আজকের খবর ২০২৫

গুরুদণ্ড প্রদানের ক্ষমতা পেলেন বিভাগীয় কমিশনার ২০২৫ । ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গুরুদণ্ড বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ক্ষমতা?

সূচীপত্র

গুরুদণ্ড দিতে বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ক্ষমতা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের বিষয়ে জারি হলো আদেশ-ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ড (গুরুত্বপূর্ণ শাস্তি) প্রদানের ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারকে দেওয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।

মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর ৪ (৩) বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ড প্রদানের ক্ষমতা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশক্রমে অর্পণ করা হলো।

জানা গেছে, এর আগে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভূমি ব্যবস্থাপনার মাঠ পর্যায়ের নবম থেকে বিংশ গ্রেডের কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ক্ষমতা অর্পণের একটি আদেশ জারি হয়েছিল।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুর ইসলাম স্বাক্ষরিত এই আদেশটি সকল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ) পাঠানো হয়েছে। নতুন এই আদেশ মাঠ প্রশাসনের কর্মীদের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

গুরুদণ্ড এবং ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্ভাব্য অপরাধ । গুরুদণ্ড (Major Penalties) কী?

গুরুদণ্ড হলো সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে আনীত গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আরোপিত কঠোর শাস্তি। যখন কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসদাচরণ (Misconduct), দুর্নীতি (Corruption), অদক্ষতা (Inefficiency) বা পলায়ন (Desertion)-এর মতো গুরুতর অভিযোগের বিভাগীয় কার্যক্রম (Departmental Proceedings) শুরু করা হয় এবং তা প্রমাণিত হয়, তখনই সাধারণত গুরুদণ্ড আরোপ করা হয়।

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ (ধারা ৩২)-এর বিধান অনুযায়ী গুরুদণ্ডগুলো হলো:

  • নিম্ন পদ বা নিম্নতর বেতন স্কেলে অবনমিতকরণ (Reduction to a lower post or lower scale of pay): অর্থাৎ, পদমর্যাদা বা বেতন স্কেল স্থায়ীভাবে কমিয়ে দেওয়া।
  • বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান (Compulsory retirement): চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বাধ্যতামূলকভাবে অবসর দিয়ে দেওয়া।
  • চাকরি হইতে অপসারণ (Removal from service): চাকরি থেকে এমনভাবে সরিয়ে দেওয়া, যাতে তিনি ভবিষ্যতে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য অযোগ্য হন না, তবে তাৎক্ষণিক চাকরিচ্যুত হন।
  • চাকরি হইতে বরখাস্ত (Dismissal from service): চাকরি থেকে এমনভাবে বরখাস্ত করা, যাতে তিনি ভবিষ্যতে কোনো সরকারি চাকরির জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হন। এটি সবচেয়ে কঠোরতম শাস্তি।

এর বিপরীতে, লঘুদণ্ড (Minor Penalties) বলতে তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ, বেতন স্কেলের নিম্নধাপে অবনমিতকরণ (সাময়িকভাবে), বা আর্থিক ক্ষতিপূরণ আদায়ের মতো তুলনামূলকভাবে কম কঠোর শাস্তিকে বোঝায়।


ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে ধরনের অপরাধে লিপ্ত হন

ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরাসরি জনগণের ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রদানের সাথে যুক্ত থাকায়, এই খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর রিপোর্ট এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার বা কানুনগো-দের বিরুদ্ধে সাধারণত নিম্নোক্ত ধরনের অপরাধে লিপ্ত থাকার অভিযোগ ওঠে:

১. দুর্নীতি ও আর্থিক অসদাচরণ:

  • ঘুষ গ্রহণ (Bribery): ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবার জন্য (যেমন: নামজারি, জমা খারিজ, খতিয়ান সংশোধন, মিসকেস, খাজনা প্রদান ইত্যাদি) আইনগত ফি-এর অতিরিক্ত অর্থ বা ঘুষ গ্রহণ করা। এটিই সবচেয়ে প্রচলিত অভিযোগ।
  • আর্থিক ক্ষতিসাধন: সরকারি অর্থ বা সম্পত্তির ইচ্ছাকৃত ক্ষতিসাধন বা অর্থ আত্মসাৎ করা।
  • আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদ (Accumulation of wealth): জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিপুল পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হওয়া।

২. কর্তব্যে অবহেলা ও অপব্যবহার:

  • কর্তব্যে অবহেলা (Negligence of duty): সময়মতো কাজ শেষ না করা, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করা বা জনগণের সেবা প্রদানে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব করা (যার ফলে সেবাগ্রহীতা হয়রানির শিকার হন)।
  • দালাল সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশ: ভূমি অফিসের বাইরে সক্রিয় দালাল বা মধ্যস্থতাকারীদের সাথে যোগসাজশ করে অবৈধ লেনদেন পরিচালনা করা।
  • সরকারি আদেশ অমান্য: ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আইনসঙ্গত আদেশ, পরিপত্র বা নির্দেশ অমান্য করা।

৩. জালিয়াতি ও প্রতারণা:

  • দলিল বা রেকর্ডে কারচুপি: অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ভূমি রেকর্ড, খতিয়ান বা নামজারির নথিপত্রে পরিবর্তন, ভুল তথ্য সন্নিবেশ বা জালিয়াতি করা।
  • মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল: তদন্ত বা ভূমি পরিদর্শনের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বমূলক বা মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করা।
  • নামজারি/খাজনায় হয়রানি: নামজারি (মিউটেশন) এবং ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) সংক্রান্ত কাজে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা।

এই ধরনের অপরাধগুলো সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী গুরুদণ্ড আরোপের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *