ভূমি আইন ২০২৫

কৃষি ভূমি রক্ষায় ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ । কৃষি জমি নষ্ট করে বাড়ি করা যাবে না?

১৫ অক্টোবর, ২০২৫ – ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন, শিল্প-কারখানা স্থাপন ও রাস্তাঘাট নির্মাণসহ নানা কারণে কৃষি ভূমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে এবং এটি সর্বসাধারণের অবগতি ও মতামতের জন্য প্রকাশ করেছে

অধ্যাদেশের মূল লক্ষ্য হলো ভূমিরূপ ও ভূ-প্রকৃতি অনুসারে ভূমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং কৃষি ভূমি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভূমির জোন ভিত্তিক ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা

অধ্যাদেশের প্রধান দিকসমূহ:

  • কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা: এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ‘বাংলাদেশ ভূমি জোনিং ও ভূমি সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে কর্তৃপক্ষ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত ‘ভূমি সংস্কার বোর্ড’ এর সকল ক্ষমতা প্রয়োগ ও দায়িত্ব পালন করবে
  • জোনিং ম্যাপ প্রণয়ন: কর্তৃপক্ষ সমগ্র দেশে বা পর্যায়ক্রমে একটি সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার জন্য ‘ভূমি ব্যবহার জোনিং ম্যাপ’ ও স্থানিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে, ডাটাবেজ সংরক্ষণ করবে এবং নিয়মিত হালনাগাদ করবে
  • কৃষি ভূমি সংরক্ষণ: কর্তৃপক্ষের অন্যতম প্রধান কাজ হবে ভূমির ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিতে ভূমির সুরক্ষা নিশ্চিত করা। দেশের মোট কৃষি ভূমির ন্যূনতম শতকরা ৮০ ভাগ শুধুমাত্র কৃষি কাজের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে
  • অবৈধ পরিবর্তন রোধ: অধ্যাদেশে ইট ভাটায় ব্যবহারের জন্য ভূমির উপরিভাগ (Top Soil), পাহাড় ও টিলা কর্তন ও মোচন রোধ করার এবং কৃষি ভূমি, অকৃষি ভূমি, জলাভূমি, নদ-নদী, খাল, হাওড়, বাওড়, বিল, পাহাড়, টিলা, বনভূমি প্রভৃতির ক্ষতিকর পরিবর্তন রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় আদেশ ও নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে
  • অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ: জোনিং ম্যাপে কৃষি ভূমি হিসেবে চিহ্নিত ভূমিতে নিজস্ব বসতবাড়ি নির্মাণ (বিধি দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণ) ব্যতীত অন্য কোনো কাজে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া স্থাপনা বা ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করলে, কর্তৃপক্ষ তা অপসারণ বা উচ্ছেদের আদেশ দিতে পারবে এবং নির্মাণ সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করতে পারবে
  • অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা: ‘জোনিং ম্যাপ’ চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বশেষ প্রকাশিত চূড়ান্ত স্বত্বলিপিতে (Record of Rights) বর্ণিত শ্রেণির ভিত্তিতে কৃষি বা অকৃষি ভূমি বিভাজন করা হবে ‘নাল’, ‘ধানী জমি’, ‘বাগন’, ‘মৎস্যচাষ’, ‘পুকুর পাড়’ সহ প্রায় ৩০টি শ্রেণিভুক্ত ভূমিকে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে কৃষি ভূমি হিসাবে গণ্য করা হবে
  • কৃষি ভূমির প্রকারভেদ: ফসলভেদে কৃষি ভূমিকে ‘এক ফসলি’, ‘দুই ফসলি’, ‘তিন ফসলি’, ‘চার বা ততোধিক ফসলি’, ‘উদ্যান ফসলি’ এবং ‘মাঠ ফসলি’ শ্রেণিতে বিন্যাস করা হয়েছে

মতামত প্রদানের অনুরোধ:

প্রস্তাবিত খসড়াটির ওপর আইনজ্ঞ, সুধীজন, স্টেকহোল্ডার ও সর্বসাধারণের সুচিন্তিত মতামত চেয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় আগ্রহী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে আগামী ১৫ (পনেরো) কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে আইন-২ (law2@minland.gov.bd) ই-মেইল ঠিকানায় বা সিনিয়র সচিবের দপ্তর, কক্ষ নং-৩১৮, ভূমি মন্ত্রণালয়, ভবন নং-৪, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা এই ঠিকানায় ডাকযোগে মতামত পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে

উপসচিব মোঃ মঈনুল হাসান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত সকল মতামত খসড়া প্রণয়ন কমিটি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে খসড়াটি জনবান্ধব, সর্বজনগ্রাহ্য ও প্রয়োগসিদ্ধ করতে আন্তরিকভাবে বদ্ধপরিকর

জমি থাকলেই কৃষি জমিতে বাড়ি করা যায় কি?

না, প্রস্তাবিত ‘ভূমি ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুযায়ী শুধুমাত্র জমি থাকলেই কৃষি জমিতে বাড়ি করা যাবে না।অধ্যাদেশের ধারা ৬(৫) অনুযায়ী, কৃষি ভূমি হিসাবে চিহ্নিত কোনো ভূমিতে কৃষি এবং বিধি দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণ ভূমিতে নিজস্ব বসত বাড়ি নির্মাণ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কোনো স্থাপনা বা ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না

অতএব, কৃষি জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে:

  • ভূমিটি অবশ্যই ‘ভূমি জোনিং ম্যাপে’ কৃষি ভূমি হিসেবে চিহ্নিত হতে হবে।
  • বাড়িটি নিজস্ব বসত বাড়ি হতে হবে
  • বসত বাড়ি নির্মাণের জন্য ভূমির পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত হতে হবে
  • নির্মাণের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে

যদি এই বিধান লঙ্ঘন করে কেউ কৃষি ভূমিতে বসত বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণ করে, তবে ‘বাংলাদেশ ভূমি জোনিং ও ভূমি সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ’ বা তাদের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেটি অপসারণের আদেশ দিতে পারবেন এবং আদেশ পালনে অপারগ হলে কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারবে

ব্যবহার ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫.pdf

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *