সূচীপত্র
জমির মালিকানা যাচাই এখন আরও সহজ- জমি-জমা সংক্রান্ত তথ্য যাচাই ও নির্ভুল মালিকানা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) খতিয়ান এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। পুরোনো এসএ (State Acquisition) এবং আরএস (Revisional Settlement) খতিয়ান সংশোধন করে বর্তমানে চলমান ভূমি জরিপের মাধ্যমে যে নতুন রেকর্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে, সেটিই বিএস খতিয়ান নামে পরিচিত। ১৯৯৮ সালে ঢাকা মহানগর ভূমি জরিপের মাধ্যমে এই খতিয়ানের সূচনা হয় এবং বর্তমানে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান।
বিএস খতিয়ান কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিএস খতিয়ান হলো ১৯৯৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান ভূমি জরিপ থেকে প্রস্তুতকৃত নথি। এটি পূর্ববর্তী খতিয়ানসমূহের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে জমির মালিকানা, দাগ নম্বর, এবং পরিমাণের একটি সংশোধিত ও হালনাগাদকৃত তথ্য প্রদান করে। এর প্রধান গুরুত্ব হলো:
- নির্ভুল মালিকানা: এটি আপনার বা আপনার পূর্বপুরুষের (পিতা-মাতা, দাদা-দাদি) নামের রেকর্ড সংশোধিত হয়ে থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করে, যা জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ কমাতে সাহায্য করে।
- স্বচ্ছতা: অনুসন্ধানের মাধ্যমে রেকর্ডভুক্ত নতুন খতিয়ানগুলো দেখে তথ্যগুলো সহজে যাচাই করা যায়।
- ডিজিটালাইজেশন: সরকার ভূমি সংক্রান্ত সকল তথ্যকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনার প্রক্রিয়ায় বিএস খতিয়ান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অনলাইনে বিএস খতিয়ান অনুসন্ধান পদ্ধতি
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের (DLRS) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নাগরিকেরা সহজেই বিএস খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারেন। পদ্ধতিটি হলো:
- প্রথমে dlrms.land.gov.bd অথবা eporcha.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন।
- সেখান থেকে ‘সার্ভে খতিয়ান’ অপশনটি বাছাই করুন।
- পর্যায়ক্রমে আপনার বিভাগ > জেলা > উপজেলা > মৌজা বা জেএল নং নির্বাচন করুন।
- ‘খতিয়ানের ধরন’ থেকে ‘বি এস’ অপশনটি সিলেক্ট করুন।
- দাগ বা খতিয়ান নম্বর অথবা মালিকানার নাম ব্যবহার করে অনুসন্ধান করুন।
দ্রষ্টব্য: অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মাত্র ১০০ টাকা সরকারি ফি পরিশোধের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি অথবা অনলাইন খতিয়ানের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সতর্কতা ও বিকল্প ব্যবস্থা
এটি একটি চলমান ভূমি জরিপ হওয়ায়, এখন পর্যন্ত দেশের প্রত্যেক জেলা কিংবা উপজেলার মৌজা সমূহের রেকর্ড অনলাইনে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এ কারণে, আপনার নির্দিষ্ট মৌজার বিএস পর্চার তথ্য অনলাইনে খুঁজে না-ও পাওয়া যেতে পারে। এই অবস্থায় বিভ্রান্ত না হয়ে, অপেক্ষা করা বা বিকল্প হিসেবে উপজেলা ভূমি অফিসে (তহসিল অফিস) গিয়ে সরাসরি খতিয়ান অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করা যেতে পারে।
প্রতারণা থেকে সাবধান
ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো আর্থিক লেনদেনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। অনলাইনে কেউ কাউকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হবেন না। ভূমি সংক্রান্ত সরকারি সেবার জন্য শুধুমাত্র সরকারের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন এবং যেকোনো আইনি জটিলতা বা সমস্যা সমাধানের জন্য সরাসরি অভিজ্ঞ ভূমি বিশেষজ্ঞ বা উকিলের পরামর্শ নিন।
জমির মালিকানা নিশ্চিত করতে এবং হয়রানি এড়াতে, সময় থাকতেই আপনার বিএস খতিয়ানটি যাচাই করে নিন।
