বাংলাদেশ সরকার জেলাভিত্তিক ভাবে সারাদেশে অকৃষি জমি লিজ প্রদান করে থাকে- দীর্ঘ মেয়াদী বন্দোরবস্ত প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অনুসরণ করে থাকে-খাসজমি দীর্ঘমেয়াদী লিজের সিদ্ধান্ত ২০২৪

কোন জেলায় লিজ দিয়েছে? সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলাধীন ভট্টগাড়াদহ মৌজার আরএস-১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ৬১৪ নম্বর দাগের ০.১৬ (শূন্য দশমিক এক ছয়) একর অকৃষি খাসজমির ধার্যকৃত ১৬,৮৯,৫৫২/- (ষোল লক্ষ ঊননব্বই হাজার পাঁচশত বায়ান্ন) টাকা সেলামি আদায়সাপেক্ষে “অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা-১৯৯৫ অনুযায়ী “জনাব মো: আক্কাস আলী, পিতা-মৃত ময়েন উদ্দিন, গ্রাম-গাড়াদহ, উপজেলা-শাহজাদপুর, জেলা-সিরাজগঞ্জ”-এর অনুকূলে সরকার কর্তৃক কিছু শর্তে উক্ত জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

লিজের জমি কি যে কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে? জমি যে উদ্দেশ্যে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে তা বন্দোবস্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না। অকৃষি খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত সংক্রান্তে সময়-সময় জারিকৃত সরকারি আইন/অধ্যাদেশ/আদেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমির সেলামিমূল্য পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় বন্দোবস্ত বাতিল বলে গণ্য হবে।

জেলা প্রশাসক ও ব্যক্তির মধ্যে চুক্তি হবে? হ্যাঁ। বন্দোবস্ত গ্রহণের পর কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন রাখা বা শর্ত ভঙ্গের ঘটনা প্রকাশ হলে বন্দোবস্ত অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ বন্দোবস্ত বাতিল ও প্রদত্ত মূল্য বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। লিজ দলিলের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বা অমান্য করলে এই বন্দোবস্ত বন্দোবস্ত-দাতা লিখিতভাবে একতরফা বাতিল করতে পারবে। দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তকৃত অকৃষি খাসজমির জন্য জেলা প্রশাসক আলাদা একটি খতিয়ান খুলবেন।

সে খতিয়ানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নাম এবং জেলা প্রশাসকের নামের নিচে বন্দোবস্ত প্রাপকের নাম লিপিবদ্ধ করতে হবে।

তাছাড়া, বন্দোবস্তের মেয়াদ আরম্ভ ও শেষ হওয়ার তারিখ লিপিবদ্ধ থাকবে। এই দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের ফলে বন্দোবস্ত গ্রহীতাকে সংশ্লিষ্ট জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হবে; বন্দোবস্তকৃত জমি সম্পর্কে উদ্ভূত যে কোনো বিতর্কিত বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে;

Govt. Land Lease

Caption: Ministry of land order

ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল, ১৯৯০ । ৯৯ বছর নাকি ৩০ বছরের জন্য খাসজমি লিজ দেয়া হয়?

  1. ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল,১৯৯০-এর ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে অকৃষি খাস জমির দীর্ঘমেয়াদি লিজচুক্তি বাংলাদেশ ফরম নম্বর ১০৮৮-গ অনুযায়ী সম্পাদন করতে হবে এবং ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই লিজ চুক্তি ৩০ বছরের জন্য সম্পাদিত হবে।
  2. যা ৯৯ বৎসর পর্যন্ত নবায়ন করার অধিকার থাকবে; এবং ১৪/০৯/২০০৫ তারিখের ভূ:ম:/শা-৮/খাজব/503/2005/775(৬৪) নম্বর স্মারক অনুয়ায়ী এ মঞ্জুরিপত্র জারির ৯০ (নব্বই) কর্মদিবসের মধ্যে বন্দোবস্তকৃত জমির সেলামির অর্থ আদায়, লিজ দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি এবং জমির দখল হস্তান্তর করতে হবে।
  3. দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত কেস নম্বর-১/২022-23 অজেপ্র(রা:) কেস নম্বর ৯০/XII / 2023-23-এর মূল নথি এইসঙ্গে প্রেরণ করা হয়।

বাংলাদেশে সরকারি জমি লিজ নেয়া বলতে সরকার বা সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন কোনো ভূমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য চুক্তির ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমতি দেয়াকে বোঝায়। জমি লিজ নেওয়ার জন্য অবশ্যই জমিটি খাস ও বিরোধমুক্ত হতে হবে। আরও পড়ুন- খাস জমি চেনার উপায়। বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের খাস জমি গুলোর তত্ত্বাবধায়ক। বিভিন্ন উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে বন্দোবস্তের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান জমি থেকে সরকারি জমি লিজ দেয়ার নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি জমি বা খাস জমি লিজ নেয়ার জন্য সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন আইন, প্রবিধান এবং পদ্ধতি প্রনয়ণ করা হয়েছে। সরকারি জমি লিজ নেওয়ার জন্য সকল ধরনের চুক্তি, স্বাক্ষর, মেয়াদ, ফি ইত্যাদি তথ্য সঠিক ভাবে জেনে এরপর আবেদন করার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু করা যেতে পারে। বাংলাদেশ সরকার কতৃক নিয়ন্ত্রিত ভূমি বা খাস জমি সাধারণ জনগণের ব্যবহার করার অনুমতি নেই। তবে কেউ যদি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সরকারি জমি লিজ বা বন্দোবস্ত পেতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে আবেদন করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে।

     
     
     

সরকারি জমি লিজ নেয়ার জন্য কি কি কাগজ লাগে? যেসকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে তা হলো আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, জমি লিজ নেয়ার আবেদন ফরম, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার বা চেয়ারম্যান কতৃক সত্যায়িত করা ২ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃক প্রদত্ত নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট, লিজ নিতে ইচ্ছুক জমির সকল ধরনের রেকর্ড বা বিবরণ।

সরকারি জমি লিজ নেয়ার নিয়ম কি? ধাপ ১: আবেদনের শর্ত পূরণ করুন- সরকারি জমি লিজ নেয়ার জন্য আগ্রহীকে বা আবেদনকারীকে অবশ্যই সরকার কতৃক নির্ধারিত শর্তগুলো পালনের প্রমান দিতে হবে। এক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ভূমি ব্যবহারের বিধিনিষেধ মেনে চলা ইত্যাদি যোগ্যতা পূরণ করতে পারার প্রমান দেয়া অত্যাবশ্যক। ধাপ ২: লিখিত আবেদন- সরকারি জমির সকল কিছু ভূমি মন্ত্রণালয়ের কতৃপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তাই সরকারি জমি লিজ নেয়ার জন্য ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট সরকারি কতৃপক্ষের কাছে আবেদন বা দরখাস্ত জমা দিতে হবে। আবেদন করার সময় প্রস্তাবিত জমির ব্যবহার, লিজের সময়কাল এবং এই বিষয় সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ধাপ ৩: লিজ নেয়ার ফরম পূরন- সরকারি জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য বা লিজ নেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই একটি আবেদন ফরম পূরন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি ভূমি অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করে বা অনলাইন থেকে খাস জমি লিজ নেওয়ার ফরম ডাউনলোড করে তা সঠিক তথ্য দ্বারা পূরণ করে তা জমা দিতে হবে। ধাপ ৪: আবেদন যাচাইকরণ- আপনার সরকারি জমি লিজ নেয়ার আবেদন করা হলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ তা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করবে। আপনার আবেদনটি বিভিন্ন পরিস্থিতি যেমন ভূমি ব্যবহার, পরিবেশগত প্রভাব, আবেদনকারীর আর্থিক সক্ষমতা, ভূমি ব্যবহারের সম্মতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে যাচাই বা মূল্যায়ন করা হবে। ধাপ ৫: জমি লিজের চুক্তিনামা সম্পাদন- জমি লিজ নেয়ার আবেদন অনুমোদিত হলে সরকার ও আবেদনকারীর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিনামায় লিজ নেয়ার শর্তাবলী, ভাড়া প্রদান, জমি ব্যবহারের বিধিনিষেধ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক শর্তাবলী উল্লেখ করা থাকে। আবেদনকারী চুক্তিনামায় উল্লেখিত সকল তথ্য জেনে এবং বুঝে তা মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে লিজ গ্রহণ করতে পারবে। ধাপ ৬: ভাড়া বা লিজ ফি প্রদান- যেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি জমি লিজ নিবে তাকে লিজ নেয়ার নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য সরকারকে ভাড়া বা লিজ ফি প্রদান করতে হবে। ভাড়ার পরিমান বা লিজ ফি জমির অবস্থান, আকার এবং ব্যবহারের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে নির্ধারন করা হয়ে থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *