সূচীপত্র
বাংলাদেশ। অর্পিত সম্পত্তি (ভেস্টেড প্রপার্টি) প্রকৃত মালিকের কাছে প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত ওই সম্পত্তির অস্থায়ী ইজারা চলমান থাকবে। ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১’ (সংশোধিত) এর ধারা-১৪ অনুযায়ী, এই সম্পত্তি প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের (ডিসি) হাতে ইজারা প্রদানের ক্ষমতা ন্যস্ত আছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই আইনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত সম্পত্তি বৈধ মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করা হলেও, সম্পত্তি প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য অস্থায়ী ইজারা প্রদান করা হচ্ছে।
️ আইনি কাঠামো ও বিধান
‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১’-এ সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, প্রত্যর্পণযোগ্য সম্পত্তির তালিকাভুক্ত সম্পত্তি আসল মালিক বা তার উত্তরাধিকারীর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তবে, এই আইন জারির পূর্ব থেকেই অর্পিত সম্পত্তি অস্থায়ী ইজারা দেওয়া হচ্ছে।
ধারা-১৪: এই ধারায় বলা হয়েছে, যতক্ষণ না সম্পত্তিটি প্রত্যর্পণ করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত জেলা প্রশাসক অস্থায়ীভাবে ইজারা দিতে পারবেন। এটি মূলত সরকারি দখলে বা নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে।
ইজারা নবায়ন ও সালামির হার: ইজারা সংক্রান্ত পুরনো হারে পরিবর্তন এনে ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ইজারার বার্ষিক সালামির হার জমির শ্রেণি, ব্যবহার ও অবস্থানভেদে পুনঃনির্ধারণ করেছে। পরিবর্তিত ব্যবস্থাপনা ব্যয় এবং বাজারের বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রাখতেই এই হার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল এবং আপিল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সম্পত্তি প্রত্যর্পণের আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন না করা সম্পত্তি বা সরকারের পক্ষে রায় হওয়া সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হবে এবং জেলা প্রশাসক তা ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্তের জন্য ইজারা দিতে পারবেন।
⚖️ মামলার রায় ও ভবিষ্যৎ দিক
আইনি জটিলতা নিরসনে আদালতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায়ও রয়েছে। হাইকোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছে যে, অর্পিত সম্পত্তি আইনে কোনো জমি ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত জেলা প্রশাসকরা তদারকি ও লিজ দিতে পারবেন, যা বিদ্যমান ইজারা প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে।
এই বিধানের ফলে, প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্পিত সম্পত্তির ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে, যা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব যোগাতেও সহায়তা করে। তবে, মূল মালিক বা তার উত্তরাধিকারীদের জন্য সম্পত্তি দ্রুত প্রত্যর্পণের বিষয়টি সরকারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

খাস জমি কি ১০০ বছরের জন্য ইজারা নেয়া যায়?
খাস জমি সরাসরি ১০০ বছরের জন্য ইজারা (বন্দোবস্ত) নেওয়ার বিধান সাধারণত নেই, তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হয় যা ৯৯ বছর পর্যন্ত নবায়নের সুযোগ রাখে। বাংলাদেশে খাস জমি (সরকারি জমি) ইজারা বা বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। এই নীতিমালা জমির ধরণ (কৃষি, অকৃষি), ব্যবহারের উদ্দেশ্য এবং প্রাপকের যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হয়।
মূল তথ্য ও প্রচলিত বিধান
১. কৃষি খাস জমি:
কৃষি খাস জমি সাধারণত ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে বা প্রতীকী মূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
এই বন্দোবস্ত সাধারণত আজীবন (Liferent) বা দীর্ঘমেয়াদী হয়, তবে এটি ভূমিহীনদের জন্য বসতভিটা ও জীবিকার সংস্থান নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়।
এটি ক্রয় বা হস্তান্তর করা যায় না।
২. অকৃষি খাস জমি (দীর্ঘমেয়াদী ইজারা):
অকৃষি খাস জমি, যেমন শিল্প স্থাপন, বাণিজ্যিক ব্যবহার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য, সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী ইজারা দেওয়া হয়।
‘ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল, ১৯৯০’ এবং ‘অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা’ অনুযায়ী, এই দীর্ঘমেয়াদী ইজারা সাধারণত ৩০ (ত্রিশ) বছরের জন্য সম্পাদিত হয়।
তবে, এই ৩০ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা ৯৯ বছর পর্যন্ত নবায়ন করার সুযোগ থাকে। নবায়নের মাধ্যমে এটি কার্যত প্রায় ১০০ বছরের জন্য ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করে।
৩. সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরতা:
বন্দোবস্তের মেয়াদ, ইজারার শর্ত এবং সেলামীর হার নীতিমালা এবং সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে বড় অঙ্কের বা গুরুত্বপূর্ণ বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার প্রধানের পূর্ব অনুমোদন প্রয়োজন হতে পারে।
সংক্ষেপে, খাস জমি সরাসরি ১০০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া না হলেও, অকৃষি খাস জমি প্রথমে ৩০ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী তা ৯৯ বছর পর্যন্ত নবায়ন করার সুযোগ থাকে।
খাস জমি সংক্রান্ত যেকোনো আবেদন বা ইজারার জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা উপজেলা ভূমি অফিসারের (এসিল্যান্ড) সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
