আজকের খবর ২০২৫

১ লাখ টাকায় যাকাত কত ২০২৫ । কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয়?

একজন মুসলমান হিসেবে আপনার সম্পদের যাকাত দিতে হবে-সম্পদ পরিশুদ্ধ করতে এবং দারিদ্রের বৈষম্য কমাতে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে–১ লাখ টাকায় যাকাত কত ২০২৫

১ লক্ষ টাকায় কত টাকা যাকাত দিতে হবে? ১ লক্ষ টাকায় ২,৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে। ইসলামের যাকাতের বিধান অনুযায়ী, মোট সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫০ শতাংশ) যাকাত দিতে হয়। হাতে ও ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ ছাড়াও সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি নগদ অর্থ বলে গণ্য হবে। সাড়ে সাত তোলা সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমতুল্য সম্পদ অথবা এর সমতুল্য টাকা হলো যাকাতের নিসাবের পরিমাণ।

ভাইবোন কে কি যাকাত দেওয়া যাবে? হ্যাঁ। সৌরবর্ষ হিসাবে জাকাত আদায় করতে চাইলে শতকরা ২.৫%-এর (আড়াই ভাগ) পরিবর্তে ২.৫৭৮% (বা ২.৫৮% প্রায়) দিতে হবে। যাকাত দেওয়া যাবে: ভাই, বোন, ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা এবং অন্যান্য আত্মীয়দেরকে। তাই যাকাত প্রতিটি মুসলমান আদায় করলে ধনী গরিব বৈষম্য কমবে।

যাকাত কখন দিতে হয়? যাকাত বছরের যে কোন সময় দেয়া যায়; এর জন্য ধরা-বাঁধা কোন সময়সীমা নেই । তবে, হিজরী সাল অনুযায়ী রমযান মাসে যাকাত নির্ধারণ ও পরিশোধ করা অধিক সওয়াবের কাজ। রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস। এ মাস আমাদের উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত স্বরূপ। এই মাসের নফল অন্য মাসের ফরযের সমান। রাসুলুল্লাহ (সা.) রমযান মাসে বেশী বেশী দান সাদাকা করতেন। রমযান মাসে যাকাতের হিসাব নির্ধারণ, যাকাত প্রদান করা উত্তম। কারণ এতে অন্য সময়ের তুলনায় সত্তরগুন বেশী সওয়াব পাওয়া যায়। এই হিসেবে আমাদের দেশে ও পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম দেশে রমযান মাসে যাকাত আদায় করা হয়। তবে, যে ব্যক্তির সাহেবে নিসাব হওয়ার মাস ও তারিখ জানা আছে তার জন্য রমযান মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত নয়। সরকার কর্তৃক হিজরী সালের রমযান মাস হতে পরবর্তী শাবান মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত যাকাত বৰ্ষ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়ার দিন থেকে এক বছর পূর্তির পর যাকাত ফরয হয়।

পবিত্র হাদীসের আলোকে যাকাত কিভাবে দিতে হবে? যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত দিল, সে যেন তার সকল পাপ মোচন করল (তাবারানী)। আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন সে যদি যাকাত আদায় না করে তাহলে কিয়ামতের দিন তার সম্পদ একটি বিষধর অজগরের রূপ ধারণ করবে, যার দু’চোখের উপর দু’টি কালো চিহ্ন থাকবে। এটি তার গলায় পরিয়ে দেয়া হবে অতঃপর তাকে দংশন করবে আর বলবে আমি তোমারই ধন-সম্পদ, আমি তোমারই গচ্ছিত ধন (বুখারী-১/১৮৮, হাদীস নং-১৪৩০)। যে সব লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করবে আল্লাহ তাদের কঠিন ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত করে দিবেন (বায়হাকী, হাদীস নং-১১৫৬)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) হতে একটি হাদীস শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জলে-স্থলে যেখানেই কোন ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়, তা কেবল যাকাত আদায় না করার কারণে (তাবারানী, ২/৫৮)। হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যাকাতের মাল যখন অন্য কোন মালের সাথে মিশে যায় তখন তা ঐ মালকে ধ্বংস করে দেয় (বায্যার, আত তারগীব, হাদীস নং-১১৫৪)। হযরত হাসান বসরী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যাকাত প্রদান করে তোমাদের ধন-সম্পদের হিফাযত কর, সাদাকা দ্বারা তোমাদের রুগীদের চিকিৎসা কর এবং দু’আ ও প্রার্থনা দ্বারা বালা মুসিবতের ঢেউকে প্রতিহত কর (তাবারানী)। যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না সে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে (আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১১৫৩)।

Gold (যেকোন আকৃতিতে মালিকানায় বিদ্যমান) ২০ দিনার তথা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ (৮৭.৪৮ গ্রাম) মালিক হলে তার উপর যাকাত ফরয। শতকরা ২.৫০% যাকাত প্রদান করা জরুরী।

পবিত্র কুরআনের আলোকে যাকাত কিভাবে? তাদের (বিত্তবানদের) ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্থ ও বঞ্চিতদের হক (আল- কুরআন, সূরা যারিয়াত, আয়াত-১৯)। বিপর্যস্ত, অসহায়, শারীরিক প্রতিবন্ধি, কর্মে অক্ষম সকলই-এর হকদার। হে নবী! তাদের (বিত্তবানদের) সম্পদ হতে ‘সাদাকা’ (যাকাত) গ্রহণ করুন ; এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন। আপনি তাদের জন্য রহমতের দুআ করুন, নিশ্চয়ই আপনার দুআ তাদের জন্য শান্তি স্বরূপ (আল-কুরআন, সূরা তাওবা, আয়াত-১০৩)। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাক তাই বৃদ্ধি পায়, তারাই সমৃদ্ধিশালী (আল-কুরআন, সূরা-রূম, আয়াত-৩৯)। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা (পুঞ্জিভূত সোনারূপা) উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশে ও পৃষ্ঠদেশে ছ্যাকা দেয়া হবে সেদিন বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জিভূত করতে সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জিভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর (আল-কুরআন, সূরা-তাওবা, আয়াত-৩৫)। যখন উহা ফলবান হয় তখন এর (উৎপাদিত ফসলের) ফল আহার কর। আর ফসল তোলার দিনে তার হক (উশর) আদায় কর। আর অপচয় করোনা। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না (আল-কুরআন, সূরা- আন’আম, আয়াত-১৪১)।

যাকাতের পরিমান ও হার নীতিমালা ২০২৫ pdf

যাকাতের ব্যবহার ২০২৫ । যে সম্পদের যাকাত প্রদান করতে হয় না

যাকাত আওতামুক্ত সম্পদ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘বাসস্থানের জন্য নির্মিত ঘরসমূহ, ঘরে ব্যবহার্য্য দ্রব্যাদি, আরোহনের জন্য পশু, চাষাবাদ ও অন্যান্য আবশ্যকীয় কার্য্যে ব্যবহৃত পশু ও দাস-দাসী, কাঁচা তরি-তরকারীসমূহ এবং মৌসুমী ফলসমূহ যা বেশী দিন সংরক্ষণ করা যায় না, অল্পদিনে বিনষ্ট হয়ে যায় ; যেমন-আলু, টমেটো, আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, শশা, তরমুজ, খরমুজ, বাঙ্গী ও লাউ ইত্যাদিতে যাকাত নেই। হানাফী মাযহাব মতে নিজে নিজে উৎপন্ন দ্রব্যাদি যথা-বৃক্ষ, ঘাস এবং বাঁশ ব্যতীত অন্য সমস্ত শস্যাদি, তরি-তরকারী ও ফল সমূহের যাকাত প্রদান করতে হবে। হাদীস শরীফের আলোকে যে সকল সম্পদকে যাকাত থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, সেগুলোর তালিকা নিম্নে দেয়া হলোঃ
  • ১. জমি, মিল.
  • ২. ফ্যাক্টরী, ওয়্যার হাউজ, গুদাম,
  • ৩. দোকান,
  • ৪. বাড়ী-ঘর, জায়গা-জমি,
  • ৫. এক বছরের কম বয়সের গবাদি পশু,
  • ৬. ব্যবহারের যাবতীয় পোশাক,
  • ৭. বই, খাতা, কাগজ ও মুদ্রিত সামগ্রী যা ব্যবসার জন্য নয়,
  • ৮. গৃহের যাবতীয় আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও সরঞ্জামাদি, তৈলচিত্র ও স্ট্যাম্প,
  • ৯. মালিকানাধীন অফিসের যাবতীয় আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, ক্যালকুলেটর, কম্পিউটার ইত্যাদি সরঞ্জাম,
  • ১০. গৃহ পালিত মুরগী ও পাখি,
  • ১১. কলকব্জা, যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার ইত্যাদি যাবতীয় মূলধন সামগ্ৰী,
  • ১২. চলাচলের যন্ত্র ও গাড়ী,
  • ১৩. যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম,
  • ১৪. ক্ষণস্থায়ী বা পচনশীল কৃষিপণ্য,
  • ১৫. বপন করার জন্য সংরক্ষিত বীজ,
  • ১৬. যাকাত বছরের মধ্যে অর্জিত সম্পদ যা সে বছরেই ব্যয় করা হয়েছে এমন সম্পদ,
  • ১৭. দাতব্য বা সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, যা জনগণের উপকার ও কল্যাণে নিয়োজিত
  • ১৮. সরকারি মালিকানাধীন নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য এবং অন্যান্য সম্পদ।
  • এছাড়াও মূল্যবান সুগন্ধি, মণিমুক্তা, লোহিতবর্ণ প্রস্তর, শ্বেতপাথর এবং সমুদ্র হতে আহরিত দ্রব্য সামগ্রীর উপর যাকাত নেই; তবে ব্যবসার জন্য হলে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে যাকাত দিতে হবে। যে সমস্ত পশু বহন ও বাহন ভাড়ায় খাটানো হয় তারও যাকাত দিতে হয় না ।

কোন কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না?

যার নিকট নিসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ বিদ্যমান আছে। যারা হাশেমী অর্থাৎ প্রিয়নবী সা. এর বংশধর (হাসানী, হুসাইনী, আলাবী, জা’ফরী) ইত্যাদি। যাকাত দাতার মা, বাবা, দাদা, দাদী, পরদাদা, পরদাদী, পরনানা, পরনানী ইত্যাদি । যাকাত দাতার ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি, পৌত্র, পৌত্রী ইত্যাদি। যাকাত দাতার স্বামী বা স্ত্রী। কাফির কিংবা অমুসলিমদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না (তবে অন্যান্য সাধারণ দান করা যায়)। যার উপর যাকাত ফরয হয়, এরূপ লোকের নাবালেগ সন্তান । মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মাণ কাজের জন্য। মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের জন্য বা মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের জন্য ইত্যাদি । রাস্তা-ঘাট, পুল, আশ্রয়কেন্দ্র, গোরস্থান, জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি নির্মাণ ও স্থাপন কার্যে যেখানে নির্দিষ্ট কাউকে মালিক বানানো হয়না । যাকাত দ্বারা মাদরাসা/মসজিদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীর (গরীব হলেও) বেতন দেয়া যায় না। আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যাকাত বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন/পারিশ্রমিক এ খাত থেকে ব্যয় করা যাবে না ।

যাকাত বন্টনের নির্ধারিত ৮টি খাতগুলো কি কি?

যাকাতের সম্পদ সঠিকভাবে বন্টন করার উপর অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই কারণে আল্লাহপাক নিজেই যাকাত ব্যয় বন্টনের খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন । যাকাত কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় (আল কুরআন, সূরা-তাওবা, আয়াত-৬০)। এ খাতের বাইরে অন্য কোন খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। নিম্নে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত উল্লেখিত ৮টি খাতের বর্ণনা দেয়া হলো।

প্রথমতঃ ফকীর- ফকীর হলো সেই ব্যক্তি যার মলিকানায় নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন প্রকারের সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই। যে ব্যক্তি রিক্তহস্ত, অভাব মেটানোর যোগ্য সম্পদ নেই, ভিক্ষুক হোক বা না হোক, এরাই ফকীর। যে সকল স্বল্প সামর্থ্যের দরিদ্র মুসলমান যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও বা দৈহিক অক্ষমতাহেতু প্রাত্যহিক ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারে না, তারা এ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। কোন কোন ইমামের মতে, যার কাছে মাত্র একবেলা বা একদিনের খাবার আছে সে ফকীর।

দ্বিতীয়ত : মিসকীন- মিসকীন সেই ব্যক্তি যার কিছুই নেই, যার কাছে একবেলা খাবারও নেই। যে সব লোকের অবস্থা এমন খারাপ যে, পরের নিকট সওয়াল করতে বাধ্য হয়, নিজের পেটের আহারও যারা যোগাতে পারে না, তারা মিসকীন। উল্লেখ্য, যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ফকীর বা মিসকীন যাকেই যাকাত দেয়া হবে, সে যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয় ।

তৃতীয়তঃ আমেলীন (যাদের বেতন ভাতা প্রদান করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে)-ইসলামী সরকারের পক্ষে লোকদের কাছ থেকে যাকাত, উশর প্রভৃতি আদায় করে বায়তুল মালে জমা প্রদান, সংরক্ষণ ও বন্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এদের পারিশ্রমিক যাকাতের খাত থেকে আদায় করা যাবে। কুরআনে বর্ণিত আটটি খাতের মধ্যে এ একটি খাতই এমন, যেখানে সংগৃহীত যাকাতের অর্থ থেকেই পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এ খাতের বৈশিষ্ট্য হলো এতে ফকীর বা মিসকীন হওয়া শর্ত নয়। পক্ষান্তরে, অবশিষ্ট ৫টি খাতে দারিদ্র্য ও অভাবগ্রস্থতা দূরীকরণে যাকাত আদায় শর্ত।

চতুর্থত : মুআল্লাফাতুল কুলুব (চিত্ত জয় করার জন্য)- নও মুসলিম যার ঈমান এখনও পরিপক্ক হয়নি অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক অমুসলিম। যাদের চিত্ত (দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করে) আকর্ষণ ও উৎসাহিত করণ আবশ্যকীয় মনে করে যাকাত দান করা হয়, যাতে তাদের ঈমান পরিপক্ক হয়। এ খাতের আওতায় দুঃস্থ নওমুসলিম ব্যক্তিদের যাকাত প্রদানের ব্যাপারে ফকিহগণ অভিমত প্রদান করলেও পরবর্তীতে যখন ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি পায় কাফিরদের পক্ষ থেকে ক্ষতির আশংকা হ্রাস পায় তখন এ খাতটি আর অবশিষ্ট থাকেনি। ফলে চিত্ত জয় করার জন্য যাকাতের খাতটি রহিত হয়ে যায়।

পঞ্চমতঃ ক্রীতদাস/বন্দী মুক্তি- এ খাতে ক্রীতদাস-দাসী/বন্দী মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। অন্যায়ভাবে কোন নিঃস্ব ও অসহায় ব্যক্তি বন্দী হয়ে গেলে তাকে মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

ষষ্ঠতঃ ঋণগ্রস্থ- এ ধরনের ব্যক্তিকে তার ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত দেয়ার শর্ত হচ্ছে- সেই ঋণগ্রস্থের কাছে ঋণ পরিশোধ পরিমাণ সম্পদ না থাকা। আবার কোন ইমাম এ শর্তারোপও করেছেন যে, সে ঋণ যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য- যেমন মদ কিংবা না- জায়েয প্রথা অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য ব্যয় না করে।

সপ্তমতঃ আল্লাহর পথে- সম্বলহীন মুজাহিদের যুদ্ধাস্ত্র/সরঞ্জাম উপকরণ সংগ্রহ এবং নিঃস্ব ও অসহায় গরীব দ্বীনি শিক্ষারত শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে যাকাত প্রদান করা যাবে। এ ছাড়াও ইসলামের মাহাত্ম ও গৌরব প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে যারা জীবিকা অর্জনের অবসর পান না এবং যে আলিমগণ দ্বীনি শিক্ষাদানের কাজে ব্যাপৃত থাকায় জীবিকা অর্জনের অবসর পান না। তারা অসচ্ছল হলে সর্বসম্মতভাবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া যাবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনের সূরা বাকারায় বর্ণিত আছে যে, “যাকাত এই সমস্ত লোকের জন্য যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফেরা করতে পারে না, যাচঞা না করার জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত বলে মনে করে।” উল্লেখ্য যে, দ্বীন ইসলাম প্রচারের নামে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ যেকোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টিভি বা এ জাতীয় কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য এই খাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না।

অষ্টমতঃ অসহায় মুসাফির- স্বস্থান থেকে দূরে অবস্থিত যে সমস্ত মুসাফির যারা কষ্টে নিপতিত আছে তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পুরণ হওয়ার মত এবং বাড়ী ফিরে আসতে পারে এমন পরিমাণ অর্থ যাকাত থেকে প্রদান করা যায় ।

যাকাত যোগ্য সম্পদের পরিমান কত? 

যে কোন উদ্দেশ্যে যে কোন আকৃতিতে নিজ মালিকানায় বিদ্যমান থাকলে যাকাত ফরয শুধু স্বর্ণ হলে ৭.৫০ তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম)।শুধু রূপা হলে ৫২.৫০ তোলা (৬১৬.৩৬ গ্রাম)।উভয় প্রকার মাল বা অন্য কোন যাকাত যোগ্য সম্পদের সমষ্টি রূপার নেসাব সমমূল্যের হলে এবং তা এক চন্দ্র বছর অতিক্রান্ত হলে যাকাত ফরয।
স্বর্ণ রূপার সকল প্রকার অলংকারেরও একই বিধান ।নগদ ও নগদায়ন যোগ্য সকল প্রকার অর্থের উপর যাকাত ফরয।মুদ্রা দেশি বৈদেশিক ব্যাংকের সকল প্রকার এ্যাকাউন্টে গচ্ছিত কোন প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে জমাকৃত অর্থ, বন্ড ও ডিবেঞ্জার ও ট্রেজারী বিল ও বীমা পলিসিতে জমাকৃত অর্থ ।
উসূল যোগ্য প্রাপ্য ঋণ, প্রভিডেন্ট ফান্ড হতে প্রাপ্ত অর্থ, বিল অফ এ্যাকচেঞ্জ, বাকিতে বিক্রিত পণ্যের মূল্য, সিকিউরিটি এ্যাডভান্স সবই নগদ বানগদায়নযোগ্য অর্থ হিসেবে গণ্য হবে এবং যাকাত তার উপর ফরয হবে রূপার মূল্যের ভিত্তিতে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *