আজকের খবর ২০২৫

জমি বন্টন আইন বাংলাদেশ ২০২৫ । বসত বাড়ির জমির ভাগ কি মেয়েরা পায়?

সূচীপত্র

হ্যাঁ, ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক মেয়েরা বসত বাড়ির জমির ভাগ পায়। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে, মেয়েরা বাবার সম্পত্তির অধিকার লাভ করে এবং তারা পিতার সম্পত্তির নির্দিষ্ট অংশ পাওয়ার যোগ্য। যদি বাবার কোনো পুত্র না থাকে, তবে মেয়েরা পিতার সম্পত্তির অর্ধেক অংশ পায়। যদি বাবার পুত্র থাকে, তবে পুত্র ও কন্যার মধ্যে সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১, অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে থাকলে তারা সবাই মিলে সম্পত্তির ২/৩ অংশ সমানভাবে ভাগ করে নেয়। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, মেয়েরা তাদের বাবার সম্পত্তির অংশ পাওয়ার অধিকার রাখে। এই অধিকারকে অস্বীকার করা বা তাদের বঞ্চিত করা ইসলাম পরিপন্থী –জমি বন্টন আইন বাংলাদেশ ২০২৫

বসত বাড়ির জমির ভাগ কি মেয়েরা পায়? বসতবাড়ির জমির ভাগ মেয়েরা পেতে পারে। উত্তরাধিকার সূত্রে পিতার সম্পত্তির ভাগ মেয়েরাও পেতে পারে, যদিও বসতবাড়ির ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম আছে। বসতবাড়ির ক্ষেত্রে বাটোয়ারা আইন ১৮৯৩ এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ এর ধারা অনুযায়ী, সাধারণত বসতবাড়ির ক্ষেত্রে মেয়েরা অংশ দাবি করতে পারে না। মহামান্য হাইকোর্টের কিছু রায় রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, বসতবাড়ির বাটোয়ারা মামলায় মেয়েরা পিতার বসতবাড়ি বা বসতবাড়ির জমির অংশ দাবি করতে পারবে না এবং বসতবাড়ির অংশ অন্য কারো কাছে বিক্রিও করতে পারবে না।
তবে, বসতবাড়ির বাইরে অন্য কোনো সম্পত্তির ক্ষেত্রে মেয়েরা পিতার সম্পত্তির ভাগ পেতে পারে। যদি বসতবাড়ির কোনো অংশ অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়, তাহলে সেই ক্ষেত্রেও মেয়েরা সম্পত্তির ভাগ দাবি করতে পারে।

বাটোয়ারা আইন কি বলে? (১৯৬১-১৩ ডি.এল.আর-২৩০): দেওয়ানী মোকদ্দমা (বাটোয়ারা) যে সকল নারী স্বামীর বাড়ি বসবাসের গৃহ থাকা স্বত্বেও বাবার গৃহ (ভিটে বাড়ি) থেকেও ভাগের অংশ চাচ্ছেন, তাদের জন‍্য : বিবাহ জনিত কারনে পৈত্রিক ভিটায় বোনের দখল: একজন উত্তরাধিকারিনী পৈত্রিক ভিটায় অবস্থিত কোন বসতগৃহ বা কুটিরে বিবাহ পযর্ন্ত সহ-অংশীদার হিসেবে বিবেচ্য হবেন। পরবর্তীতে উত্তরাধিকারিনীর (কন্যা সন্তান) অন্যত্র বিবাহ হলে, তিনি আগন্তুক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাই তিনি উক্ত পৈত্রিক ভিটায় অবস্থিত বসতগৃহ বা কুটিরের কোন একচ্ছত্র অংশ দাবী করতে পারেন না। এ কারনে বাটোয়ারা মামলায় উত্তরাধিকারিনীর (কন্যা সন্তান) বসতগৃহ বা কুটিরের অংশ বিশেষ প্রাপ্তির বিষয়টি বিবেচিত হয় না। কারন উক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী (পূত্র সন্তান) গণের মধ্যে বিবাদ বা বিরোধ বৃদ্ধি পাবে (১৯৬১-১৩ ডি.এল.আর-২৩০)।

পুত্র:কন্যা হিস্যা কেমন? সাধারণত বোনেরা পৈতৃক সম্পত্তির সব জায়গা জমিরই ২:১ অনুপাতে অংশীদার। যেহেতু মেয়েদের ঠিকানা হয় শশুর বাড়ি তাই বাপের বাড়ির গৃহের অংশ তাদের ব‍‍্যবহার করার দরকার পড়েনা। এছাড়াও একটা পর্যায় বোনেরা বাপের বাড়ির জমি পেলেই জমি অন‍্যের কাছে বেচে চলে যায়।অন‍্যদিকে ছেলেদের বাপের গৃহই সম্বল তাই সামাজিক আর পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় পিতৃ গৃহের বা ভিটে বাড়ির জমির দেয়া যায় না। বোনেদের ভিটে থেকে জমি নিতেই হবে এটা অমানবিক দাবী। কোন মেয়ে যদি এইসব বুঝেও বাবার গৃহ বা বসতবাড়ি থেকেই জমি নিতেই হবে অন‍্য জায়গায় নেবো না এমন আচরন করে তাহলে বুঝতে হবে সে তার ভাইকে কষ্ট দেয়ার জ‍ন‍্য অথবা অতিরিক্ত লোভের বর্শবর্তী হয়েই এইসব ঝামেলা করতে চাচ্ছে । ধর্মীয় নির্দেশ অনুযায়ী নিজের ভাইদের কষ্ট দেয়া নিশ্চয় জায়েয কাজ হয় না। ভাইদের বাবার গৃহটাই যখন শেষ সম্বল তখন এই দিকে নজর না দেওয়াই ভালো। 

বাড়ি নয় বরং ক্ষেত বা জমি থেকে অংশ বুঝিয়ে দেয়া । তাই ভাইদের উচিত সমানুপাতিকভাবে অর্থাৎ যাতে বোনের হক কোনোভাবেই বিনষ্ট না হয় এমন জমি থেকে তার অংশ বুঝিয়ে দেওয়া।

উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মেয়েরা কত অংশ? যদি বাবা মারা যান, তাহলে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার সূত্রে মেয়েরাও পেতে পারে। একমাত্র মেয়ে থাকলে সে বাবার সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ (১/২) অংশ পাবে। একাধিক মেয়ে থাকলে তারা সবাই মিলে সমান ভাগে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) অংশ পাবে।সংক্ষেপে: বসতবাড়ির ক্ষেত্রে মেয়েরা সাধারণত অংশ দাবি করতে না পারলেও, অন্য কোনো সম্পত্তির ক্ষেত্রে তারা পিতার সম্পত্তির ভাগ পেতে পারে। 

The Partition Act, 1893 – Laws of Bangladesh

বাটোয়ারা আইন হলো যৌথ বা এজমালি সম্পত্তির ভাগ বা বন্টন সংক্রান্ত একটি আইনি প্রক্রিয়া। এটি মূলত একটি দলিল, যা দ্বারা সম্পত্তির সহ-মালিকগণ তাদের সম্পত্তি ব্যক্তিগত মালিকানায় পৃথকভাবে ভাগ করে নেয়. এই আইনি প্রক্রিয়াটি মূলত ১৮৯৩ সালের বাটোয়ারা আইন (The Partition Act, 1893) দ্বারা পরিচালিত হয়

  1. বাটোয়ারা আইন হলো একটি সম্পত্তি ভাগ করার প্রক্রিয়া, যেখানে একাধিক মালিকের মধ্যে একটি যৌথ বা অবিভাজ্য সম্পত্তি ভাগ করে দেওয়া হয়। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া যা আদালতের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয় যখন মালিকরা নিজ নিজ অংশীদারিত্ব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আপোষ করতে না পারেন।
  2. বাটোয়ারা আইন: যৌথ বা অবিভাজ্য সম্পত্তির ভাগবণ্টন-এটি মূলত এমন একটি সম্পত্তির জন্য যা একাধিক মালিকের অধীনে থাকে, কিন্তু সেটি এখনও ভাগ করা হয়নি।
  3. আদালতের মাধ্যমে: যদি মালিকরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করতে না পারেন, তবে তাদের দেওয়ানি আদালতে বাটোয়ারা মোকদ্দমা (বাটোয়ারা মামলা) করতে হয়।
  4. আইনি ভিত্তি: বাংলাদেশে বাটোয়ারা আইন ১৮৯৩ কার্যকর রয়েছে, যা এই ধরনের মামলা নিষ্পত্তির জন্য ব্যবহৃত হয়।
  5. বন্টননামা: বাটোয়ারা সম্পন্ন হওয়ার পর মালিকদের মধ্যে একটি বন্টননামা বা বাটোয়ারা দলিল তৈরি করা হয়, যেখানে প্রতিটি মালিকের অংশ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে, দলিল সেবা।
  6. সম্পত্তি ভাগ: বাটোয়ারার মাধ্যমে সম্পত্তি ভাগ করার ফলে প্রতিটি মালিকের নিজস্ব অংশ নিশ্চিত করা হয় এবং তারা সেই অংশটি ব্যবহার করতে বা বিক্রি করতে পারে।
  7. বাটোয়ারা আইন মূলত সম্পত্তি মালিকদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি আইনি প্রক্রিয়া। এটি নিশ্চিত করে যে সম্পত্তির অংশীদারদের মধ্যে কোনো জটিলতা বা অনিয়মের সৃষ্টি না হয়।

দেওয়ানী মোকদ্দমা বা বাটোয়ারা মামলা কোথায় করতে হয়?

১৯৬১-১৩ ডি.এল.আর-২৩০ মামলাটি দেওয়ানী মোকদ্দমা (বাটোয়ারা) সম্পর্কিত। এই মামলাটি মূলত বাবার ভিটাবাড়ি থেকে বিবাহিত মেয়ের অংশ পাওয়ার দাবি নিয়ে ছিল। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বামী গৃহে বসবাসরত বিবাহিত কন্যা পিতৃগৃহের অংশ বিশেষ প্রাপ্তির বিষয়টি বাটোয়ারা মামলায় বিবেচিত হয় না। কারণ, উত্তরাধিকারীদের (পুত্র সন্তান) মধ্যে বিবাদ বা বিরোধ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে কালবেলা জানায়। এই মামলার মূল বিষয় ছিল, একজন উত্তরাধিকারী (কন্যা) পিতার ভিটাবাড়িতে অবস্থিত বসতগৃহ বা কুটিরে বিবাহ পর্যন্ত সহ-অংশীদার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে কিনা। তবে, স্বামী গৃহে বসবাস করার কারণে, পিতৃগৃহের অংশ পাওয়ার বিষয়টি বাটোয়ারা মামলায় সাধারণত বিবেচনা করা হয় না। বাটোয়ারা আইনের ৪ ধারা মতে পৈত্রিক বাড়ি ভাগ করতে পারবে না। বাটোয়ারা আইনের ৪ ধারা অনুসারে পৈতৃক বাড়ি ভাগ করা বাটোয়ারা আইনের আওতা থেকে বাইরে থাকে। তবে, যদি কোনো মেয়ের বিয়ে হয়ে সে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে, তাহলে সে পৈতৃক বাড়িতে অংশ পাওয়ার অধিকার হারায় না। যদি বাবার সম্পত্তি ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে বাটোয়ারা আইনের আওতায় তা ভাগ করা সম্ভব নয়। 

অন্যভাবে, যদি কোনো বাবা তার পৈতৃক সম্পত্তি তার পুত্র-কন্যাদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে তিনি বাটোয়ারা আইনের ধারা ব্যবহার করতে পারেন। বাটোয়ারা আইনে, পিতার ইচ্ছানুযায়ী সম্পত্তি ভাগ করার সুযোগ রয়েছে।

যদি পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ করার ক্ষেত্রে কোনো বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে দেওয়ানি আদালতে মামলা করে সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা করার জন্য আবেদন করা যেতে পারে।

সুতরাং, পৈতৃক বাড়ি ভাগ করার ক্ষেত্রে বাটোয়ারা আইনের ৪ ধারা শুধুমাত্র কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য, যেখানে মেয়েকে বাবার বাড়িতে অংশ পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। 
অন্যথায়, পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ করার ক্ষেত্রে বাটোয়ারা আইন ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে পিতার ইচ্ছানুযায়ী সম্পত্তির ভাগ করতে হবে।  
   
https://reportbd.net/partition-batoyara-mamla-bangladesh/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *