সূচীপত্র
স্বামী বা স্ত্রী যেই তালাক দিক না কেন দেনমোহরের অর্থ স্বামীকে পরিশোধ করতে হবে-নিকাহনামা বা কাবিন নামায় উল্লেখিত অর্থ পরিশোধের ডকুমেন্ট থাকতে হবে – স্বামীকে ডিভোর্স দেওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশে ডিভোর্সের আইন কি? – বাংলাদেশে ডিভোর্স সম্পর্কিত আইন হলো “মুসলিম বিবাহ (নিষ্ক্রিয়তা ও প্রত্যাহার) আইন, ১৯০৯” এবং “মুসলিম (শারিয়াত) আইন, ২০১৩”। এই আইনগুলি মুসলিম ব্যক্তিদের বৈবাহিক বন্ধন বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিধিমালা সরবরাহ করে। মুসলিম বিবাহ (নিষ্ক্রিয়তা ও প্রত্যাহার) আইন, ১৯০৯ একটি পুরানো আইন, যা বাংলাদেশে বৈধ হওয়া মুসলিম বিবাহের নিষ্ক্রিয়তা ও প্রত্যাহার সম্পর্কিত বিধিমালা নিয়ন্ত্রিত করে। এই আইনের মধ্যে বিভিন্ন শর্ত এবং শর্তাবলী বর্ণিত আছে যা মুসলিম ব্যক্তিদের মধ্যে বৈবাহিক বন্ধন বিচ্ছিন্ন করার জন্য অনুমতি দেয়। মুসলিম বিবাহের নিষ্ক্রিয়তা ও প্রত্যাহার সম্পর্কিত প্রক্রিয়া, শর্ত এবং প্রক্রিয়া এই আইনে উল্লেখিত আছে।
ধর্ম পরিবর্তন করলে কি তালাক বা বিচ্ছেদ হয়ে যায়? ধর্মান্তরের ফলঃকোন বিবাহিতা মুসলমান মহিলা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করিলে অথবা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে দীক্ষা গ্রহন করিলে উহাতেই তাহা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিবে না। তবে, অবশ্য এই জাতীয় ধর্ম ত্যাগ বা অন্য ধর্ম গ্রহণের পর মহিলাটি ২ ধারায় বর্ণিত অন্য কোন হেতুবাদে তাহার বিবাহ বিচ্ছিদের জন্য ডিক্রি গ্রহণের অধিকারিণী হইবেনঃ আরও এই যে, অত্র ধারার ব্যবস্থাবলী ঐ মহিলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না, যে কোন ধর্ম হইতে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হইয়াছিল এবং বর্তমানে স্বীয় পুরাতন ধর্মে পুনরায় দীক্ষা গ্রহণ করিল।
কি কি উপায়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হতে পারে? (ক) স্বামীর পক্ষ থেকে তালাক; (খ) স্ত্রীর পক্ষ থেকে তালাক, যদি স্বামী স্ত্রীকে তালাক-ই-তৌফিজের ক্ষমতা দান করে থাকেন; (গ) খুলার মাধ্যমে; (ঘ) মুবারাতের মাধ্যমে; (ঙ) আদালতের মাধ্যমে; উক্ত ৫ প্রক্রিয়ায় তালাক সংগঠিত হতে পারে।
আইনি প্রক্রিয়ায় তালাকে প্রথম ধাপ কি? ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়ী যে ব্যক্তি তালাক দিবেন তিনি লিখিত ভাবে তালাকের নোটিশ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশন বরাবরে ও স্ত্রীর কাছে একটি নোটিশ পাঠাবেন। নোটিশ না পাঠালে ১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হবে। নোটিশ পাবার ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান/মেয়র শালিসী পরিষদ গঠন করবেন এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা আনার চেষ্টা করবেন। শালিসী পরিষদ উভয়কে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতি ৩০ দিনে ১টি নোটিশ করে মোট ৩টি নোটিশ প্রদান করবেন। এর মধ্যে স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হবে। স্বামীকতৃর্ক নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।
স্ত্রী কি তালাকের কারণ জানতে চাইতে পারে? তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে তালাক কার্যকর হবে না। তবে সন্তান প্রসব হওয়ার পর পর্যন্ত নোটিশ বহাল রাখলে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে। কিন্তু এর মধ্যে স্বামী নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে অধ্যাদেশের কোথাও নোটিশ প্রদান না করলে তালাক হবে না একথা উল্লেখ নাই। তবে স্বামী শাস্তি পাবেন। তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী যখন ইচ্ছা তখন একতরফাভাবে তালাক দিতে পারেন। তাকে তালাকের কারণ দেখাতে হয়না। কোন স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলেন তা স্ত্রী জানতে চাইতে পারেন না। এটি স্বামীর একতরফা ক্ষমতা।
তালাক বা ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বামীর একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকলে স্ত্রীকেও সুযোগ প্রদান করা হয়েছে / স্ত্রী বা স্বামীকে তালাক বা ডিভোর্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কাবিন নামার রেফারেন্স উল্লেখ করে নোটিশ দেয়া যেতে পারে
ডিভোর্স দেওয়ার আগে শত বার চিন্তা করুন, ডিভোর্স কোন সমাধান নয়, আমি হাত জোড় করে বলবো ডিভোর্স চাইতে খারাপ আর কিছু নেই, আমি আপনাদের কেউ না কিন্তু আমি প্রতিদিন এমন কিছু ডিভোর্স দেখি আমার নিজের ও চোখে জল আসে সত্যি বলছি ভাই এবং বোন একে অপর কে বুজতে চেস্টা করুন বাচ্চার দিকে তাকিয়ে হলেও খারাপ পথ থেকে ফিরে আসুন কতকাল বা বাঁচবো আমরা বলেন জীবন একটাই তাই ডিভোর্স কে না বুলুন পরকীয়া কে না বলুন।
Caption: Source of information
মুসলমান বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ । যে কোন এক বা একাধিক হেতুবাদে মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহিতা কোন মহিলা তাহার বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ডিক্রি লাভের অধিকারিণী হইবেন
- চার বছর যাবত্ স্বামী নিরুদ্দেশ হইলে;
- স্বামী দুই বত্সছর যাবত্ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দানে অবহেলা প্রদর্শন করিলে অথবা ব্যর্থ হইলে;
- স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ব্যবস্থা লঙ্খন করিরা অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে;
- স্বামী সাত বৎসর বা তদুর্ধ্ব সময়ের জন্য কারাদন্ডে দন্ডিত হইলে;
- স্বামী কোন যুক্তসঙ্গত কারণ ব্যতীত তিন বছর যাবত্ তাহার দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইলে;
- বিবাহকালে স্বামীর পুরুষত্বহীনতা থাকিলে এবং উহা বর্তমানেও চলিতে থাকলে;
- দুই বছর যাবত্ স্বামী পাগল হইয়া থাকিলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে কিংবা ভয়ানক ধরণের উপদংশ রোগে ভুগিতে থাকলে;
- আঠার বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তাহাকে তাহার পিতা অথবা অন্য অভিভাবক বিবাহ করাইয়া থাকিলে এবং উণিশ বৎসর বয়স পূর্ণ হইবার পূর্বেই সে উক্ত বিবাহ অস্বীকার করিয়া থাকিলে; তবে, অবশ্য ঐ সময়ের মধ্যে যদি দাম্পত্য মিলন অনুষ্ঠিত না হইয়া থাকে;
- স্বামী তাহার (স্ত্রীর) সহিত নিষ্ঠুর আচরণ করিলে, অর্থাত্ক) অভ্যাসগতভাবে তাহাকে আঘাত করিলে বা নিষ্ঠুর আচরণ দ্বারা, উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়িলও, তাহার জীবন শোচনীয় করিয়া তুলিয়াছে এমন হইলে;.
