সূচীপত্র
স্ত্রী বা স্বামী যে কাউকে তালাক নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিন অতিবাহিত হলেই তা কার্যকর হয়ে যাবে – তালাক বা ডিভোর্সের বিধি- বিধান
তালাক কার্যকর হতে কত দিন লাগে? বাংলাদেশে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী তালাক দিতে চাইলে একজন ব্যক্তিকে তিন দফায় আইনি পত্র বা ডিভোর্স লেটার পাঠাতে হয়। প্রতি ৩০ দিনের ব্যবধানে একেকটি চিঠি পাঠাতে হয়। ৯০ দিনের মধ্যে কোন সমঝোতা না হলে তালাক কার্যকর হয়। সব কটি দফায় প্রথম স্বামী বা স্ত্রী যাকে সেটি পাঠানো হবে, তার ঠিকানার সাথে স্বামী বা স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করেন সেখানকার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বা সিটি কর্পোরেশন মেয়র বা কাউন্সিলরকে লিখিতভাবে তালাকের নোটিশের কপি পাঠাতে হয়।
তালাক রেজিস্ট্রি করতে হয় কি? ১ঌ০৮ সনের রেজিষ্ট্রীকরণ আইনের (১৯০৮ সনের ১৬) অধীনে রেজিষ্ট্রীকৃত যে দলিলমুলে স্বামী স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করিয়াছিল উক্ত দলিল অথবা ঐরূপ অর্পন করা হইয়াছে বলিয়া বিবাহ রেজিষ্ট্রী খাতায় অন্তভুক্তির সত্যায়িত প্রতিলিপি দাখিলকরণের ভিত্তিতে ব্যতীত নিকাহ নিবন্ধক তালাক-ই-তৌফিজ হিসাবে পরিচিত ধরনের কোন তালাক রেজিষ্ট্রী করিবেন না। যেক্ষেত্রে নিকাহ নিবন্ধক কোন তালাক রেজিষ্ট্রী করিতে অস্বীকার করেন, সেক্ষেত্রে ঐরূপ রেজিষ্ট্রীকরণের জন্য আবেদন করিয়াছিল এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ উক্ত অস্বীকৃতির ত্রিশ দিনের মধ্যে নিবন্ধকের নিকট আপীল পেশ করিতে পারেন এবং উক্ত আপীলের উপর নিবন্ধক কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত (বলিয়া গণ্য) হইবে।
আদালতের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার নিয়ম কি? যে কোনো যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। তবে বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করতে হলে আইন অনুযায়ী কিছু পদ্ধতি মানতে হবে। বিশেষ করে তালাকের নোটিশ পাঠানোর বেলায় কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। স্বামী ও স্ত্রী সবার ক্ষেত্রেই তালাক প্রদানের নিয়ম প্রায় একই । তবে আদালতের মাধ্যমে তালাক দেওয়ার পদ্ধতি একটু ভিন্ন। বাংলাদেশে স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে আদালত থেকে তালাকের আবেদন করতে পারে কিন্তু স্বামীর জন্য এই উপায় একটু সীমিত।
স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে তালাক কার্যকর হয় কি? না । অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে সন্তান ভূমিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। এ ক্ষেত্রে ৯০ দিন এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার মধ্যে যেদিনটি পরে হবে সেদিন থেকে তালাক কার্যকর হবে৷ অর্থাৎ স্ত্রী গর্ভবতী হলে, সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তালাক কার্যকর হবে না। তবে মনে রাখতে হবে এই ৯০ দিন পর্যন্ত স্ত্রী পূর্ণ ভরণপোষণ পেতে আইনত হকদার।
স্বামীর সম্মতি ছাড়া বা স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াও তালাক কার্যকর হইবে / তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ন্যূনতম নিয়ম অনুসরণ করতে হবে
কয় ভাবে তালাক দেয়া যায়? খুলা – স্ত্রী তার স্বামীকে যেকোন কিছুর বিনিময়ে তালাক দেওয়ার জন্য রাজি করাবেন। মুবারত – স্বামী স্ত্রী উভয়ের পারস্পারিক সম্মতিতে তালাকের সিদ্ধান্ত নেওয়া। আদালত কর্তৃক বিচ্ছেদঃ আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করে ডিভোর্স নেওয়া।
মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রীকরণ) আইন, ১ঌ৭৪
১৯৩৯ মুসলিম আইনে তালাক ক্ষমতা । ঠিক কি কি কারণে স্ত্রী স্বামীকে ডিভোর্স বা তালাক দিতে পারে?
- স্বামী ০৪ (চার) বছর পর্যন্ত স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।
- দুই বছর স্বামী স্ত্রীর খোরপোষ দিতে ব্যর্থ হলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।
- স্বামীর সাত বছর কিংবা তার চেয়ে বেশী কারাদণ্ড হলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।
- স্বামী কোন যুক্তি সংগত কারণ ব্যতীত তিন বছর যাবৎ দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।
- বিয়ের সময় পুরষত্বহীন থাকলে এবং তা মামলা দায় করা পর্যন্ত বজায় থাকলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।
- স্বামী দুই বছর ধরে পাগল থাকলে অথবা কুষ্ঠ ব্যধিতে বা মারাত্মক যৌন ব্যধিতে আক্রান্ত থাকলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।
- বিবাহ অস্বীকার করলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।। কোন মেয়ের বাবা বা অভিবাবক যদি ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অস্বীকার করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে, তবে যদি মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক(সহবাস) স্থাপিত না হয়ে থাকে তখনি কোন বিয়ে অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।
- স্বামী ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান লংঘন করে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।
- স্বামী নিষ্ঠুর ব্যবহার করলে স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন।
তালাক কার্যকর হয় কখন?
স্ত্রীর ক্ষমতায় উল্লেখিত যেকোন এক বা একাধিক কারণে স্ত্রী আদালতে বিয়ে বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে। স্ত্রী আভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে আদালত বিয়ে বিচ্ছেদের ডিক্রি দিতে পারে। ডিক্রি প্রদানের সাত দিনের মধ্যে একটি সত্যায়িত কপি আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবে। চেয়ারম্যান নোটিশকে তালাক সংক্রান্ত নোটিশ হিসাবে গণ্য করে আইনানুযায়ী পদক্ষেপ নিবে এবং চেয়ারম্যান যেদিন নোটিশ পাবে সেদিন থেকে ঠিক নব্বই দিন পর তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হবে। দুপক্ষের সম্মতিতে চেয়ারম্যান কর্তৃক তালাকের নোটিশ প্রদানের মাধ্যমেও তালাক ৯০ দিনের মধ্যে কার্যকর করা যায়।
পুরুষ ইচ্ছে করলেই কি দ্বিতীয় বা বহুবিবাহ করতে পারবে? না। বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব অথবা দৈহিক দূর্বলতা অথবা দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য দৈহিক অনুপযুক্ততা অথবা দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য প্রদত্ত আদালতের কোন ডিক্রিকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়ানো অথবা বর্তমান স্ত্রীর মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি অথবা তবে এক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি থাকলে এবং একটি সালিশী পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয় চেয়ারম্যান যদি অনুমতি পত্র দেয় তাহলে দ্বিতীয় বিবাহ করতে আইনত কোন বাধা থাকে না। এককভাবে মৌখিক অনুমতি নিলেই হবে না এতে জটিলতা বাড়তে পারে, পরবর্তীতে স্ত্রী অনুমতি অস্বীকার করতে পারে।