সূচীপত্র

বর্তমানে ওয়ারিশপ্রাপ্ত জমি বন্টন নামা ছাড়া হিস্যা অনুযায়ী নামজারি দেয়া হয় না- বাটোয়ারা ছাড়া নামজারি করার ক্ষেত্রে একই পজিশন একাধিক ব্যক্তির নামে খারিজ হওয়ার জটিলতা সৃষ্টি হয়- উত্তরাধিকার জমি বাটোয়ারা বাধ্যতামূলক ২০২৪

জমি খারিজ করতে ১১৫০ নাকি ১০,০০০ টাকা? নামজারি করা যায় ফি ১১৫০ টাকা। জেলা ভিত্তিক ভাবে কিছুটা কম বেশি হতে পারে। তার থেকে ১ টাকাও বেশি দিবেন না! আর সকল ওয়ারিশগন থেকে কেউ আলাদা বিক্রি করতে চাইলে সকল ওয়ারিশদের জানিয়ে বিক্রি করা ভালো অন্যথায় পরে দলিল গ্রহিতা সমস্যায় পরবে। যদিও এখন কেউ দখল নেই এমন সম্পদ কিনে না। আর কোন ভাবে ওয়ারিশগন রাজি না থাকলে (চায় না কেউ বিক্রি করুক) তাহলে যে বিক্রি করবে সে দলিল গ্রহিতা থেকে দাম-দর ঠিক করে টাকা নিয়ে দলিল গ্রহিতাকে পাওয়া অফ এটোর্নি দিয়ে দিবে।

উত্তরাধিকার বলতে কি বুঝায়? উত্তরাধিকার শব্দটি শুনলে আমরা সাধারণত একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি, মালিকানা বা দায়িত্ব অন্য কারও কাছে স্থানান্তরের কথা মনে করি। সহজ কথায়, উত্তরাধিকার হল একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি, ঋণ বা অন্যান্য আইনগত অধিকার অন্য একজন বা একাধিক ব্যক্তির কাছে স্থানান্তর হওয়ার প্রক্রিয়া। যে ব্যক্তি উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পায়, তাকে উত্তরাধিকারী বলা হয়। এটি হতে পারে জমি-বাড়ি, গাড়ি, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, গহনা, ব্যবসা, বা অন্য কোন ধরনের সম্পদ। একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি কীভাবে বণ্টিত হবে তা নির্দিষ্ট করে একটি আইনগত দলিল তৈরি করতে পারে। এই দলিলটিকে উইল বলা হয়। প্রতিটি দেশেই উত্তরাধিকার সংক্রান্ত নিজস্ব আইন রয়েছে। এই আইনগুলো নির্ধারণ করে কে কে উত্তরাধিকারী হতে পারবে এবং তারা কী পরিমাণ সম্পত্তি পাবে।

মিউটেশন বা নামজারি কীভাবে করবেন? জমির মালিক হওয়ার পর মিউটেশন বা নামজারি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জমির মালিকানা দাবি করা, মালিকানা করা জমি ক্রয় বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির `নামজারি` গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি একটু সচেতন হোন ও সতের্কতা অবলম্বন করেন, তাহলে নামজারি খুব কঠিন কিছু নয়। অনেকে জমির নামজারি বা মিউটেশন করতে গিয়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। অনেকে হয়ে থাকেন প্রতারিত। আবার অনেকে বহু সময় ব্যয় করেও নামজারি করানোর সুযোগ পান না। এ থেকে পরিত্রান পেতে সময়মতো মিউটেশন করা জরুরি। জমির নামজারির জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করতে হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিউটেশন সহকারি পদের একজন দায়িত্বে থাকে। নাজির পদের একজন ফি জমা নেন। তহশিলদাররা তদন্তের দায়িত্বে থাকেন। কোনো আবেদন করা হলে এ নামজারি করা জমির ওপর তদন্ত করার নিয়ম আছে। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তহশিলদারের অফিসে নামজারির আবেদন করে থাকে। এটা ঠিক নয়। সব সময় মিউটেশন বা নামজারির জন্য আবেদন করতে হবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে। এখন অনলাইনেই ভূমি খারিজের আবেদন করতে হয়। আবেদন লিংক

বাটোয়ারা বন্টননামা দলিল ছাড়া নামজারি করা যায়। অনলাইনে আবেদন করতে গেলেই দেখবেন বন্টননামা দলিল চাচ্ছে, শুধু ভূমি মালিক ও পর্চা দিয়ে এখন আর নামজারি বা খারিজ করা যায় না

একটু বেশি খরচ করলেই দাগে দাগে নামজারি করে খাজনা পরিশোধ করে অনায়াসে বিক্রি করা যায় এটি করতে যাবেন না। ফলে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবেন। এ বিষয়ে আইন সংশোধণ হয়েছে তাই আপনি নামজারি ব্যতীত জমি কিনবেন না এবং দখলেও যাবেন না।

Land Vatoara Dolil Bangladesh

Caption: Land Distribution of Warish

ভূমি আইন কি বলে? উত্তরাধিকার সূত্রে যতিয়ান সংশোধনের ক্ষেত্রে ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩(খ) ধারায় নিম্নরূপ উল্লেখ আছেঃ”উত্তরাধিকারদের বিষয়ে খতিয়ান সংশোধনঃ

  1. (১) কোন ব্যক্তি যিনি তাঁহার বংশধর বলিয়া পরিচয় দেন সেই বাস্তির মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি আপোসমূলকভাবে সম্পত্তির বিভাজন ব্যক্তিক আইন ধারা বাটোয়ারা কার্যকরী হইবে। এইরূপ বাটোয়ারার পর একটি বাটোয়ারা দলিল প্রস্তুত করিতে হইবে এবং ১৯০৮ সনের রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্টের বিধানমতে রেজিষ্টি করিতে হইবে।
  2. (২) এইরূপ বাটোয়ারা চুক্তি প্রস্তুত এবং রেজিস্টেশনের পর রাজস্ব অফিসার যতিয়ান সংশোধন করিবেন।”
  3. বাস্তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার(ভূমি)গণ শুধুমাত্র ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমেই খতিয়ান সংশোধন করছেন বলে দৃষ্ট হচ্ছে। যার ফলে আইনের বাধ্যবাধকতা লাঞ্চিত হবে এবং একইসাথে আপীল মামলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  4. এমতাবস্থায় ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ (খ) ধারা যথাযথভাবে প্রতিপালনক খতিয়ান সংশোধন করার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) এবং সহকারী কমিশনার(ভূমি)গণকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জমি খারিজ করতে কি কাগজ লাগে?

১) সংশ্লিষ্ট জমির এস এ খতিয়ানের ফটোকপি। ২) আর এস খতিয়ানের ফটোকপি। ৩) জমির দলিলের ফটোকপি। ৪) বায়া দলিলের ফটোকপি (প্রয়োজন হলে)। ৫) ওয়ারিশান সনদ ( প্রয়োজন হলে)। ৬) ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলার কপি। ৭) ভোটার আইডি কার্ড এর ফটোকপি। ৮) এক কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।

অনলাইনে নাকি আবেদন করা যায়? হ্যাঁ। অফলাইনে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করে আবেদন করতে হবে। আবেদনের নিচে তফসিল দিতে হয়। জমির বিস্তারিত পরিচয় দিতে হয়। খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, মৌজা ও জেলা উল্লেখ করতে হয়। আবেদনে নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রি ক্রয় দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্ট থাকতে হবে। দলিলের অনুলিপি, ভায়া দলিল, পরচা বা খতিয়ানের অনুলিপি ওয়ারিশ সনদপত্র (ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কমিশনারের প্রদত্ত প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কর পরিশোধের দলিল, বণ্টননামা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) দিতে হবে। এছাড়া খাসজমি বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে কবুলিয়ত, নিলামের ক্ষেত্রে বায়নানামা, কোনো অফিস কর্তৃপক্ষের অনুমতি জমা দিতে হবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে। কোনো রায় বা ডিক্রির কারণে মিউটেশন করতে হলে ডিক্রি বা রায়ের অনুলিপি জমা দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে মিউটেশন করাতে গিয়ে কোনো দালালের খপ্পরে যেন না পড়েন।

মিউটেশনে কি তদন্ত হয়? হ্যাঁ। মিউটেশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এর তদন্ত হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রথমেই মিউটেশন রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে তহশিলদারের কাছে পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। তদন্তে সাধারণত যাচাই করা হয় প্রস্তাবিত জমি দখলে আছে কি নেই। এটি খাসজমি কি-না, সার্টিফিকেট মোকদ্দমা আছে কি না, অধিগ্রহণ করা হয়েছে কি না, সম্পত্তির মূল পরিমাণ ঠিক আছে কি না, আদালতের রায় বা ডিক্রিমূলে কি না, মামলা-মোকদ্দমা চলছে কি না প্রভৃতি। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তা যাচাই-বাছাই করে দেখেন। প্রয়োজনে তিনি আবারও তদন্তে প্রেরণ করতে পারেন কিংবা নিজেও তদন্ত করতে পারেন। পরে যাবতীয় কাগজপত্র, দলিল মিলিয়ে দেখে মিউটেশনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন হলে খতিয়ান খোলা হয়। পক্ষগণ হাজির হতে হয় এবং শুনানীকালে যাবতীয় দলিল পরীক্ষা করা হয়। এর ভিত্তিতে আবেদন মঞ্জুর বা নামঞ্জুর হয়।

মিউটেশন করতে কত দিন লাগে? খতিয়ান খোলার পর নতুন নম্বর পড়ে। খতিয়ান তহশিল অফিসে পাঠায়। তহশিলদার রেজিস্টারে নতুন জোত খুলে ছক অনুযায়ী তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। মালিকের নামে আগে থেকে জমি থাকলে জোত নম্বরও থাকে। তাই নতুন জোত খোলার দরকার হয় না। পুরোনো জোতে জমির দাগ ও খতিয়ান লিখে জমির পরিমাণ যোগ করে ভূমি উন্নয়ন কর হিসাব করা হয়। মোট পাঁচ কপি খতিয়ান করে এক কপি আবেদনকারীকে দেওয়া হয়। অন্যান্য কপি তহশিল অফিস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস, জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুম ও জেলা জজের রেকর্ডরুমে প্রেরণ করা হয়। সরকারি আইন অনুযায়ী, মহানগর এলাকায় ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি নিষ্পত্তি করার বিধান। তবে একন ২৮ দিনের মধ্যেই হয়ে যায়।

     
     
     

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *