সূচীপত্র
আইন মন্ত্রণালয় এক আদেশে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে বিয়ে পড়ানো বা নিবন্ধন করা এবং তালাক নিবন্ধন করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটি ২৯/০৪/২০১৫ খ্রিঃ তারিখে জারি করা হয়।
নোটারি পাবলিকের এফিডেভিট কেন বাতিল?
আইন মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নোটারি পাবলিক কর্তৃক পাত্র-পাত্রীর একটি ঘোষণা সম্বলিত এফিডেভিটের মাধ্যমে তথাকথিত বিয়ে পড়ানো হচ্ছে, যা আইনে মোটেও স্বীকৃত নয়। এতে একদিকে যেমন বিবাহের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়, তেমনি বিবাহ বা তালাক রেজিস্ট্রী না হওয়ায় এর কোনো আইনগত দালিলিক সুরক্ষা থাকছে না। এছাড়া, নোটারি পাবলিকের কাছে এরূপ ঘোষণার আইনগত কোনো ভিত্তিও নেই।
⚖️ মুসলিম আইন ও রেজিস্ট্রেশন আইন অনুযায়ী বিধান
- মুসলিম বিবাহের আবশ্যকীয় উপাদান: মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহের জন্য (ক) বর বা কনে এদের কোনো এক পক্ষ কর্তৃক বিবাহের প্রস্তাব প্রদান; (খ) অন্য পক্ষ কর্তৃক উক্ত প্রস্তাব গ্রহণ; (গ) কমপক্ষে ০২ (দুই) জন সাক্ষী থাকা; এবং (ঘ) দেনমোহর থাকা আবশ্যক। এই উপাদানগুলোর কোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে বিবাহ সিদ্ধ হবে না।
- রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক: ‘The Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act, 1974’-এর ৩ ধারার বিধান অনুযায়ী প্রত্যেকটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক এবং এই রেজিস্ট্রেশন করার এখতিয়ার কেবলমাত্র নিকাহ রেজিস্ট্রারগণের।
নির্দেশনার বাস্তবায়ন
এমতাবস্থায়, আইনে স্বীকৃত না হওয়ায় নোটারি পাবলিকগণকে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে/তালাক পড়াতে বা নিবন্ধন না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উক্ত নির্দেশাবলী সংশ্লিষ্ট নোটারি পাবলিকগণকে অবহিতকরণের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সকল জেলা জজ, জেলা প্রশাসক ও আইনজীবী সমিতির সভাপতিকে অনুরোধ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ নিরোধে কাজীদের ভূমিকার উপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন এবং বিবাহের ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া ও সুরক্ষাকে নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য।

এফিডেভিট সম্পন্ন করার পর মুসলিম আইনে বিয়ে পড়ানো যাবে?
না, এফিডেভিট সম্পন্ন করার মাধ্যমে মুসলিম আইনে বিয়ে সম্পন্ন হয় না এবং এটি বিবাহের একমাত্র প্রমাণ বা আইনি বৈধতা দিতে পারে না।
এফিডেভিট বা হলফনামা হলো মূলত একটি ঘোষণাপত্র যা আপনি নোটারি পাবলিক বা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বেচ্ছায় করেছেন বলে শপথ করেন। এটি শুধুমাত্র প্রমাণ করে যে আপনি বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বা বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।
১. মুসলিম আইনে বিয়ের মূল শর্ত (বৈধতা):
মুসলিম আইন অনুযায়ী একটি বিবাহ সিদ্ধ হওয়ার জন্য (অর্থাৎ বৈধ হওয়ার জন্য) নিম্নলিখিত আবশ্যকীয় উপাদানগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে:
- প্রস্তাব ও গ্রহণ: বর বা কনের কোনো এক পক্ষ কর্তৃক বিবাহের প্রস্তাব প্রদান এবং অন্য পক্ষ কর্তৃক সেই প্রস্তাব গ্রহণ।
- সাক্ষী: কমপক্ষে ০২ (দুই) জন সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী উপস্থিত থাকা।
- দেনমোহর: দেনমোহর থাকা।
এই শর্তগুলো পূরণ হলেই শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ সম্পন্ন হয়।
২. এফিডেভিটের ভূমিকা:
- এফিডেভিট এই শর্তগুলোর কোনোটিই পূরণ করে না। এটি কেবলই একটি ঘোষণা।
- আইন মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে নির্দেশ দিয়েছে যে, নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে তথাকথিত বিয়ে পড়ানো বা নিবন্ধন করা আইনে স্বীকৃত নয় এবং এতে বিবাহের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
৩. রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) বাধ্যতামূলক:
- ‘The Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act, 1974’ অনুযায়ী মুসলিম আইনে অনুষ্ঠিত প্রত্যেকটি বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
- এই রেজিস্ট্রেশন করার এখতিয়ার কেবলমাত্র নিকাহ রেজিস্ট্রারগণের (কাজী)।
- রেজিস্ট্রেশন বা কাবিননামা ছাড়া শুধু এফিডেভিটে আইনি অধিকার (যেমন – দেনমোহর, ভরণপোষণ বা উত্তরাধিকার) আদায় করা কঠিন বা সম্ভব নয়।
যদি আপনি নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) দ্বারা শরীয়ত মোতাবেক সকল শর্ত পূরণ করে বিয়ে সম্পন্ন করেন, তবে সেই বিয়ে বৈধ। কিন্তু যদি কেবল এফিডেভিট করেই থাকেন এবং কোনো কাজীর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন না করেন, তবে সেই বিয়ের কোনো আইনি দালিলিক সুরক্ষা থাকবে না এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে। বিবাহের পর যত দ্রুত সম্ভব কাজীর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেওয়াই আইনগতভাবে সঠিক ও সুরক্ষিত পথ।
