সূচীপত্র
মােক্তারনামা একটি সম্পূর্ণ আইন দলিল। স্ট্যাম্প এ্যাক্ট ১৮৯৯ এর উপধারা অনুসারে যে । দলিল দিয়ে কোন ব্যক্তিকে অপর কোন ব্যক্তির পক্ষে হাজির হয়ে কার্য সম্পাদন করার ক্ষমতা দেয়া হয় তাকে বলে মােক্তারনামা-মােক্তারনামা করার নিয়ম ২০২৪
সাধারণতঃ স্থাবর সম্পত্তি তথা জমিজমা দান, বিক্রয়, হস্তান্তর, রক্ষনাবেক্ষণ, বন্ধক রাখা, ঋণগ্রহন, খাজনা প্রদান ইত্যাদি কাজে মােক্তার বা প্রতিনিধি নিয়ােগ করা হয়। তবে অস্থাবর সম্পত্তির বিষয়েও মােক্তার নিয়ােগ করা যায় । পাওয়ার অব এটর্নী দুই প্রকার যথা :
(ক) জেনারেল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি,
(খ) স্পেশাল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি । যে মােক্তারনামায় মােক্তারদাতার পক্ষে জমি-জমা ক্রয়, বিক্রয়। রক্ষণাবেক্ষণ, চুক্তিপত্র করা, মামলা মােকদ্দমা পরিচালনা করা সহ যাবতীয় কাজের ক্ষমতা মােক্তারকে দেয়া হয়, তাকে বলে জেনারেল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি । অন্যদিকে একটি নির্দিষ্ট বা কোন বিশেষ কাজের ক্ষমতা মোক্তারকে দিয়ে তৈরী মোক্তারনামাকে বলে স্পেশাল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি।
মােকারনামার শর্তাবলী
(১) মােক্তারনামা নােটারী পাবলিক, ম্যাজিস্ট্রেট বা বিদেশে সম্পাদিত হলে তা দূতাবাসের প্রতিনিধির সম্মুখে সম্পাদন (সহি) করতে হবে এবং তসদিক/সত্যায়ন করতে হবে;
(২) মােক্তারনামা লিখিত দলিল হতে হবে;
(৩) মােক্তারনামা যথাযথ স্ট্যাম্পযুক্ত হতে হবে;
(৪) মােক্তারনামা দাতা কর্তৃক মােক্তার কে ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।
ড্রাফটিং এর কাল্পনিক তথ্য
মােক্তারনামা রেজিস্ট্রিকরণ
(ক) মােক্তারদাতা তার পক্ষে কাউকে রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩২ ধারা মতে দলিল সম্পাদন ও দাখিল করার জন্য মােক্তার নিযুক্ত করে যে মােক্তারনামা তৈরি করেন তা অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে (রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩ ধারা)।
(খ) মােক্তারনামা দাতার সম্পত্তি যেখানেই থাকুক দাতা যেখানে বসবাস করেন সে জেলার রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রার এর সম্মুখে মােক্তারনামা সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করতে হবে।
(গ) মােক্তারনামা সম্পাদন কালে দাতা বিদেশে বসবাসরত থেকে থাকলে তাকে নােটারী পাবলিক, আদালতের বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট বা বাংলাদেশ দূতাবাসের বাণিজ্যদূত বা ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রতিনিধির সম্মুখে মােক্তারনামা সম্পাদন করতে হবে এবং তার দ্বারা মােক্তারনামাটি প্রত্যয়ন করতে হবে।
(ঘ) দলিল দাতা দলিল নিজে সম্পাদন করে তা রেজিস্ট্রি অফিসে দাখিল করার জন্য ক্ষমতা দিয়ে মােক্তারনামা তৈরি করলে এরূপ মােক্তারনামা শুধু তসদিক বা সত্যায়ন করলেই চলবে। এরূপ মােক্তারনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে না
