সূচীপত্র
নগদ, বিকাশ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তন করে অন্য একটি অ্যাকাউন্টে সরকারি ভাতা গ্রহণের জন্য আবেদনকারী ভাতাভোগীদের এবার কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। সমাজসেবা অফিস থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, মোবাইল বা ব্যাংক হিসাব নম্বর পরিবর্তনের আবেদন গ্রহণ করা হলেও, তা সরাসরি পরিবর্তন করা হবে না। এক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রতিটি আবেদন পরীক্ষা করা হবে।
সম্প্রতি সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভাতাভোগীদের মোবাইল হিসাব নম্বর পরিবর্তনের আবেদন ফরমে কিছু নতুন নির্দেশনা যোগ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক আবেদনকারীদের অবশ্যই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান বা সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যের (মেম্বার) স্বাক্ষর ও সীল (সিলমোহর) সম্বলিত সুপারিশ জমা দিতে হবে।
তবে শুধু স্বাক্ষর ও সীল থাকলেই আবেদন গ্রাহ্য হবে না। আবেদনকারীর দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সমাজসেবা অফিস থেকে সরাসরি ইউপি চেয়ারম্যান বা মেম্বারের সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া হবে।
এ বিষয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, “আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রতিটি আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হচ্ছি। নম্বর পরিবর্তন করতে দিলেই সঙ্গে সঙ্গে তা করে দেওয়া হবে না। আবেদনকারীর তথ্য ও ইউপি চেয়ারম্যান/মেম্বারের সুপারিশের সত্যতা ভালোভাবে নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল MIS-এ হিসাব নম্বর পরিবর্তনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কেন এই কড়াকড়ি?
জানা গেছে, এর আগে অ্যাকাউন্ট নম্বরের সামান্য ভুলে বা অন্য কোনো কারণে কিছু ভাতাভোগী প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়েছিলেন। অনেক সময় প্রতারকেরা ভুল নম্বর দিয়ে ভাতাভোগীদের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ধরনের অনিয়ম এবং প্রতারণা এড়াতে সমাজসেবা অফিস নম্বর পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
আবেদন ফরমে ভাতাভোগীর নাম, পিতা/স্বামীর নাম, ভাতাভোগীর MIS নম্বর, জাতীয় পরিচিতি নম্বর, জন্ম তারিখ, বর্তমান মোবাইল হিসাব নম্বর, পরিবর্তিত মোবাইল হিসাব নম্বর (বাংলায় ও ইংরেজিতে) এবং হিসাব নম্বর পরিবর্তনের কারণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই কঠোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া ভাতাভোগীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সরকারি ভাতার সুষ্ঠু বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সরকারি ভাতার জন্য কি অনলাইনে আবেদন করা যায়?
হ্যাঁ, সরকারি ভাতার জন্য এখন অনলাইনে আবেদন করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে বেশিরভাগ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (যেমন: বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ইত্যাদি) জন্য অনলাইনে আবেদন করার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
অনলাইনে আবেদনের মূল প্ল্যাটফর্ম:
- সমাজসেবা অধিদপ্তরের MIS Bhata পোর্টাল:
- মূলত এই পোর্টালের মাধ্যমে নতুন আবেদন গ্রহণ করা হয়।
- ঠিকানা: mis.bhata.gov.bd/onlineApplication
আবেদনের প্রক্রিয়া সাধারণত যেমন হয়:
- অনলাইন আবেদন পোর্টালে প্রবেশ: উপরোক্ত ঠিকানায় গিয়ে ‘নতুন আবেদনকারীর তথ্য’ বিভাগে প্রবেশ করতে হবে।
- যাচাইকরণ: আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বর বা জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্ম তারিখ ব্যবহার করে তথ্য যাচাই করতে হবে।
- ফর্ম পূরণ: অনলাইন ফর্মে চাওয়া ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, মোবাইল হিসাব নম্বর (যেটিতে ভাতার টাকা পেতে চান, যেমন: নগদ/বিকাশ/ব্যাংক), পারিবারিক তথ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পূরণ করতে হবে।
- ছবি ও ডকুমেন্ট আপলোড: আবেদনকারীর ছবি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন: জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, আয়ের প্রত্যয়নপত্র, বিধবা/স্বামী নিগৃহীতা প্রত্যয়নপত্র ইত্যাদি) আপলোড করতে হতে পারে।
- সাবমিট এবং প্রিন্ট: সফলভাবে আবেদন করার পর, একটি প্রিন্ট কপি বা হার্ড কপি সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
সক্রিয় মোবাইল হিসাব: আবেদন করার সময় অবশ্যই একটি সক্রিয় নগদ/বিকাশ/ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ব্যবহার করতে হবে, কারণ সরকার এখন জিটুপি (Government to Person) পদ্ধতির মাধ্যমে সরাসরি ভাতাভোগীর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠায়।
আবেদনের শেষ তারিখ: অনলাইনে আবেদন গ্রহণের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়। আপনাকে আপনার উপজেলা/ইউনিয়ন সমাজসেবা কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি বা জাতীয় তথ্য বাতায়ন অনুসরণ করতে হবে।
অফলাইনে আবেদন জমা: কিছু ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করার পরেও, সেই আবেদনের প্রিন্ট কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (চেয়ারম্যান/মেম্বারের প্রত্যয়নপত্রসহ) আপনার উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে জমা দিতে হতে পারে।
সুনির্দিষ্ট ভাতার জন্য আবেদনের বিস্তারিত জানতে আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় অথবা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করা সবচেয়ে ভালো।