- স্বামীর দূর্নাম রহিয়াছে বা কলঙ্কিত জীবন যাপন করে এমন স্ত্রীলোকদের সহিত মেলামেশা করিলে, অথবা
- তাহাকে দূর্ণীত জীবন যাপনে বাধ্য করিবার চেষ্টা করিলে, অথবা
- একাধিক স্ত্রী থাকিলে, সে কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী ন্যায়পরায়নতার সহিত তাহার সঙ্গে আচরণ না করিলে;
- স্বামীর ঠিকানা জানা না থাকিলে তাহার উত্তরাধিকারীগণের উপর নোটিশ জারী করিতে হইবে। যাহারা আর্জি পেশ করিবার সময় স্বামী মারা গেলে মুসলিম আইনে স্বামীর উত্তরাধিকারী হইতেন। তবে অবশ্য ম্বামীর চাচা ও ভাই থাকিলে উহারা উত্তরাধিকারী না হইলেও উহাদিগকে অবশ্যই পক্ষভূক্ত করিতে হইবে। সূত্র দেখুন
ডিভোর্স হতে কত দিন সময় লাগে??
বাংলাদেশ ডিভোর্স মুসলমানদের মুসলিম আইনে সংগঠিত হয়ে থাকে। ৯০ দিনের মধ্যে কোন সমঝোতা না হলে তালাক কার্যকর হয়। সব কটি দফায় প্রথম স্বামী বা স্ত্রী যাকে নোটিশ পাঠানো হবে, তার ঠিকানার সাথে স্বামী বা স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশন মেয়র বা কাউন্সিলরকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশের কপি পাঠাতে হয়।
তালাক-ই-তৌফিজ কি? কাবিন নামা’র ১৮ নং কলামে স্বামী কতৃর্ক স্ত্রীকে বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষমতা দেয়াকে ‘তালাক-ই-তৌফিজ’ বলে। এই ‘তালাক-ই-তৌফিজের’ ক্ষমতা দেয়া থাকলে স্ত্রী আদালতের আশ্রয় ছাড়াই স্বামীকে তালাক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে স্বামীর মতোই স্ত্রী তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন ও এক কপি স্বামীর কাছে পাঠাবেন। নোটিশ প্রাপ্তির ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হবে।
নিকাহ্নামার ১৮ নং ঘরে “স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা অর্পণ করছে কি না? করে থাকলে কী শর্তে?” এই প্রশ্নটি থাকে। স্বামীর একতরফা ক্ষমতার কারণে স্ত্রীকে বহু নির্যাতন সহ্য করেও স্বামীর সাথে থাকতে হয়। ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইনে বর্ণিত শর্তগুলো (যেমন, নির্যাতন, নিরুদ্দেশ) না থাকলে এবং হুলার মাধ্যমে স্বামীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ না পেলে একটি মেয়ের পক্ষে বিয়ে থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। সেক্ষেত্রে স্ত্রী অপেক্ষাকৃত কম জটিলতায় তালাক-ই-তৌফিজের মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারে। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। নিকাহ্নামার ১৮ নং ঘরটি এজন্য অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পূরণ করা উচিত। অনেক সময় কাজীরা এ প্রশ্ন করেন না এবং ঘরটি শূন্য থাকে। কাজীদের অবশ্যই দুপক্ষকে দিয়ে ঘরটি সম্পর্কে অবগত করানো উচিত।
খুলা তালাক কি? খুলা তালাক হলো স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীর দাম্পত্য অধিকার থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রস্তাব। এক্ষেত্রে স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে স্বামীকে বিচ্ছেদের বিষয়ে রাজী করানোর চেষ্টা করবেন। স্বামী রাজী থাকলে এভাবে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে। বিচ্ছেদের উদ্যোগ অবশ্যই স্ত্রীর কাছ থেকে হতে হবে।
মুবারত তালাক কি? স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে-বিচ্ছেদ সম্পন্ন হলে তাকে মুবারত বলে। যখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদের ইচ্ছাদি পারস্পারিক হয় তখন একপক্ষ প্রস্তাব করে এবং চুক্তির মাধ্যমে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। যিনি বিয়ে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দিবেন তিনিই নোটিশ পাঠাবেন।