(ঙ) যে সকল মােক্তারনামা রেজিস্ট্রি করতে হবে তা অবশ্যই সম্পাদনের ৪ মাসের মধ্যে দাখিল করতে হবে।
(চ) রেজিস্ট্রেশন আইনের ৩৩(১) ধারায় যে সকল ব্যক্তিকে রেজিস্ট্রি অফিসে যাওয়া হতে রেহাই দেয়া হয়েছে তারা বাড়িতে বা জেলে বসে মােক্তারনামা সম্পাদন করতে পারবেন।
মােক্তারনামা নিয়মিতকরণ বা রিস্ট্যাম্পিং
বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানরত কোন ব্যক্তি মােক্তারনামা করতে চাইলে তাকে মােক্তার নামটি রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্টের ৩৩(গ) ধারা মতে বাংলাদেশে দুতাবাসের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দ্বারা প্রত্যয়ন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে সত্যায়ন করে নিতে হবে। এরপর দলিলটি ৩ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের নিকট রিস্ট্যাম্পিং এর জন্য দাখিল করতে হবে। জেলা প্রশাসক সবকিছু যথাযথ পেলে স্ট্যাম্প এ্যাক্টের ১৮ ধারা মতে বিশেষ আঠাযুক্ত স্ট্যাম্প লাগিয়ে তা বাতিল করে নিয়মিত বা রিস্ট্যাম্পিং করে দিবেন। পাওয়ার দলিল সম্পাদনের ৩ মাসের মধ্যে জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করতে না পারলে স্ট্যাম্প এ্যাক্টের ৩৩ ধারা মতে সাধারণ ফিসের ১০ গুণ। বেশী ফিস দিয়ে তা নিয়মিতকরন করা যাবে।
মােক্তারনামা বাতিলের পদ্ধতি
(ক) মােক্তারনামা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য করা হলে মেয়াদ শেষে তা বাতিল বলে গণ্য হবে;
(খ) মােক্তারনামা নির্দিষ্ট কোন কার্যের জন্য করা হলে ঐ কার্য সমাপ্তিতে তা বাতিল বলে গণ্য হবে;
(গ) যৌথ ক্ষমতার মােক্তারনামার পক্ষদের এক জনের মৃত্যুতে তা বাতিল বলে গণ্য হবে;
(ঘ) মােক্তারনামা দাতা কোন মােক্তারনামা বাতিল করতে ইচ্ছুক হলে যে রেজিস্ট্রি অফিসে উহা তসদিক করা হয়েছিল, সে স্থানের জেলা রেজিস্ট্রোরের (ড.আর) বরাবরে মোক্তারনামা রদের আবেদন করতে হবে।
এতে তিনি “দ করা হলাে” কথাটি লিখে দিবেন এবং সে মােতাবেক রেজিস্ট্রেশন সংশোধন করবেন।রেজিস্ট্রনিং অফিসার মোক্তারনামা বাতিলের আবেদন পাবার পর সকল রেজিষ্ট্রি অফিসে বা অন্য কোন জেলার সদর অফিসকে বিষয়টি নােটিস জানিয়ে দিবেন। নােটিশ জারীর ডাক টিকেটের খরচ আবেদনকারী বহন করছেন, স্বার্থের সাথে যুক্ত মোক্তারনামা স্বার্থ পূর্ণ বা পরিত্যক্ত না হওয়া পর্যন্ত বাতিল ক (মােক্তারনামা আইনের ৩ ধারা) একটি মােক্তারনামা দলিলের নমুনা।
শিরােনাম : সার্বিক মােক্তারনামা দলিল।
পক্ষ পরিচয় :
১ম পক্ষ : নাম, পিতা-মাতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা মােক্তারনামা দাতা। জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- পেশা
২য় পক্ষ : নাম, পিতা-মাতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা। মােক্তারনামা গ্রহীতা। জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম-, পেশামােক্তারনামা দলিল গ্রহীতা।
