ধরুন আপনি বাসা থেকে রিক্সায় করে অফিসে যাচ্ছেন, রিক্সা ভাড়া ৫০ টাকা। সব কিছু ঠিকঠাক তবে রিক্সা ভাড়া দিতে গিয়ে বাঁধলো যতো বিপত্তি! আপনার কাছে থাকা ৫০ টাকার নোট টি ছেঁড়া! এদিকে আপনার বা রিক্সা ওয়ালার কারো কাছে ভাংতি নেই, আশেপাশের দোকানদারগণ কেউ ভাংতি দিতে নারাজ।

এমন পরিস্থিতিতে হয়তো আপনাকে অনেক কষ্ট করে মানিব্যাগ হাতড়ে ৫০ টাকা ম্যানেজ করতে হয়, নতুবা দোকান থেকে কিছু কিনে টাকা ভাংতি করতে হয়। আবার কখনো রিক্সা চালক কে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করতে হয়।

দৈনন্দিন জীবনে এমন বাস্তবতার মুখোমুখি আমরা প্রত্যেকেই হচ্ছি। আবার ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট যদি ছেঁড়া হয় তবে তো আপনি আরো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি!

ছেঁড়া ফাটা নোট বিষয়ে আমাদের স্বচ্ছ ধারনা না থাকায় প্রায়ই আমরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি। কখনোবা ছেঁড়া নোট টি অচল টাকা হিসেবে পড়ে থাকছে ব্যাগের কোনে আর আমরা মানুষিক যন্ত্রনায় ভুগছি।

চলুন আজ জানবো ছেঁড়া নোট নিয়ে কি করবো আমরা

প্রথমেই জানি, ছেঁড়া ফাটা নোট বা লেনদেনে অসুবিধা হয় এমন নোট গুলো কত ধরনের হয়।

১. দুই খন্ডে খন্ডিত নোট
২. দুয়ের অধিক খন্ডে খন্ডিত নোট
৩. রং দেয়া নোট
৪. অত্যাধিক ময়লা নোট
৫. জং ধরা নোট
৬. আগুনে পোড়া নোট
৭. পোকামাকড়ে কাটা নোট
৮. সিরিয়াল বিহীন নোট
৯. ২/৩ টা নোটের খন্ডিত অংশ জোড়াতালি দেয়া নোট
১০. নিরাপত্তা সূতা বিহীন নোট
১১. ইচ্ছা কৃত ভাবে কাটা কোন নোট

ইচ্ছা কৃত ভাবে কাটা নোট এবং ২/৩ টা নোটের জোড়াতালির টাকা ব্যাংকে কখনোই পরিবর্তনের জন্য উপস্থাপন করবেন না, কারন তাতে আপনারই উল্টো বিপদ হতে পারে।

ছেঁড়া নোট বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ নির্দেশনা

১. প্রথমত আপনি বাংলাদেশ ব্যাংকের যেকোন শাখায় এসে ছেঁড়া ফাটা নোংরা বা অন্যান্য নোট বদল করে নিয়ে আসতে পারবেন। এবং পুরো টাকা ফেরত পাবেন।

২. দেশের যেকোন অঞ্চলে অবস্থিত তফসীলি ব্যাংক (সরকারি, বেসরকারি সকল প্রকার ব্যাংকে) এসে ছেঁড়া নোট বদল করতে পারবেন।

৩. কোন ব্যাংক বা তার শাখা ছেঁড়া নোট বদল না করে দিলে এবং প্রমাণসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দায়ের করলে, বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত ব্যাংকের বা তার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।

তবে বাস্তবতা হলো আমাদের ব্যাংক গুলো বা তাদের স্টাফদের এ ব্যাপারে রয়েছে ব্যাপক অনীহা। এর প্রধানত ২ টা কারণ রয়েছে। প্রথমত, এটি একটি অলাভজনক সেবা। অর্থাৎ গ্রাহক সেবা প্রদান করা ছাড়া এতে সরাসরি কোন লাভ নেই। দ্বিতীয়ত, এমন ছেঁড়া ফাটা নোট সংখ্যা ১০০ টি (এক বান্ডিল) না হওয়া পর্যন্ত তা বদলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো যায়না। ফলে এ টাকা ব্যাংকের ভল্টে অনেক দিন গচ্ছিত থাকে। আর এই সুযোগ নিয়ে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চক্র ব্যবসা করছে। ঢাকার গুলিস্তান বা আরো অনেক জায়গায় এ ধরনের দোকান আছে যারা বাট্টার মাধ্যমে ছেঁড়া নোট পরিবর্তন করে দেয়।

চলুন জানি ছেঁড়া ফাটা নোট কিভাবে বদল করবেন

১. নোট আপনার নিকটস্থ বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বানিজ্যিক ব্যাংকের যেকোন শাখায় উপস্থাপন করুন। তখন ব্যাংকের অফিসার মূলত কয়েকটি বিষয় পরীক্ষা নীরিক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে অল্প ছেঁড়া–ফাটা ও ময়লা নোটের বিপরীতে সম্পূর্ণ বিনিময়মূল্য (১০০ ভাগ) প্রদান করে করবেন।

মনে রাখবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক, তিন–চতুর্থাংশ ছেঁড়া ও ময়লা নোটের ক্ষেত্রে জমা মূল্য সঙ্গে সঙ্গেই প্রদান করা হবে।

২. অধিক ছেঁড়া, অত্যধিক জীর্ণ, আগুনে পোড়া/ ঝলসানো এবং তিন চতুর্থাংশের কম রয়েছে—এমন নোটের বিনিময়মূল্য ব্যাংক আপনাকে সরাসরি প্রদান করবে না বরং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রদান করা হবে। এই মূল্য সংগ্রহের জন্য এসব নোট উক্ত ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করবে এবং প্রেরণের ডাক বা কুরিয়ার মাশুল নোট জমাদানকারী থেকে আদায় করা হবে। এজন্য কয়েকদিন সময় লাগতে পারে, তবে মনে রাখবেন সময় লাগলেও আপনি টাকা পাবেন।

৩. মনে রাখবেন আপনার নোটটি বদল অযোগ্য হলে তার কোন বিনিময় মূল্য ফেরত পাবেন না। অন্যদিকে আপনার সরবরাহ কৃত/ উপস্থিতকৃত নোট টি আপনাকে আর ফেরত দেওয়া নাও হতে পারে।

সর্বশেষ একটি কথা। আসুন আমরা টাকার ব্যবহারে অত্যন্ত যত্নশীল হই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *