সূচীপত্র
বিভিন্ন সময় কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের সরকারি আদেশ জারি করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের বিদেশ ভ্রমণের সরকারি আদেশে (জিও) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীর পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করা হচ্ছে না। সরকারি আদেশে পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ না থাকায় কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ কোন পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না- কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের বিদেশ ভ্রমণের সরকারি আদেশে (জিও) পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে-বিদেশ ভ্রমণে জিও নিয়ে নতুন নির্দেশনা ২০২৫
বিদেশ ভ্রমণের জিও কি? “বিদেশ ভ্রমণের জিও” বলতে বোঝায় গভর্নমেন্ট অর্ডার (Government Order – GO) বা সরকারি আদেশ, যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি প্রদানের জন্য জারি করা হয়। এই জিওতে সাধারণত ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়কাল, অর্থায়ন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ থাকে। বিশেষ করে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই জিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ছাড়া তাদের পক্ষে সরকারিভাবে বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব নয়। সম্প্রতি, পাসপোর্ট নম্বর এই জিও-তে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত পাসপোর্ট যাচাই করা যায়। সংক্ষেপে, বিদেশ ভ্রমণের জিও হলো একটি আনুষ্ঠানিক নথি যা সরকারি কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের অনুমোদন দেয়।
জিও ছাড়া কি বিদেশ যাওয়া যায় না? না, জিও (Government Order – GO) ছাড়া বিদেশ যাওয়া যায় না—এই ধারণাটি শুধুমাত্র সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনি বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে জিও-এর প্রয়োজন নেই। আপনার যা যা লাগবে তা হলো বৈধ পাসপোর্ট এটি আপনার পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। ভিসা (যদি প্রয়োজন হয়) আপনি যে দেশে ভ্রমণ করতে চান, সেই দেশের ভিসা লাগবে যদি দেশটি ভিসা-মুক্ত না হয়। বিমান টিকিট/ভ্রমণ টিকিট আপনার ভ্রমণের নিশ্চিত টিকিট। হোটেল বুকিং (যদি প্রয়োজন হয়) কিছু দেশ বা ভিসার জন্য হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ প্রয়োজন হতে পারে। পর্যাপ্ত আর্থিক সংগতি বিদেশ ভ্রমণের খরচ বহন করার জন্য আপনার যথেষ্ট অর্থ আছে তার প্রমাণ। অন্যান্য কাগজপত্র যেমন ভ্রমণ বীমা, হলুদ জ্বর টিকা কার্ড (কিছু দেশের জন্য), ইত্যাদি।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জিও কেন প্রয়োজন? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিদেশ ভ্রমণের জিও বা সরকারি আদেশ একটি বাধ্যতামূলক নথি। এর কারণ হলো অনুমোদন সরকারি কাজের জন্য বা ব্যক্তিগত কাজেও বিদেশ ভ্রমণের জন্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। জিও সেই অনুমোদনপত্র। পর্যবেক্ষণ জিও-এর মাধ্যমে সরকার জানতে পারে কোন কর্মকর্তা কখন, কোথায়, কী উদ্দেশ্যে এবং কতদিনের জন্য বিদেশ যাচ্ছেন। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। পাসপোর্ট নম্বর সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নতুন নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের জিও-তে পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে কোন কর্মকর্তা কোন পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ ভ্রমণ করছেন। আইনি বাধ্যবাধকতা জিও ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ সরকারি আইনের লঙ্ঘন হতে পারে এবং এর জন্য বিভাগীয় মামলাও হতে পারে।
জিওতে সরকারি কর্মচারীর পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ থাকা বাধ্যতামূলক / এতে করে অন্য পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবে না।
সুতরাং, আপনি যদি সাধারণ নাগরিক হন, তবে জিও ছাড়া অবশ্যই বিদেশ যেতে পারবেন। কিন্তু যদি আপনি সরকারি চাকরিজীবী হন, তবে বিদেশ ভ্রমণের জন্য আপনার জিও (এবং সাম্প্রতিক নিয়ম অনুযায়ী, জিও-তে আপনার পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ) থাকা আবশ্যক।
Caption: New Order For GO
জিও (G.O.) বা Government Order হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের নির্দিষ্ট একটি উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণের অনুমোদনপত্র, যা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তর থেকে ইস্যু করা হয়। একটি বিদেশ ভ্রমণের জিও-তে যা থাকে
- কর্মচারীর নাম ও পদবি
- ভ্রমণের উদ্দেশ্য ও স্থান
- ভ্রমণের সময়কাল
- ব্যয় কে বহন করবে (সরকার/সংস্থা/নিজস্ব খরচ)
- অফিসিয়াল দায়িত্বপালনের শর্তাবলী
- অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর ও তারিখ
কবে এটি প্রয়োজন হয়?
যখন কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারি প্রশিক্ষণ, সেমিনার বা ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ, উচ্চশিক্ষা, অথবা রাষ্ট্রীয় কাজে বিদেশে যেতে চান — তখন সরকারের অনুমোদন লাগে। এই অনুমোদনই হলো “বিদেশ ভ্রমণের জিও”। উদাহরণ: “জনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক, তথ্য মন্ত্রণালয়, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত থাইল্যান্ডে এক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করবেন। সরকারের খরচে এ সফর অনুমোদিত হলো।” তাই জিওতে পাসপোর্ট নম্বর থাকতে হবে।
জিও নাকি ভিসা কোনটি আগে ইস্যু করতে হয়? বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে জিও (Government Order) এবং ভিসা (Visa)—উভয়ই প্রয়োজন, তবে জিও আগে ইস্যু করতে হয়, তারপর ভিসা। সরকারি অনুমোদন ছাড়া ভিসার আবেদন করা নিয়মবহির্ভূত যদি আপনি সরকারি কর্মচারী হন। অনেক ক্ষেত্রে ভিসা আবেদন ফর্মে “Official Permission” বা “G.O. Reference Number” দিতে হয়। আপনি যদি সরকারি সফরে যাচ্ছেন, তাহলে দূতাবাসে/হাইকমিশনে পাঠানো নোট ভার্বাল (Note Verbale) বা চিঠিতেও জিও নম্বর উল্লেখ করতে হয়।
সঠিক ধাপগুলো১. প্রথমে: আপনার ভ্রমণের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয় তারা যাচাই করে জিও ইস্যু করে | ২. তারপর: সেই জিও নিয়ে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করেন | আপনি যদি ব্যক্তিগত সফরে যান (ছুটিতে, নিজের টাকায়), তবুও “ছুটির অনুমতি ও অনাপত্তি সনদ (NOC)” বা জিও প্রয়োজন হতে পারে। |
ভিসা রিজেক্ট হলেও জিও থাকা কোনো সমস্যা নয় — তবে ভিসা পাওয়ার আগে বিদেশে যাওয়া আইনত সম্ভব না। | ||