সূচীপত্র
দৈনন্দিন জীবনে টাকার ব্যবহার অনেক বেশি। প্রতি মুহূর্তে প্রতিটি লেনদেনে আমরা মুদ্রা হিসেবে টাকা ব্যবহার করছি। ডিজিটাল লেনদেন কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও তা এখনো কাগুজে নোটের বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে পারেনি।
খুব শীঘ্রই তা পারবেও না। সুতরাং আমাদেরকে নগদ টাকা বা কাগুজে মুদ্রার উপর নির্ভর করতেই হবে। আর এখানেই যত ভয়! আপনার হাতে ৫০০ টাকার নোট বা মানিব্যাগে রাখা ১০০০ টাকার নোট টি আসল তো? নাকি নকল! আবার উৎসব পার্বণ বিশেষ করে ঈদের সময় জাল টাকার প্রচলন আরো বেড়ে যায়।
আজ আলোচনা করবো কিভাবে আমরা জাল নোট চিনবো।
প্রথমেই জানি, আসল আর জাল নোটের মানে কি?
আসল নোটঃ আসল নোট হলো কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (আমাদের দেশে যা বাংলাদেশ ব্যাংক নামে পরিচিত) অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু কৃত কাগুজে নোট। এতে নির্ধারিত কিছু বৈশিষ্ট্য ও গুণের উপস্থিতি থাকে। মূল্যমান অনুযায়ী যা বিভিন্ন আকৃতির হয়। সম্ভাব্য সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য এই আসল কাগুজে নোটে থাকে।
নকল বা জাল নোটঃ দেশের প্রচলিত বৈধ নোট বা মুদ্রার (যেমনঃ টাকা, ডলার, পাউন্ড) আদলে অবিকল নোট বা মুদ্রা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা মনিটরিং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বাজারে ছেড়ে তা থেকে মূল্য লাভ করাই হলো নোট জালকরণ এবং ব্যবহৃত নোটই হলো নকল বা জাল নোট।
এবার আসুন কিভাবে জাল নোট চিনবেন?
মনে রাখবেন আসল নোট না চিনলে নকল নোট চেনা যায়। এর প্রকৃত একটি উদাহরণ দেয়া যাক। আপনাকে ১০০ ডলার বা ১০০ পাউন্ড হাতে দিলে আপনি তা আসল নাকি নকল তা বুঝতেই পারবেন না, কারন আপনি আসল ডলার বা পাউন্ড চিনেনই না। সুতরাং জাল নোট চেনার পূর্বে আসল নোট চেনা জরুরি।
আসল নোট চিনতে হলে, নোটের কিছু সাধারন বৈশিষ্ট্য জানতে হবে যেমন নোটের সাইজ, কাগজ কতটুকু পুরু বা ঘন, টাকায় মুদ্রিত সংখ্যার আকার , অক্ষরের আকার, টাকায় ব্যবহৃত বিশেষ ধরণের সুতার ঘনত্ব, ইত্যাদি ভালো করে জানতে হবে।
দেশে একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার নোট বেশি জাল হয়। তাই এই নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য আগে জানতে হবে। আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে https://www.bb.org.bd ভিজিট করতে পারেন। একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার নোট লেনদেনের সময় নোটের প্রধান চারটি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যেমন— রং পরিবর্তনশীল কালি, অসমতল ছাপা, নিরাপত্তা সুতা ও জলছাপ। সতর্কতার সঙ্গে এগুলো পরখ করলে সহজেই আসল নোট চেনা যাবে। আবার জাল নোট শনাক্তকারী যন্ত্রের সাহায্যেও নোট পরীক্ষা করা যায়।
রং পরিবর্তনশীল কালি : একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকা মূল্যমানের নোটের ওপরের ডানদিকে কোনায় ইংরেজিতে লেখা নোটের মূল্যমান রং পরিবর্তনশীল কালিতে মুদ্রিত আছে। একশ ও এক হাজার টাকা মূল্যমানের নোট আস্তে আস্তে নাড়াচাড়া করলে নোটের মূল্যমান লেখাটি সোনালি হতে ক্রমেই সবুজ রংয়ে পরিবর্তিত হয়। একইভাবে পাঁচশ টাকার নোটে ৫০০ মূল্যমান লেখাটি লালচে হতে পরিবর্তিত হয়ে সবুজ হয়। জাল নোটে ব্যবহৃত এ রং চকচক করলেও তা পরিবর্তিত হয় না।
অসমতল ছাপা : একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার নোটের সামনের ও পিছনের পিঠের ডিজাইন, মধ্যভাগের লেখা, নোটের মূল্যমান এবং সাতটি সমান্তরাল সরল রেখা আড়াআড়িভাবে মুদ্রিত আছে। হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘষলে এসব ডিজাইন, লেখা ও রেখা অমসৃণ অর্থাৎ খসখসে অনুভূত হয়।
তাছাড়া নোটের ডান দিকে একশ টাকার নোটে তিনটি, পাঁচশ টাকার নোটে চারটি এবং এক হাজার টাকার নোটে পাঁচটি ছোট বৃত্তাকার ছাপ আছে, যা হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে অসমতল অর্থাৎ উঁচু-নিচু বলে মনে হয়। এসব বৈশিষ্ট্য জাল নোটে সংযোজন করা সম্ভব নয়।
নিরাপত্তা সুতা : একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার নোটে মূল্যমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো সংবলিত নিরাপত্তা সুতা রয়েছে। নোটের মূল্যমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো নিরাপত্তা সুতার চারটি স্থানে মুদ্রিত আছে। এ নিরাপত্তা সুতা অনেক মজবুত যা নোটের কাগজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নখের আঁচড়ে বা দুমড়েমুচড়ে নিরাপত্তা সুতা কোনোক্রমেই উঠানো সম্ভব নয়। জাল নোটে নিরাপত্তা সুতা সহজেই নখের আঁচড়ে উঠে যায়।
জলছাপ : একশ টাকা, পাঁচশ টাকা ও এক হাজার টাকার প্রত্যেক প্রকার নোটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নোটের মূল্যমান জলছাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম এবং নোটের মূল্যমান বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির তুলনায় উজ্জ্বল দেখায়।
দেশে জাল নোট প্রচলিত । আপনি জাল নোট কিভাবে শনাক্ত করবেন
সর্বশেষ পরামর্শ হলো ছোটখাটো লেনদেনে হলে নিজে একটু দেখে নিলেই হয়। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে জাল নোট শনাক্তের ক্ষেত্রে মানি চেকার মেশিন বেশ সস্তা এবং সহজলভ্য। সুতরাং তা ব্যবহার করতে পারেন। বড় লেনদেনের ক্ষেত্রে সংশয় হলে সেটা কাছাকাছি কোন ব্যাংকে পরীক্ষাও করিয়ে নিতে পারেন।
১০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট আস্তে আস্তে নড়াচড়া করলে নোটের মূল্যমান লেখাটি সোনালী হতে ক্রমেই সবুজ রঙ এ পরিবর্তিত হয়। একইভাবে ৫০০ টাকা মূল্যমানের নোটে ৫০০ মূল্যমান লেখাটি লালচে হতে পরিবর্তিত হয়ে সবুজ হয়। জালনোটে ব্যবহৃত এ রঙ চকচক করলেও তা পরিবর্তিত হয়না।