সূচীপত্র
জমি কেনা যেকোনো মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। তবে, এই প্রক্রিয়ায় সামান্য অসতর্কতা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। জমি বেচাকেনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং প্রতারণা এড়াতে ক্রেতাকে অবশ্যই কিছু মৌলিক বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ভূমি সংক্রান্ত জালিয়াতির হার বাড়ায়, বিশেষজ্ঞরা জমি কেনার আগে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণের পরামর্শ দিচ্ছেন।
১. মৌলিক তথ্য ও তফসিল যাচাই
জমির মালিকানা নিশ্চিত করার প্রথম ধাপ হলো তার তফসিল (Schedule) অর্থাৎ মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর এবং উক্ত দাগে মোট জমির পরিমাণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা। এই তথ্যগুলো সঠিক না হলে পরবর্তীতে নামজারি বা রেজিস্ট্রেশনে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
২. সকল কাগজপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ
বিক্রেতার কাছ থেকে জমি সংক্রান্ত সকল মূল দলিলের ফটোকপি সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- সি.এস, এস.এ, আর.এস, এবং সর্বশেষ বি.এস/ঢাকা সিটি জরীপের খতিয়ান।
- জমির উৎস প্রমাণকারী বায়া দলিল (Chain of Title), অর্থাৎ শুরু থেকে সর্বশেষ পর্যন্ত সকল বেচাকেনার দলিল।
- সর্বশেষ নামজারি খতিয়ান এবং হাল সনের খাজনার দাখিলা (রসিদ)।
৩. মালিকানার উৎস নিশ্চিতকরণ
বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে মালিক হলে, তার ক্রয় দলিল বা বায়া দলিল রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। যদি বিক্রেতা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হন, তবে সর্বশেষ জরিপের খতিয়ানের সাথে বিক্রেতা বা তার পূর্বসূরির নামের যোগসূত্র (Inheritance Linkage) মিলিয়ে দেখতে হবে।
৪. উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বণ্টননামা (ফরায়েজ)
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির ক্ষেত্রে, বিক্রেতার শরিকদের সঙ্গে সম্পত্তি ভাগাভাগির বণ্টননামা (ফরায়েজ) যাচাই করা অপরিহার্য। যদি রেজিস্ট্রিকৃত বণ্টননামা না থাকে, তবে ক্রেতার উচিত ফরায়েজ অনুযায়ী বিক্রেতা যেটুকু অংশের প্রকৃত দাবিদার, কেবল সেটুকু অংশই ক্রয় করা।
৫. দায়মুক্তির সনদ ও মামলা সংক্রান্ত তথ্য
ক্রয় করতে যাওয়া জমিটির ওপর কোনো আইনি দায়বদ্ধতা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। দেখতে হবে:
- জমির বিরুদ্ধে কোনো মামলা বিচারাধীন আছে কিনা বা কোনো মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে কিনা।
- জমিটি ব্যাংক বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বন্ধক বা দায়বদ্ধ আছে কিনা।
৬. সরকারি অধিগ্রহণ ও প্রকৃতি যাচাই
জমিটি খাস, পরিত্যক্ত, শত্রু সম্পত্তি কিনা বা সরকার কোনো উন্নয়ন কাজের জন্য অধিগ্রহণ (Acquisition) করেছে কিনা, তা অবশ্যই যাচাই করতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল এ (Land Acquisition) শাখা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
৭. বিক্রেতার বৈধতা (নাবালক/অপ্রকৃতিস্থ)
জমির মালিক নাবালক বা অপ্রকৃতিস্থ (Unsound Mind) কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে। নাবালক হলে আদালতের মাধ্যমে অভিভাবক নিযুক্ত করে বিক্রয়ের অনুমতি নিতে হবে। আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া নাবালকের সম্পত্তি ক্রয় করলে তা বাতিল হতে পারে।
৮. নামজারি ও খাজনা দাখিল (DCR) যাচাই
সর্বশেষ নামজারি পরচা, ডিসিআর (Duplicate Carbon Receipt) এবং খাজনা দাখিল (রসিদ) অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে। হালনাগাদ খাজনা পরিশোধ না থাকলে তা জমির মালিকানার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
৯. নকশা ও সরেজমিন পরিদর্শন
মালিকানা স্বত্ব সঠিক পাওয়ার পর, সি.এস/আর.এস/বি.এস নকশা নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখতে হবে নকশা অনুযায়ী জমিটি সেই দাগের কিনা। এছাড়া, সাব–রেজিস্ট্রারের অফিসে তল্লাশি দিয়ে জমির সর্বশেষ বেচাকেনার তথ্য যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে।
১০. দখল ও পথাধিকার নিশ্চিতকরণ
সবশেষে, বিক্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট জমিটি বর্তমানে কে দখলে আছে এবং কিনতে গেলে ভোগ দখলে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে কিনা তা সরেজমিনে যাচাই করে নিতে হবে। রাস্তা বা পথাধিকারের (Right of Way) কোনো বাধা নিষেধ আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক।
⚠️ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: ভূমি সংক্রান্ত সকল কাগজপত্রের মূল কপি দেখানোর জন্য বিক্রেতাকে অনুরোধ করুন। প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ ভূমি বিশেষজ্ঞ বা আইনজীবীর মাধ্যমে সকল কাগজপত্র ও মালিকানা যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
দলিল ও রেজিস্ট্রেশন: বায়না দলিল, হেবা দলিল, পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি এবং রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া। ২. ভূমি পরিমাপ ও এককসমূহ: শতক, কাঠা, বিঘা, একর – এই এককগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক। ৩. নামজারি ও জমাখারিজ: নামজারি প্রক্রিয়া কখন করতে হয় এবং এর গুরুত্ব। ৪. নতুন ভূমি আইন ও ডিজিটাল রেকর্ড: সাম্প্রতিক ভূমি আইন সংস্কার বা ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ।
