অনলাইন দলিল রেজিস্ট্রেশন

জমি-জমার কাগজপত্র হারিয়ে গেলে আর চিন্তা নেই! জেনে নিন ধাপগুলো, দালাল ছাড়াই সমাধান সম্ভব

সূচীপত্র

জমি-জমার কাগজপত্র, যেমন মূল দলিল, খতিয়ান বা নকশা হারিয়ে গেলে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। আগুন লাগা, চুরি হওয়া বা অসাবধানতাবশত নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই—বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠান্ডা মাথায় সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে হারানো কাগজপত্র পুনরুদ্ধার করা এবং জমি বিক্রি বা নামজারির মতো কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ সম্ভব।

সম্প্রতি ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি নির্দেশিকায় দেখা গেছে, জমি সংক্রান্ত মূল কাগজপত্র হারিয়ে গেলেও তা নতুন করে তৈরি করার সুনির্দিষ্ট সরকারি পদ্ধতি রয়েছে। শুধু দরকার “ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে এগোনো”

ধাপ ১: হারানো কাগজপত্র চিহ্নিতকরণ

প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে কোন কোন নথি হারিয়ে গেছে। জমির মূল কাগজপত্র বলতে মূলত বোঝায়:

  • খতিয়ান: (CS, SA, RS, BS ইত্যাদি)

  • দলিল: (বায়া দলিল বা রেজিস্ট্রি দলিল)

  • মৌজা ম্যাপ বা নকশা

এই নথিগুলি ছাড়া জমির মালিকানা প্রমাণ, ব্যাংক লোন বা নামজারি (মিউটেশন) প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

ধাপ ২ ও ৩: খতিয়ান ও দলিল পুনরুদ্ধারের সহজ পথ

জমির মালিকানা প্রমাণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি দুটি হলো খতিয়ান এবং দলিল। সরকার এই নথিগুলি সংরক্ষণের জন্য একাধিক অফিসকে ক্ষমতা দিয়েছে:

নথিপ্রাপ্তির স্থানপ্রয়োজনীয়তা
খতিয়ানজেলা প্রশাসকের অফিস (সার্টিফাইড কপি), সেটেলমেন্ট অফিস (নতুন খতিয়ান ও ম্যাপ)জমির বর্তমান ও পূর্ববর্তী মালিকানার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
দলিল (নকল)জেলা রেজিস্ট্রি অফিস (রেকর্ড রুম), উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসপুরাতন বা নতুন যেকোনো দলিলের সার্টিফাইড কপি পাওয়া যায়।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: খতিয়ান নম্বর না জানলে প্রথমে তহশিল অফিস বা ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে খসড়া তথ্য জেনে নেওয়া যেতে পারে। ইউনিয়ন ভূমি অফিস খাজনা পরিশোধের প্রাথমিক স্থান হিসেবেও কাজ করে।

ধাপ ৪: মৌজা নকশা বা ম্যাপ সংগ্রহ

জমির অবস্থান ও পরিমাপ বোঝার জন্য মৌজা ম্যাপ অপরিহার্য। এটি সংগ্রহ করা যায়:

  • জেলা প্রশাসকের অফিস

  • ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর (তেজগাঁও, ঢাকা)

ধাপ ৫: খরচ এবং সাবধানতা

ভালো খবর হলো, হারানো কাগজপত্র পুনরুদ্ধারের সরকারি ফি খুব সামান্য। যেমন সিটি জরিপ খতিয়ানের জন্য ১০০ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। তবে স্থান ও অফিসের ধরনের ওপর ভিত্তি করে সামান্য কিছু অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।

⚠️ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ: এই প্রক্রিয়ায় দালালদের সম্পূর্ণ ভরসা না করে নিজেরা তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী বা জমি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এতে সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে এবং কাজ সহজ হবে।

প্রকৃত মালিকানা যাচাইয়ের একটি উদাহরণ

জমির কাগজপত্রের জটিলতা নিরসনে আইনজীবীরা একটি উদাহরণ তুলে ধরেছেন:

যদি কেউ আপনার দাদার ১৯৪০ সালের একটি দলিলে জমি বিক্রির দাবি করেন, কিন্তু আপনার কাছে কোনো দলিল না থাকে—আপনি তখন জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে সেই পুরাতন দলিলের নকল তল্লাশি করতে পারেন। একইসঙ্গে, সেটেলমেন্ট অফিস থেকে ১৯৬২ সালের খতিয়ান সংগ্রহ করে জমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করতে পারবেন। ধাপে ধাপে এভাবে তথ্য সংগ্রহ করলেই জমির কাগজ নতুন করে তৈরি করা সম্ভব।


সংক্ষেপে করণীয়:

  • খতিয়ান তুলুন: জেলা প্রশাসকের অফিস বা সেটেলমেন্ট অফিসে

  • দলিল তুলুন: সাব-রেজিস্ট্রি বা জেলা রেকর্ড রুমে

  • নকশা সংগ্রহ করুন: জেলা প্রশাসকের অফিস বা তেজগাঁওয়ের জরিপ দপ্তরে

আইনজীবী বা জমি বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিলে কাজ আরও সহজ ও দ্রুত হবে।

শুধু নাম দিয়ে কি দলিল খুঁজে বের করা যায়?

না, শুধুমাত্র নাম দিয়ে সরাসরি দলিল খুঁজে বের করা কঠিন এবং প্রায় অসম্ভব। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বা জেলা রেকর্ড রুমে হাজার হাজার দলিল সংরক্ষিত থাকে এবং সেগুলোর সূচী তৈরি করা হয় নির্দিষ্ট কিছু তথ্য বা নম্বর ব্যবহার করে।

শুধুমাত্র নাম দিয়ে দলিল খুঁজতে গেলে আপনার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রয়োজন হবে।

দলিল খুঁজে বের করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য:

দলিলের নকল বা সার্টিফায়েড কপি তোলার জন্য সাধারণত নিচের যেকোনো একটি তথ্য থাকা আবশ্যক:

১. দলিল নম্বর এবং সাল: এটিই দলিল খুঁজে বের করার সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুততম উপায়। ২. জমির দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর এবং মৌজা: এই তথ্যগুলো থাকলে রেজিস্ট্রি অফিসে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় তল্লাশি চালানো সহজ হয়। ৩. বিক্রেতা/দাতার নাম এবং জমি রেজিস্ট্রির তারিখের আনুমানিক সাল: যদি সুনির্দিষ্ট দলিল নম্বর জানা না থাকে, তাহলে বিক্রেতার নাম এবং দলিলটি কত সালের মধ্যে রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল সেই আনুমানিক তারিখ বা সাল জানা থাকলে কর্তৃপক্ষ সেই নির্দিষ্ট সময়ের ভলিয়ম বা ইনডেক্স থেকে তল্লাশি করে দেখতে পারেন। ৪. সূচি বই (Index Book): রেজিস্ট্রি অফিসে “সূচি বই-২” (Index Book II) থাকে। এই বইতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের নাম দিয়ে দলিলের তথ্য খোঁজা যায়, তবে এর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নাম এবং কোন সালের দলিল তা জানতে হবে।

সংক্ষেপে: শুধু নাম দিয়ে নয়, দলিল খুঁজে বের করার জন্য নামের পাশাপাশি অবশ্যই দলিল রেজিস্ট্রির আনুমানিক সাল (কবে কেনা হয়েছে) এবং সেই এলাকার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নাম জানা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *