বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আপনার আয় যদি করযোগ্য খাতসমূহ থেকে হয় একই সাথে তা করমুক্ত আয়সীমা অতিক্রম করে তবে আপনাকে আয়কর দিতে হবে।
অন্যদিকে, যাদের টিআইএন (TIN) বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর রয়েছে তাদের জন্য প্রতি আয়কর বর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। আর তা না করলে জরিমানার বিধান রয়েছে। যদিও রিটার্ন দাখিল করলেই যে আয়কর দিতে হবে ঠিক তা কিন্তু নয়।
আয়কর রিটার্ন দাখিল করা জটিল কোন বিষয় না হলেও কিছু বিষয়ে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারন তা না হলে আইনগত ঝামেলায় পড়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
আসুন আজ জানি, আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবেঃ
১। গতবছরের রিটার্নের কপি সাথে রাখাঃ
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় আগের বছরের রিটার্নের কপি সাথে রাখা খুব উত্তম এবং জরুরি। আগের বছরের কপি সাথে রাখলে, উক্ত বছর কোন কোন খাত থেকে কত আয় দেখিয়েছেন, কোন খাতে কত ব্যয় দেখিয়েছেন, কি পরিমাণ সম্পদ এবং দায় দেখিয়েছেন তা আপনি সহজেই মনে করতে পারবেন। ফলে তা যখন আপনার সামনে থাকবে তখন সহজেই চলতি বছরের রিটার্ন আপনি পূরণ করতে পারবেন।
২। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা তৈরি করুন ও প্রস্তুত রাখুনঃ
রিটার্ন দাখিল করার সময় আয় বা সম্পদের প্রমাণস্বরূপ কিছু কিছু কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হয়। আপনার কি কি কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে তার একটি তালিক তৈরি করুন। রিটার্নের সাথে সাধারণত NID, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, কোন সম্পত্তি ক্রয় করে থাকলে তার কাগজ, জমি ক্রয় করলে দলিলপত্র, বেতনভুক্ত চাকুরিজীবী হয়ে থাকলে স্যালারি সার্টিফিকেট ইত্যাদি জমা দিতে হয়। সুতরাং এই সকল কাগজপত্র প্রস্তুত রাখুন।
৩। আয়-ব্যয়ের সংগতিপূর্ণ রিটার্ন তৈরি করুন এবং কৃষি খাতের আয় এড়িয়ে যাবেন না।
৪। চূড়ান্ত কৃত রিটার্নের কপির ফটোকপি সংরক্ষণ করুনঃ
আপনার চূড়ান্তকৃত রিটার্নের একসেট ফটোকপি সংরক্ষণ করুন। এই ভুল ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ করে থাকে। মনে রাখুন, পরবর্তীতে আপনি আয়কর কর্তৃপক্ষের কোন প্রশ্নের মুখোমুখি হলে বা তলব করলে তার জবাব প্রদান করতে অথবা পরবর্তী বছরের রিটার্ন পূরণ করতে আপনার এই কপি প্রয়োজন হবে। সুতরাং, কমপক্ষে ১ সেট ফটোকপি সংরক্ষণ করুন।
৫। আয়কর আইনজীবী কর্তৃক আয়কর রিটার্ন পূরণ করে থাকলে, জমাদানের পূর্বে নিজে একবার যাচাই করুনঃ
ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর রিটার্ন নিজেই দাখিল করা ভাল তবে কারো ক্ষেত্রে অধিক সম্পদ হলে ভালো আয়কর আইনজীবীর সহায়তা নিতে পারেন। কিন্ত কখনো আবার আইনজীবীদের ভুলের কারণে করদাতা ঝামেলায় পড়েন। যেহেতু, আয়কর আইনজীবীগন প্রচন্ডরকম ব্যস্ত থাকেন, তাই তাদের কর্তৃক রিটার্ন পূরণের সময় মারাত্মক ভুল হতে পারে। একজন গ্রাহকের আয় বা সম্পদের জায়গায় আরেকজনের আয় বা সম্পদ বসিয়ে দিতে পারে। তাই, আয়কর আইনজীবী কর্তৃক রিটার্ন পূরণ করে থাকলে, চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষর করার পূর্বে আপনি পুনরায় সব কিছু একবার করে যাচাই করুন বা মিলিয়ে নিন।
৬। নতুন বছরে ক্রয়কৃত সম্পদ যুক্ত হয়েছে কিনা যাচাই করুনঃ
এই কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি হয়তো আয় এবং আয়করের হিসাব ঠিকঠাক ভাবে করেছেন কিন্তু নতুনভাবে যুক্তকৃত সম্পদ চলতি বছরে দেখিয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হন। আবার অনেক সময় আয়কর আইনজীবী ভুলক্রমে বা ব্যস্ততার কারনে আগের বছরের সম্পদ বসিয়ে দেন। যদি ভুলক্রমে যুক্ত না হয় তবে মনে রাখুন, উক্ত সম্পদ অপ্রদর্শিত সম্পদ বা কালো টাকা বলে গন্য হবে।
৭। আলাদা ফাইল রাখুনঃ
বিগত সকল বছরের রিটার্ন সংরক্ষণের জন্য একটি “আয়কর ফাইল” রাখুন। মনে রাখুন, আয়কর খুব স্পর্শকাতর একটি বিষয়, সুতরাং তার জন্য আলাদা ফাইল নিরাপদে সংরক্ষণ করা জরুরি।
৮। রিটার্নের প্রাপ্তিস্বীকার বুঝে নিন
অনেকে অজ্ঞতা বশতঃ এটি সংগ্রহ করেন না, কখনো এটি আয়কর আইনজীবীর কাছে রেখে দেন। মনে রাখবেন, এটি অবশ্যই আপনার নিকট সংরক্ষণ করুন।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় উপরোক্ত বিষয় গুলো খেয়াল রাখুন তাহলে আয়কর সম্পর্কৃত ভবিষ্যৎ বিপদ থেকে অনেকটা নিরাপদ থাকতে পারবেন।