খতিয়ান ও অনলাইন ই পর্চা

অনলাইন খতিয়ানে ভুল? এখন ঘরে বসেই করা যাবে রেকর্ড সংশোধনের আবেদন

ভূমি সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ডিজিটাল রেকর্ড রুম বা ডিএলআরএমএস (DLRMS) পোর্টালে যুক্ত হয়েছে নতুন সুবিধা। এখন থেকে নামজারি করার পর খতিয়ানে ভুল তথ্য থাকলে কিংবা আরএস, এসএ বা বিএস খতিয়ানে এন্ট্রিজনিত কোনো ত্রুটি থাকলে অনলাইনেই তা সংশোধনের আবেদন করা যাবে।

কেন আবেদন করবেন?

অনেক সময় নামজারি (Mutation) সম্পন্ন হওয়ার পরেও অনলাইন খতিয়ানে দেখা যায় পূর্বের মালিকের নাম রয়ে গেছে। এছাড়া জমি রেকর্ড বা জরিপের সময় তথ্যের অসতর্কতার কারণে মালিকের নাম, জমির পরিমাণ বা দাগ নম্বরে ভুল হতে পারে। আগে এই ভুল সংশোধনের জন্য ভূমি অফিসে বারবার দৌড়াতে হতো, যা এখন অনলাইনেই সম্ভব।

আবেদন করার প্রক্রিয়া

ব্যবহারকারীরা ডিএলআরএমএস ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট ভূমি সেবা পোর্টালে গিয়ে নির্দিষ্ট খতিয়ানটি অনুসন্ধান করে ‘সংশোধন প্রয়োজন’ বাটনে ক্লিক করে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের মূল ধাপসমূহ:

  • তথ্য যাচাই: প্রথমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা এবং মৌজা নির্বাচন করে কাঙ্ক্ষিত খতিয়ানটি খুঁজে বের করতে হবে।

  • সংশোধন বাটন: খতিয়ানের বিস্তারিত তথ্যের নিচে থাকা ‘সংশোধন প্রয়োজন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।

  • প্রমাণক আপলোড: আবেদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক তথ্যের স্বপক্ষে দালিলিক প্রমাণ। আপনার দাবি সঠিক প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মূল কাগজ বা পূর্ববর্তী সঠিক খতিয়ানের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে।

  • বিশ্লেষণ ও নিষ্পত্তি: আবেদন জমা হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা আপলোডকৃত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করবেন এবং সঠিকতা যাচাই সাপেক্ষে রেকর্ড সংশোধন করবেন।

ডিজিটাল ভূমি সেবায় নতুন মাত্রা

সরকারের এই উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষ দালালের খপ্পর থেকে মুক্তি পাবে এবং সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, খতিয়ানে এন্ট্রিজনিত ভুল দ্রুততম সময়ে নিরসন করতেই এই অনলাইন ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

তথ্য ভুলে প্রমানক দেখাতে হবে?

জি, অবশ্যই। অনলাইন খতিয়ানে কোনো তথ্য সংশোধন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই সঠিক তথ্যের স্বপক্ষে দালিলিক প্রমাণ (Documents) দেখাতে হবে।

সহজ কথায়, আপনি যে দাবি করছেন যে খতিয়ানের তথ্যটি ভুল, সেটি যে ভুল এবং সঠিক তথ্যটি আসলে কী হবে—তা প্রমাণের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে।

কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের প্রমাণক লাগতে পারে, তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো:

১. নামজারি হওয়ার পর আগের মালিকের নাম থাকলে:

যদি আপনার নামে নামজারি (Mutation) হয়ে যাওয়ার পরেও অনলাইন খতিয়ানে আগের মালিকের নাম দেখায়, তবে প্রমাণক হিসেবে লাগবে:

  • আপনার নামে মঞ্জুর হওয়া নামজারি খতিয়ান (DCR সহ)

  • নামজারি মঞ্জুরির আদেশের কপি।

২. নামের বানানে বা টাইপিংয়ে ভুল থাকলে:

মালিকের নাম বা পিতার নামে ভুল থাকলে:

  • মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)

  • যদি বায়া দলিলের বানানে সঠিক থাকে, তবে সেই মূল দলিলের কপি

৩. জমির পরিমাণ বা দাগ নম্বরে ভুল থাকলে:

যদি অনলাইন এন্ট্রিতে জমির পরিমাণ কম-বেশি হয় বা দাগ নম্বর ভুল আসে:

  • পূর্ববর্তী সিএস (CS), এসএ (SA) বা আরএস (RS) খতিয়ানের কপি।

  • জমির মূল দলিল।

  • প্রয়োজনে মাঠ পর্চা বা ডিপি খতিয়ানের কপি।

৪. ওয়ারিশী জমির ক্ষেত্রে:

মৃত ব্যক্তির স্থলে ওয়ারিশদের নাম অন্তর্ভুক্ত না হলে:

  • স্থানীয় চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত ওয়ারিশন সনদ (Succession Certificate)


গুরুত্বপূর্ণ নোট: আপনি যখন অনলাইনে ‘সংশোধন প্রয়োজন’ বাটনে ক্লিক করবেন, তখন সেখানে ফাইল আপলোড করার একটি অপশন পাবেন। আপনার প্রমাণকগুলো অবশ্যই স্পষ্ট করে স্ক্যান করে (সাধারণত PDF বা JPG ফরম্যাটে) সেখানে যুক্ত করতে হবে। অস্পষ্ট বা ভুল প্রমাণক দিলে আবেদনটি বাতিল হয়ে যেতে পারে।

খতিয়ান সংশোধন করতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *