ভূমি আইন ২০২৪

হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তি অধিকার ২০২৪ । বাংলাদেশে হিন্দু আইনে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার নেই?

মুসলিম আইনের মত হিন্দু সম্পত্তি বন্টন আইন রয়েছে-দুই ভিন্ন হলেও তা অনুসরণ করেই হিন্দুদের সম্পত্তি বন্টন হয়ে থাকে – হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তি অধিকার

স্ত্রী কি সম্পত্তির মালিক হয়? হ্যাঁ। ১৯৩৭ সালের (১৮নং আইন) সম্পত্তিতে হিন্দু মহিলার অধিকার আইন প্রবর্তিত হবার পর আইনের ৩ ধারা অনুসারে মৃতের মৃত্যুর পূর্বে মৃত পুত্রের বিধবা স্ত্রী [যিনি সম্পত্তি রেখে মারা গেছেন তার আগে মৃত তার পুত্রের বিধবা স্ত্রী] উত্তরাধিকারী হবে। যাহা সম্প্রতিও সিভিল রিভিশন নং-২৪৭৭/২০০৪ এর প্রেক্ষিতে স্বামীর সম্পত্তিতে হিন্দু বিধবার অংশ প্রাপ্তিতে উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট ডিভিশন)-এর রায় দ্বারা স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

হিন্দু আইনে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার কতটুকু? পিতা বা স্বামীর সম্পত্তিতে হিন্দু নারীদের একচ্ছত্র অধিকার নেই, জীবনস্বত্ব আছে। দায়ভাগ মতবাদ অনুসারে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তির সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার হন জীবিত পুত্র বা পুত্রেরা। পুত্রের উপস্থিতিতে কন্যা সম্পত্তি পান না। অর্থাৎ কন্যার অধিকার নির্ভর করবে পুত্র থাকা বা না থাকার ওপর।

মৃত হিন্দু ব্যক্তির সম্পত্তিতে প্রথমে কার অংশ? হিন্দুধর্মাবলম্বী কেউ মৃত্যুবরণ করলে নিয়ম অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে সবার আগে তাঁর পুত্র, পুত্রের অনুপস্থিতিতে পৌত্র (পুত্রের পুত্র) এবং পুত্র ও পৌত্রের অনুপস্থিতিতে প্রপ্রৌত্র (পুত্রের পুত্রের পুত্র) সম্পূর্ণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। কারণ, পুত্র তাঁর পিতার, পৌত্র তাঁর পিতার ও প্রপৌত্র তাঁর পিতা ও পিতামহের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরপর আসেন মৃত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী। সম্পত্তিতে হিন্দু মহিলার অধিকার আইন, ১৯৩৭ অনুসারে বিধবা স্ত্রী তাঁর জীবদ্দশায় মৃত স্বামীর সম্পত্তিতে পুত্রের সমান জীবনস্বত্ব পাবেন। হিন্দু আইনে নারীর সম্পত্তি অধিকার । কখন নারীকে সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করা হয়?

হিন্দু ব্যক্তি কন্যা কখন সম্পত্তি পান? মৃত ব্যক্তির পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র ও বিধবা স্ত্রী না থাকেন, তাহলে মৃত ব্যক্তির কন্যাদের মধ্যে অবিবাহিত কন্যা ও পরে পুত্রবতী কন্যা সম্পত্তি পাবেন। তবে কন্যারা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে জীবনস্বত্ব পান। যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, বিধবা স্ত্রী, কন্যা কেউ জীবিত না থাকেন, তাহলে কন্যার পুত্র বা দৌহিত্র সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন।

দায়ভাগ আইন কি? / হিন্দু আইনে ছেলে না থাকলে সম্পত্তি যেভাবে বন্টন হবে

উদাহরণ হিসেবে হিন্দু উত্তরাধিকার দায়ভাগ আইন অনুযায়ী পিতা মারা যাওয়ার পর তারই ০৪ (চার) ছেলের নামে (পিতার আগে তার ২য় ছেলে মৃত্যুবরণ করায় এবং তার কোন ছেলে না থাকায় হিন্দু উত্তরাধিকার দায়ভাগ আইন অনুযায়ী মৃত ছেলের বিধবা স্ত্রী’র নামেসহ) রেকর্ড হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু BS দিয়ারার খতিয়ানে প্রতারণামূলকভাবে প্রকৃত ওয়ারিশ (পূর্বে মৃত ছেলের বিধবা স্ত্রী)-কে বাদ দিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে ৩ (তিন) জন ওয়ারিশের নামে খতিয়ান খোলা হয়েছে। যাহা হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বিধি বহির্ভূত। এখানে মৃতের স্ত্রী সম্পত্তি ভোগী হিসেবে অধিকার দাখিল করতে পারবেন।

সম্পত্তিতে হিন্দু মহিলার অধিকার আইন, ১৯৩৭

সম্পত্তিতে হিন্দু মহিলার অধিকার আইন, ১৯৩৭ Full PDF Download

স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী, মা, বোন ও কন্যাণ সম্পত্তি অধিকার । কে মূলত কত অংশ পাবেন? । বোনেরা কখন কি কিছুই পায় না? 

  • কন্যার অংশ: মৃত ব্যক্তির পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র ও স্ত্রী থাকলে কন্যা তাঁর পিতার সম্পত্তি পান না। তাঁদের কেউ না থাকলে কন্যাদের মধ্যে অবিবাহিত কন্যার দাবি সবার আগে। তবে বিধবা কন্যা, বন্ধ্যা কন্যা ও যে কন্যার পুত্রসন্তান নেই, শুধু কন্যাসন্তান আছে, তিনি কিছু পাবেন না।
  • স্ত্রীর (বিধবা) অংশ: সম্পত্তিতে হিন্দু মহিলার অধিকার আইন, ১৯৩৭ পাস হওয়ার পর মৃত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী এক পুত্রের সমান অংশ জীবনস্বত্ব পান।
  • মায়ের অংশ: মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, দৌহিত্র ও পিতা জীবিত থাকলে মা কিছু পান না।
  • বোন অংশ: কোনো অবস্থাতেই বোন তাঁর ভাইয়ের সম্পত্তি পান না।

মৃত ব্যক্তির পিতার ভাই কখন সম্পত্তি পান?

মৃত ব্যক্তির পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, বিধবা স্ত্রী, কন্যা ও দৌহিত্র কেউই জীবিত না থাকেন, তাহলে মৃত ব্যক্তির পিতা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন। মৃত ব্যক্তির পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, বিধবা স্ত্রী, কন্যা, দৌহিত্র ও পিতা কেউ জীবিত না থাকেন, তাহলে মৃত ব্যক্তির মাতা জীবনস্বত্ব পাবেন। ওপরের কেউই যদি জীবিত না থাকেন, তাহলে ক্রমানুসারে সহোদর ভাই, বৈমাত্রেয় ভাই, ভাইয়ের পুত্র, ভাইয়ের পুত্রের পুত্র, বোনের পুত্র, পিতামহ, পিতামহী, পিতার ভাই মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবেন।

হিন্দু উত্তরাধিকার আইন ও সম্পত্তির অংশ ভাগাভাগির বিধি বিধান।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *