জনাব মকবুল সাহেব একটি জমির মালিক তিনি দীর্ঘ ১৮ বছর উক্ত জমিতে চাষাবাদ করছেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছেন। কিছুদিন পূর্বে মকবুল সাহেব ভূমি অফিসে যান জমির খাজনা দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভূমি অফিস তার এই জমির জন্য খাজনা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ভূমি অফিস থেকে বলা হয় লোকমান নামের এক ব্যক্তি এই জমিটি তার নিজের নামে নামজারি করে নিয়েছেন। সুতরাং ভূমি অফিস এই জমির বিপরীতে মকবুলের নামে খাজনা নিতে পারবে না। এই কথা শুনে মকবুল খুব চিন্তায় পড়ে গেল।
কিভাবে এই জমিটি এখন তার নিজের নামে ফিরিয়ে আনা যায় তা জানতে মকবুল এবার গেলে একজন ভূমি বিশেষজ্ঞের কাছে। অনেক সময় দেখা যায় ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সাধারণ জনগনের মালিকানাধীন ও নামজারিকৃত জমি মূল মালিকের নাম কেটে অন্য কাউকে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়। এতে করে সহজ-সরল সাধারণ মানুষ অনেক হয়রানির মধ্যে পড়ে।
চলুন এবার জানি আপনার মালিকানধীন কোন জমি অন্য কেউ নামজারি করে নিলে কিভাবে উক্ত নামজারি বাতিল করে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করবেন।
ধাপ ১ঃ এ জন্য মকবুলকে প্রথমেই সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর নামজারি বাতিলের জন্য লিখিত আবেদন করতে হবে। উক্ত আবেদনপত্রে বাদী এবং বিবাদীর নাম এছাড়া বিবাদমান জমির তফসিল এবং ভূমি অফিসের কোন সিদ্ধান্তের ফলে মকবুলের স্বত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিভাবে মকবুলের স্বত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকতে হবে।
আবেদনপত্রের সহিত প্রয়োজনীয় কোর্ট ফি সংযুক্ত করতে হবে। এছাড়া উক্ত আবেদনপত্রের সহিত মকবুলের উক্ত জমিতে মালিকানার প্রমাণস্বরূপ দলিলপত্র ও খতিয়ানের ফটোকপি প্রদান করতে হবে। একই সাথে মকবুলের যুক্তির স্বপক্ষে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।
এবার আবেদনপত্র এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র গুলো একত্রে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে জমা দিতে হবে। ভূমি অফিস আবেদনটি জমা করে একটি মিস কেস নম্বর দিবেন।
২য় ধাপঃ এসি ল্যান্ড মকবুলের নামজারি বাতিলের আবেদনের কাগজপত্র দেখে প্রাথমিক সত্যতা পেলে আবেদনটি গ্রহণ করবেন। আর যদি আবেদনের প্রাথমিক সত্যতা না পায় তবে আবেদনটি খারিজ করে দিবেন।
ধাপ ৩ঃ এসি ল্যান্ড যদি আবেদনটি গ্রহণ করেন তবে ভূমি অফিস থেকে উক্ত জমিটি বর্তমানে যে ব্যক্তির নামে নামজারি করা আছে উক্ত ব্যক্তিকে একটি লিখিত নোটিশ প্রদান করবেন। এবং নির্ধারিত দিনে তাকে মকবুলের আরজির লিখিত জবাব এবং উক্ত জমিতে তার মালিকানার দলিলপত্র সহ হাজির হতে বলা হবে।
ধাপ ৪ঃ নির্দিষ্ট হাজিরার দিন এসি ল্যান্ড উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং উভয়ের মালিকানার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখবেন।
ধাপ ৫ঃ উভয়পক্ষের দলিলপত্র দেখার পর এসি ল্যান্ড তহসিলদার/ সার্ভেয়ারকে বিবাদমান জমিতে সশরীরে জরিপ করার জন্য নির্দেশ দিবেন।
এসি ল্যান্ডের আদেশের প্রেক্ষিতে তহসিলদার/ সার্ভেয়ারকে বিবাদমান জমিতে সশরীরে জরিপ করবেন এবং লিখিত রিপোর্ট প্রদান করবেন।
রিপোর্ট পাওয়া পর এসি ল্যান্ড প্রয়োজন মনে করলে উভয়পক্ষ কে নিয়ে পুনরায় আরেকটি শুনানি করতে পারেন।
ধাপ ৬ঃ চূড়ান্ত শুনানি শেষে এসি ল্যান্ড উভয় পক্ষের দলিল এবং সার্ভেয়ারের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে রায় প্রদান করবেন।
উক্ত রায় জনাব মকবুলের পক্ষে আসলে লোকমানের নাম কেটে দিয়ে জনাব মকবুলের নাম প্রতিস্থাপন করে দিবেন।
খারিজ বা নামজারী (Mutation) কি? কেন নামজারী করবো।
ভালো আর্টিকেল ছিল।