আজকের খবর ২০২৫

পে-কমিশন গঠন ও চাকরি আইন ২০২৫ । নতুন কমিশন ও আইন সংশোধনের প্রেক্ষাপট কি?

সূচীপত্র

পে-কমিশন গঠন এবং চাকরি আইন ২০২৫-এর প্রেক্ষাপট হলো দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বেতন-ভাতা পুনর্বিবেচনা করা এবং একটি নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা। এই প্রেক্ষাপটে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নতুন পে-কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে– পে-কমিশন গঠন ও চাকরি আইন ২০২৫

পে স্কেল দেওয়া কি খুবই জরুরি? হ্যাঁ। গত ২৪ জুলাই ২০২৫ -এই দিনটি সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হয়ে থাকবে। বহু প্রতীক্ষার পর সরকার নতুন পে-কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে এর পেছনে রয়েছে হাজারো কর্মচারীর দীর্ঘ আন্দোলন, আশা-নিরাশার দোলাচল, আর অক্লান্ত প্রচেষ্টা। কেউ প্রচারে থেকেছেন, কেউ থেকেছেন নেপথ্যে, কিন্তু লক্ষ ছিল একটাই—ন্যায্য অধিকার।

নতুন আইন কি ন্যায্যা দাবী আদায়ে প্রতিবন্ধকতা? বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, “প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং সভা, সমিতি ও সংগঠন গঠনের অধিকার থাকিবে।” এই সাংবিধানিক অধিকার সকল নাগরিকের মতো সরকারি কর্মচারীদেরও প্রযোজ্য—যতক্ষণ তা শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাভিত্তিক হয়। অন্যদিকে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, “জনস্বার্থে” সরকার চাইলে কোনও কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারে। এই ধারার প্রয়োগে নতুন মাত্রা যোগ করে ২০২৫ সালের ২৩ জুলাই সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যেখানে বলা হয়—কোনো সরকারি কর্মচারী যদি অনুচিত আচরণ বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, বিশেষ করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন, তবে তাঁকে জনস্বার্থে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হতে পারে। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়—সব আন্দোলন কি জনস্বার্থবিরোধী? শান্তিপূর্ণ, সংবিধানসম্মত দাবি কি অপরাধ? এই ব্যাখ্যা নিয়েই আজ উদ্বেগ বাড়ছে।

নতুন পে-কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে কৃতিত্ব কার? পে-কমিশনের গঠনের খবরে অনেকে এখন কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। অথচ বাস্তবতা হলো, যারা বছরের পর বছর মাঠে ছিলেন—স্মারকলিপি দিয়েছেন, গণসংযোগ করেছেন, আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে দাবি তুলেছেন—তাদের অবদানই আজকের এ অর্জনের পেছনে মূল চালিকাশক্তি। যদি শুরু থেকেই সব সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হতো, একটি ব্যানারে আওয়াজ তুলতো—তবে এই পে-কমিশন আরও আগেই গঠিত হতো। তবুও এই অর্জন দেরিতে হলেও প্রথম ধাপ আজ অর্জিত হয়েছে।

সরকারি কর্মচারীদের কন্ঠ রোধের আইন ২০২৫ / নতুন পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে কি চাকরি আইনের আলোচনা ধাপাচাপা দেওয়া হচ্ছে । প্রতিনিধি না রাখলে কি কর্মচারীরা আবার বৈষম্যের স্বীকার হবে?

আমরা সকলে সরকারি চাকরিজীবী, এখানে কেউ কারো প্রতিপক্ষ নই। এই আন্দোলনে কোন সংগঠনই রাজনৈতিক সংগঠন নয়, প্রত্যেক সংগঠনই পেশাজীবী সংগঠন, তাই,সকল বিভক্তি পেছনে ফেলে, সামগ্রিক অর্জনকে সম্মিলিতভাবে রক্ষা করি। দাবি শুধু নয়, অর্জনের কৃতিত্ব ভাগাভাগি করতে গিয়ে সম্মান ও মর্যাদার জায়গাটিও যেন আমাদের হাতছাড়া না হয়। ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতা চাই।

Caption: Job Act and Pay Commission

পে-কমিশন এবং চাকরি আইন ২০২৫ সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

  1. বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনা: ২০১৫ সালের পে স্কেল অনুসারে বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন। তবে, গত কয়েক বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে, যা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
  2. জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি: দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারি কর্মচারীদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
  3. নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ: পে-কমিশন নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণের জন্য সুপারিশ করবে, যা বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।
  4. চাকরি আইন ২০২৫: সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই আইনে তাদের চাকরির নিরাপত্তা, পদোন্নতি, বদলি, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
  5. পে-কমিশনের কার্যপরিধি: পে-কমিশন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন, এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে।
  6. সুপারিশের সময়সীমা: পে-কমিশনকে ৬ মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

পে কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি চাই কেন?

আমাদের দাবি—পে-কমিশনে প্রতিনিধি যেন সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি যেন কেবল উচ্চপদস্থদের পক্ষ নেন না, বরং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের দুঃখ, বঞ্চনা ও আর্থিক বৈষম্যের বিষয়গুলো সামনে আনেন। কমিশনের দায়িত্ব হবে ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও বাস্তবতা ভিত্তিক সুপারিশ তৈরি করা—যা প্রশাসনিক ভেদাভেদ নয়, বরং সম্মানজনক কর্মপরিবেশ গঠনে সহায়ক হবে। সব অর্জন সংবাদপত্রে আসে না। কেউ কেউ নিঃশব্দে সংগ্রাম করেন—পেছন থেকে, নিরালায়। আজ যাঁদের মুখে আমরা কমিশনের ঘোষণা শুনছি, তাঁদের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এই সব নিঃশব্দ যোদ্ধারা। আমি বা আমরা—স্বতন্ত্র স্কেলের দাবিদার—আমরাও এই সংগ্রামের অন্তর্ভুক্ত। হয়তো দৃশ্যমান নই, কিন্তু প্রতিটি সাফল্যে আমরা নিঃশব্দভাবে জড়িত। আপনাদের সাফল্যে আমরাও গর্বিত। আপনাদের জয়, আমাদের সম্মিলিত জয়। ইতোপূর্বে এমন পে স্কেল হলেও কর্মচারীরা বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে তাই প্রতিনিধি রাখাটা খুবই জরুরি।

✅ পে-কমিশনে প্রকৃত কর্মচারী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্তি।✅ সংবিধানসম্মত আন্দোলনের অধিকার রক্ষায় প্রশাসনের সহনশীলতা।✅ সকল সংগঠনের ঐক্য।
✅ বৈষম্যহীন ও বাস্তবমুখী সুপারিশ।✅ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।✅ ক্রেডিট: শারমিন স্বর্ণা
   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *