সূচীপত্র
কেস স্টাডি ১ মতি মিয়া একজন দরিদ্র কৃষক। স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁর ছোট্ট অভাবী সংসার, কোন ভাবে তার দিনকাল কেটে যাচ্ছে। মতি মিয়া তার বাবার নিকট থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে দুই বিঘা জমি পেয়েছেন যাতে তিনি চাষাবাদ করেন। তার বড় মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচের জন্য তিনি তার জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন।
জমির কাগজপত্র দেখে জমির ক্রেতা জানালেন, উত্তরাধিকারসূত্রে মতি মিয়া জমির মালিক হলেও খতিয়ানে মতি মিয়ার নাম নেই আছে তার মৃত বাবার নাম। সুতরাং নামজারির মাধ্যমে মতি মিয়ার নাম খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত না করলে উক্ত জমি বিক্রয় পরবর্তী রেজিস্ট্রি করা যাবে না। এমতাবস্থায়, মতি মিয়া বুঝতে পারছিলেন না এখন তার কী করতে হবে?
কেস স্টাডি ২ঃ জনাব মজিদ একজন কাপড় ব্যবসায়ী। তিনি ২ বছর হলো জনাব ডিপজলের নিকট হতে এক খন্ড জমি ক্রয় করেছেন কিন্তু ব্যবসায়ীক ব্যস্ততায় নামজারি করেন নি। এই সুযোগে পূর্বের মালিক জনাব ডিপজল প্রতরণামূলক ভাবে জমিটি পুনরায় আরেকজনের কাছে বিক্রির চেষ্টা করছেন (যেহেতু সরকারি রেকর্ড এখনো পূর্বের মালিক অর্থাৎ ডিপজলের নামেই রয়ে গেছে) ৷ এমন অবস্থায় জনাব মজিদ এখন সরকারি রেকর্ডে জমিটি নিজের নামে নিতে চাচ্ছেন কিন্তু তিনি জানেন না তা কিভাবে করবেন। নামজারি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ৪৩ টি জিজ্ঞাসা ও উত্তর
এবার আসুন জানি নামজারি কী এবং কখন করতে হয়?
কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বৈধ পন্থায় জমি বা ভূমির মালিকানা অর্জন করলে সরকারি রেকর্ড সংশোধন করে তার নিজের নামে রেকর্ড Up to Date বা হালনাগাদ করাকেই নামজারি বলে।
কোন নামজারি সম্পন্ন হলে জমির মালিক কে একটি খতিয়ান দেয়া হয় যেখানে তার অর্জিত জমির একখানি সংক্ষিপ্ত হিসাব বিবরণী যেখানে খতিয়ানে মালিকের নাম, মৌজা, মৌজার নম্বর (জে এল নম্বর), জরিপের দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমান, জমির শ্রেণি, একাধিক মালিক হলে তাদের নির্ধারিত অংশ ও প্রতি বছরের ধার্যকৃত খাজনা (ভূমি উন্নয়ন কর) ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। E Mutation । ই মিউটেশন আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা দেখুন
নামজারি যেসকল কারনে করার প্রয়োজন হয় তা হলোঃ
০১) ভূমি বা জমির বর্তমান মালিকের মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকারদের নামে সরকারি রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে হলে নামজারি করতে হয়।
০২) জমি বিক্রি, দান, ওয়াকফ, হেবা, অধিগ্রহণ, নিলাম ক্রম, বন্দোবস্ত ইত্যাদি সূত্রে হস্তান্তর হলে নতুন ভূমি বা জমি মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হলে নামজারি করতে হয়;
০৩) কোর্টের রায়ে জমির মালিকানা লাভ করলে সে রায় মোতাবেক নামজারি করতে হয়।
নামজারির প্রয়োজনীয়তা আছে কি? নামজারি না করলে কি সমস্যা হতে পারে?
অনেকে মনে করেন জমির দলিল সম্পাদন করলেই কাজ শেষ, নামজারির কোন প্রয়োজন নেই। মনে রাখবেন, দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে মালিকানা হস্তান্তর হলেও মালিক হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া যায় না।
আর তাই কোন ব্যক্তি ক্রয়সূত্রে বা ওয়ারিশান হিসেবে জমির মালিক হলেও যদি নামজারি না করেন তবে তার অজান্তে কেউ এক বা একাধিক জনের কাছে উক্ত জমি বিক্রি করতে পারেন, দলিল সম্পাদক করতে পারেন এমনকি নামজারিও করে ফেলতে পারেন।
নামজারীর আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
১। ২০ (বিশ) টাকার Court Fee সহ মূল আবেদন ফর্ম।
২। আবেদনকারীর ১ (এক) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। আবেদনকারী একাধিক হলে প্রত্যেকের জন্য ছবি লাগবে।
৩। খতিয়ানের ফটোকপি বা সার্টিফাইড কপি।
৪। ধার্যকৃত বকেয়া ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের পর উক্ত পরিশোধের রশিদ বা দাখিলা৷
৫। সর্বশেষ জরিপের পর থেকে বায়া দলিলের সার্টিফাইড কপি অথবা ফটোকপি।
৬। উত্তরাধিকারসূত্রে জমির মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত মূল উত্তরাধিকার সনদ।
৭। আদালতের রায়ের মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফাইড কপি বা ফটোকপি। আপীল হয়ে থাকলে তার তথ্য বা ডিক্রির সার্টিফাইড কপি বা ফটোকপি।
৮। আবেদনকারীর পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (জাতীয় পরিচয়পত্র/ ভোটার আইডি/ জন্ম নিবন্ধন সনদ/ পাসপোর্ট/ ড্রাইভিং লাইসেন্স/ অন্যান্য)।
নামজারীর প্রয়োজনীয় ফি কত টাকা?
-কোর্ট ফি-২০(বিশ) টাকা
-নোটিশ জারী ফি- ৫০(পঞ্চাশ) টাকা
-রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি- ১০০০(এক হাজার) টাকা
-প্রতি কপি নামজারি খতিয়ান সরবরাহ বাবদ- ১০০(একশত) টাকা
নামজারি কোথায় করা হয়?
– উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারির জন্য আবেদন করতে হয়। সেখানে নামজারি সহকারী পদের একজন দায়িত্বে থাকেন।
-নাজির পদের একজন নামজারির জন্য ফি জমা নেন।
-ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাগণ নামজারির তদন্তের দায়িত্বে থাকেন যাদেরকে তহশিলদার বলা হয়।
নামজারি করতে কত দিন সময় লাগে?
সরকারি নিয়ম অনুসারে মহানগরে ৬০ কর্মদিবসে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে মহানগরের ক্ষেত্রে ১২ কর্মদিবস এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ৯ কর্মদিবসে নামজারি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
অনলাইন পর্চা সংগ্রহে নতুন রেট ২০২৩ । খতিয়ান ও ম্যাপ সেবাসমূহের ফি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে
ভালো হইছে