বর্ণনা : পরম করুণাময় আল্লাহর নামে স্মরণ রেখে অত্র মােক্তারনামা দলিলের বর্ণনা কত করছি। যেহেতু আমি মােক্তারনামা দাতা নিম তফসিলভুক্ত সম্পত্তি/ডেইরী ফার্ম হতে দৰে বসবাস করছি এবং আমার শারিরীক অসুস্থতার জন্য স্ত্রীর শাসন সংরক্ষণে অসমর্থ হয়েছি সেহেতু আমি দাতা আপনি গ্রহীতা আমার পরম হিতৈষী জেনে নিম্নলিখিত শর্তাবলীতে অদ্য……….. ইং তারিখে সর্বজন জ্ঞাতসারে আমার স্বত্বাধীন নিম্ন তফসিলভুক্ত সম্পত্তির/ডেইরী ফার্মের শাসন সংরক্ষণের নিমিত্তে আপনাকে আমার বৈধ প্রতিনিধি বা মােজর নিয়োেগ করলাম।
দলিলের শর্তাবলী
(১) আপনি গ্রহীতা নিম তফসিলভুক্ত আমার যাবতীয় সম্পত্তি/ডেইরী ফার্মের স্বত্ব, স্বার্থ সংরক্ষণার্থে দলিল চিঠিপত্র, রসিদ পত্রাদি সম্পাদন এবং এতদবিষয়ক যাবতীয় বিরােধ নিষ্পত্তি করেন।
(২) আপনি তফসিলভুক্ত সম্পত্তি/ ডেইরী ফার্ম সম্পর্কিত দাবি, আদায়, গ্রহন এবং এ সম্পর্কে ব্যক্তি, কোম্পানী, সমিতি, সংস্থা, কর্তৃপক্ষ বা সরকার বা অন্য কোন সংস্থার দাবি, ক্ষতিপূরণ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি বিষয়ে যােগাযােগ রক্ষা করবেন এবং প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
(৩) আপনি মিউনিসিপ্যালটি, উন্নয়ন সংস্থা, বিমান, চেস্ব অব কমার্স, ট্রেজারী, রাজস্ব অফিস, সেটেলমেন্ট অফিস, দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদা”. আপিল আদালত, আয়কর কর্তৃপক্ষ ইত্যাদিতে প্রয়ােজনবােধ উপস্থিত হবেন এবং আমাকে প্রতিনিধিত্ব করবেন।
(৪) আপনি তফসিলভুক্ত সম্পত্তি/ ডেইরী ফার্মের উন্নয়ন কল্পে সম্পত্তি দান, বিক্রয়, বন্ধক ইত্যাদি ভাবে হস্তান্তর করতে পারেন এবং এজন্য দলিলাদী সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করতে পারেন।
(৫) তফসিলভুক্ত সম্পত্তি রক্ষণার্থে মামলা-মােকদ্দমা মােকাবেলা করতে এবং এজন্য এডভােকেট নিয়ােগ করতে এবং তার ফিসাদি নির্বাহী করতে পারবেন।
(৬) মামলা মােকাদ্দমার আরজি, জবাব, দরখাস্তে ও ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে পার।” এবং আপনি মামলা আপােস, নিস্পত্তি, পরিচালনা, আপিল, প্রত্যাহার এই সম্পর্কে যা ” মনে করবেন তাই করতে পারবেন ।
(৭) আপনি তফসিলভুক্ত সম্পত্তি/ডেইরী ফার্ম সংক্র বিষয়ে নগদ অর্থ, বিল, মনি-অর্ডার, চেক, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, বন্ড বা অন্য যে কে জামানত গ্রহণ ও প্রদান করতে পারবেন।
আমি ……….. মিয়া নিম তফসিলভুক্ত সম্পত্তি/ডেইরী ফার্মের স্বত্বাধিকারী (আপনি গ্রহীতা) কর্তৃক সম্পাদিত উপযুক্ত শর্তাধীনে যাবতীয় কার্যাদি অত্র মােরনামা দলিল দ্বারা অনুমােদন ও বহাল করলাম এবং এ মর্মে স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে উপস্থিত নিমােক্ত সাক্ষীগণের সম্মুখে অত্র মােক্তারনামা পাঠ করে ও মর্ম অবগত হয়ে নিজ স্বাক্ষরে সম্পাদন করে দিলাম । ইতি তারিখ …….. বাংলা সনের …… বৈশাখ, ইংরেজি ……….. সনের ………. এপ্রিল সকাল ১১:৩০ মিঃ। তফসিল বর্ণনা ও সম্পত্তি/ডেইরী ফার্মের বিবরণঃ ……… সাক্ষীদের সনাক্তকারীর স্বাক্ষর ……….. দাতার স্বাক্ষর।