সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর ২০২৫) মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ নীতিমালা জারি করে, যাতে স্বাক্ষর করেন বিভাগের সচিব রেহেনা পারভীন। নতুন নীতিমালায় কোটা বণ্টন ও বয়সের শর্তসহ ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ভর্তির শ্রেণি ও বয়সসীমা (২০২৬ শিক্ষাবর্ষ)
নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এন্ট্রি শ্রেণিতে এবং আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে।
প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি: ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ অনুসরণ করে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ১ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে সর্বনিম্ন ৫ বছর (জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ২০২১ বা তার আগে) এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ তারিখে সর্বোচ্চ ৭ বছর (জন্মতারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ বা তার পর) পর্যন্ত হতে পারবে। পরবর্তী শ্রেণিসমূহে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি ধারাবাহিকভাবে প্রযোজ্য হবে।
বিশেষ সুবিধা: বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিক্ষার্থীদের বয়স নির্ধারণে সর্বোচ্চ ৫ বছরের অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া যাবে।
শাখা প্রতি শিক্ষার্থী সংখ্যা: প্রতি শ্রেণি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫৫ জন নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভর্তি প্রক্রিয়া ও পছন্দক্রম
ভর্তি কার্যক্রম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
বিদ্যালয় পছন্দ: একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পছন্দক্রম দিতে পারবে। ডাবল শিফটের স্কুলে উভয় শিফট পছন্দ করলে তা দুটি পছন্দক্রম হিসেবে গণ্য হবে।
ক্যাচমেন্ট এরিয়া ও কোটায় পরিবর্তন
এবারের নীতিমালায় কোটার ক্ষেত্রে কিছু রদবদল আনা হয়েছে:
সহোদর কোটা বৃদ্ধি: সহোদর কোটা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এই কোটা এক দম্পতির সর্বোচ্চ তিন সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
যমজ কোটা হ্রাস: যমজ (Twin) কোটা ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে।
ক্যাচমেন্ট কোটা বহাল: ঢাকা মহানগরের ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানরা সংলগ্ন সর্বোচ্চ তিনটি থানাকে ‘ক্যাচমেন্ট এরিয়া’ হিসেবে নির্ধারণ করতে পারবেন।
অন্যান্য কোটা: মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ২ শতাংশ কোটা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে।
বিশেষ ভর্তির সুযোগ
নীতিমালায় কিছু বিশেষ ভর্তির বিধান রাখা হয়েছে:
কর্মরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে, তাঁর সন্তান যে এলাকায় স্থায়ী হবে সে এলাকার সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে।
পিতা-মাতাহীন কোনো শিক্ষার্থী বাসস্থান পরিবর্তন করলে পরিবর্তিত এলাকার সরকারি স্কুলে সমশ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে।
সম্ভাব্য সময়সূচি
মাউশির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তির সম্ভাব্য সময়সূচিও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে:
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ: ১৯ নভেম্বরের মধ্যে
আবেদন শুরু: ২১ নভেম্বর
আবেদন শেষ: ৭ ডিসেম্বর
ডিজিটাল লটারি: ১৪ ডিসেম্বর
ভর্তি সম্পন্ন: ১৭ থেকে ২১ ডিসেম্বর

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা ২০২৫
এবারও কি লটারির মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম চলবে?
হ্যাঁ, এবারও ডিজিটাল লটারির মাধ্যমেই সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) কেন্দ্রীয়ভাবে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে ভর্তির যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। সম্ভাব্য লটারির তারিখ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫।
