আজকের খবর ২০২৫

নবম পে-স্কেল ও সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা স্কেলের দাবিতে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন, আসছে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে আবারো সরব হচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। আগামী শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভা এবং এরপর যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে কর্মচারী সংগঠনগুলো।

এই কর্মসূচির মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: ১. নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন: ডিসেম্বর, ২০২৫ এর মধ্যে বৈষম্যহীন নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা। ২. নতুন স্কেল ও গ্রেড: বেতন স্কেলের অনুপাত ১:৪ নির্ধারণ করে মোট ১২টি গ্রেড প্রবর্তন করা। ৩. ন্যূনতম বেতন: সর্বনিম্ন স্কেলের বেতন ৩৫,০০০ টাকা নির্ধারণ করা। ৪. সুবিধা বহাল: তিনটি টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনরায় বহাল করা।

কর্মসূচির আয়োজকদের পক্ষ থেকে সকল কর্মচারীকে আগামী শুক্রবার সকাল ১০:০০ ঘটিকার মধ্যে দলবদ্ধভাবে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের স্লোগান, “নিজের দাবি নিজেই বাস্তবায়ন করি।”

ঋণের বোঝায় জর্জরিত কর্মচারীরা:

আন্দোলনকারীরা বলছেন, বর্তমান বেতন কাঠামোতে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশেষ করে ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীরা চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই দ্রুত নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন জরুরি।

আর্থিক কষ্টের চিত্র তুলে ধরে এক কর্মচারী গভীর রাতে তার হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, “ভাই এখনো ঘুমান নাই? ঘুম আসেনা দুটি চোখে ঋণের চিন্তায় ভাই।” এই একটি মন্তব্যই ইঙ্গিত দেয় যে, সামান্য বেতনে সংসার চালাতে গিয়ে কর্মচারীরা ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন এবং তাঁদের রাতের ঘুমও কেড়ে নিয়েছে এই দুশ্চিন্তা। দ্রব্যমূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন না পাওয়ায় খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।

কর্মচারী সংগঠনগুলো দাবি করছে, নবম পে-স্কেল দ্রুত বাস্তবায়ন করে বৈষম্য দূর করা না হলে, এই আর্থিক দুরবস্থা দূর হবে না। তাদের এই আলোচনা সভা ও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত দাবি পূরণের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মচারীরা পে-স্কেল বাস্তবায়ন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে আন্দোলন করেছেন।

কর্মসূচির স্থান: ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সেগুনবাগিচা। সময়: আগামী শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, সকাল ১০:০০ ঘটিকা। দাবি: ১:৪ অনুপাতে ১২টি গ্রেড, সর্বনিম্ন ৩৫,০০০ টাকা স্কেল এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রেখে ডিসেম্বর/২০২৫ এর মধ্যে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন।

সরকারি কর্মচারীরা যে ধরনের বেতন কাঠামো চান, তার একটি সম্ভাব্য রূপরেখা নিচে দেওয়া হলো। এটি তাদের বর্তমান দাবি এবং আর্থিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে:


প্রস্তাবিত নবম পে-স্কেল কাঠামো

১. মূল নীতি ও উদ্দেশ্য:

  • জীবনযাত্রার ব্যয় ও মুদ্রাস্ফীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন কাঠামো।
  • সকল স্তরের কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য হ্রাস।
  • দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও মেধার যথাযথ মূল্যায়ন।
  • কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা ও উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত করা।

২. গ্রেড বিন্যাস:

  • মোট গ্রেড সংখ্যা: ১২টি গ্রেড (বর্তমান ২০টির পরিবর্তে)।
  • গ্রেড অনুপাত: ১:৪ (সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বেসিক বেতনের অনুপাত)।
প্রস্তাবিত গ্রেডবর্তমান গ্রেড (সম্ভাব্য সমতা)প্রস্তাবিত সর্বনিম্ন বেসিক স্কেল (টাকা)প্রস্তাবিত সর্বোচ্চ বেসিক স্কেল (টাকা)
গ্রেড-১১,৪০,০০০+
গ্রেড-২১,১৫,০০০ – ১,৩৫,০০০
গ্রেড-৩৯৫,০০০ – ১,১৫,০০০
গ্রেড-৪৭৬,০০০ – ৯৫,০০০
গ্রেড-৫৬৩,০০০ – ৭৬,০০০
গ্রেড-৬৫২,০০০ – ৬৩,০০০
গ্রেড-৭৭-৮৪৫,০০০ – ৫২,০০০
গ্রেড-৮৪০,০০০ – ৪৫,০০০
গ্রেড-৯১০৩৫,০০০ – ৪০,০০০
গ্রেড-১০১১-১৩৩০,০০০ – ৩৫,০০০
গ্রেড-১১১৪-১৬২৫,০০০ – ৩০,০০০
গ্রেড-১২১৭-২০৩৫,০০০ (সর্বনিম্ন)২৫,০০০ –

৩. সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেসিক স্কেল:

  • সর্বনিম্ন বেসিক স্কেল: ৩৫,০০০ টাকা (গ্রেড-১২ এর জন্য)।
  • সর্বোচ্চ বেসিক স্কেল: ১,৪০,০০০ টাকা বা তার বেশি (গ্রেড-১ এর জন্য)।

৪. টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড:

  • পুনর্বহাল: পূর্বের মতো তিনটি টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখা হবে। এর ফলে পদোন্নতি না পেলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর কর্মচারীরা উচ্চতর গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
    • টাইম স্কেল: নির্দিষ্ট সময় (যেমন ৮, ১২, ১৬ বছর) একই পদে থাকার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তি।
    • সিলেকশন গ্রেড: যোগ্য ও দক্ষ কর্মচারীদের জন্য বিশেষ বিবেচনায় উচ্চতর গ্রেডে উন্নীতকরণ।

৫. অন্যান্য ভাতা ও সুবিধা:

  • বাড়ি ভাড়া ভাতা: বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতি রেখে বাড়ি ভাড়া ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরের জন্য পৃথক হার নির্ধারণ।
  • চিকিৎসা ভাতা: চিকিৎসা ভাতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি করা এবং প্রয়োজনে সকল কর্মচারীর জন্য উন্নত স্বাস্থ্য বীমা চালু করা।
  • শিক্ষা ভাতা: সন্তানের শিক্ষা ব্যয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে শিক্ষা ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি।
  • যাতায়াত ভাতা: কর্মস্থলে যাতায়াত খরচ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে যাতায়াত ভাতার যৌক্তিকীকরণ।
  • উৎসব ভাতা: সকল উৎসবের জন্য পূর্ণ বেসিকের সমপরিমাণ উৎসব ভাতা প্রদান।
  • মহিলা কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা: ডে-কেয়ার, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও অন্যান্য সুবিধাদি বৃদ্ধি ও নিশ্চিতকরণ।

৬. পে-কমিশন ও বাস্তবায়ন:

  • একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী পে-কমিশন গঠন করা, যা নিয়মিতভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় পর্যালোচনা করে বেতন কাঠামো সমন্বয় করবে।
  • বাস্তবায়নের সময়সীমা: আগামী ডিসেম্বর, ২০২৫ এর মধ্যে এই নবম পে-স্কেল সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা।

এই প্রস্তাবিত কাঠামোটি সরকারি কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলোকে প্রতিফলিত করে এবং এটি তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে কর্মক্ষেত্রে তাদের উৎসাহ ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *