্বমোট বাজেট (টাকায়) |
২০০০-০১ | ২২৯১২ | ৪০০ | ১০৯৯৭৬০০০ |
২০০১-০২ | ২৩৮০০ | ৪০০ | ১১৪২৪৮০০০ |
২০০২-০৩ | ২৫৭৮৪ | ৪০০ | ১২৩৮১১০০০ |
২০০৩-০৪ | ২৮৯৬৩ | ৪০০ | ১৩৯০২১০০০ |
২০০৪-০৫ | ৩৩০৬৯ | ৪০০ | ১৫৮৭৩০০০০ |
২০০৫-০৬ | ৩৭১২০ | ৪০০ | ১৭৮১৭৬০০০ |
২০০৬-০৭ | ৩৯১৮৫ | ৪০০ | ১৮৮০৮৭০০০ |
২০০৭-০৮ | ৩৬২৭৩ | ৭০০ | ৩০৪৬৯৭০০০ |
২০০৮-০৯ | ৪৪৭৬৭ | ৭০০ | ৩৭৬০৩৯০০০ |
২০০৯-১০ | ৪৮০০০ | ৭০০ | ৪০৩২০০০০০ |
২০১০-১১ | ৫০০০০ | ৭০০ | ৪২০০০০০০০ |
২০১১-১২ | ৫২৫০০ | ১০০০ | ৬৩০০০০০০০ |
২০১২-১৩ | ৫৫০০০ | ১০০০ | ৬৬০০০০০০০ |
২০১৩-১৪ | ৫৯৫০০ | ১০০০ | ৭১৪০০০০০০ |
২০১৪-১৫ | ৬৩০০০ | ১০০০ | ৭৫৬০০০০০০ |
২০১৫-১৬ | ৬৬০০০ | ১০০০ | ৭৯২০০০০০০ |
২০১৬-১৭ | ৭২০০০ | ১০০০ | ৮৬৪০০০০০০ |
২০১৭-১৮ | ৮৬৪০০ | ১০০০ | ১০৩৬৮০০০০০ |
ফান্ড পেতে কি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়?
সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক রেজিস্ট্রেশনকৃত হতে হবে। বেসরকারিভাবে এতিমখানাসমূহ প্রথমত স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৬১ অনুযায়ী নিবন্ধন প্রদান এবং পরবর্তীতে নিবন্ধন প্রাপ্ত বেসরকারি এতিমখানাসমূহের শিশুদের প্রতিপালন, চিকিৎসা এবং শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্থিক সহায়তা করা হয় যা ক্যাপিটেশন গ্রান্ট নামে পরিচিত।