ই নামজারি ও ভূমি কর

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমি: বন্টননামা ছাড়াই নামজারির সুযোগ, জটিলতা নিরসনে নতুন দিশা

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত স্থাবর সম্পত্তি বা জমি নামজারি (মিউটেশন) বা রেকর্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে ওয়ারিশদের জন্য এতদিন বণ্টননামা দলিল ছিল একটি প্রায় বাধ্যতামূলক শর্ত। তবে, বাস্তবে এই দলিল তৈরি করা দেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য এক দুরূহ প্রক্রিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকল ওয়ারিশের অনুপস্থিতি, কেউ বিদেশে থাকা, শারীরিক দূরত্ব কিংবা রেজিস্ট্রি দলিলের বিপুল খরচ বহন করা—এইসব কারণে বন্টননামা দলিল করা অনেকের কাছেই অসম্ভব ছিল। ফলস্বরূপ, জরুরি প্রয়োজনে জমি বিক্রি বা বন্ধক রাখতে গিয়েও ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন বহু মানুষ।

এই বাস্তব সমস্যার সমাধানে এবং নাগরিকদের হয়রানি কমাতে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ পরিপত্র জারি করেছে। এই পরিপত্র উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমির নামজারির বিষয়টি স্পষ্ট করেছে এবং বন্টননামা ছাড়াই নামজারির সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
বন্টননামা ছাড়াই যৌথ নামজারির সুযোগ:
ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা (স্মারক নং-৩১.০০.০০০০.০৪২.21.011.222, তারিখ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) পরিপত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:
১. যৌথভাবে নামজারি (জমাভাগ ছাড়া): মৃত ব্যক্তির সকল ওয়ারিশের নাম একটি খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ওয়ারিশগণ যৌথভাবে নামজারির আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র বা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক প্রদত্ত ওয়ারিশন সনদ সংগ্রহ করে আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
২. এই ধরনের আবেদন পাওয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বন্টননামা দলিল ছাড়াই নামজারি মামলা দায়ের করে খতিয়ানে মৃত ব্যক্তির মোট জমির মধ্যে প্রত্যেক ওয়ারিশের প্রাপ্য হিস্যা উল্লেখপূর্বক নামজারি খতিয়ান সৃজন করে দেবেন।
এই নির্দেশনাটি সেইসব ওয়ারিশদের জন্য একটি বড় স্বস্তি নিয়ে এসেছে, যারা জরুরি প্রয়োজনে জমি বিক্রির উদ্যোগ নিলেও সকল ওয়ারিশকে একত্রিত করতে পারছিলেন না কিংবা বন্টননামা দলিলের খরচ বহন করতে পারছিলেন না।
পৃথক খতিয়ানের ক্ষেত্রে বন্টননামা আবশ্যক
পরিপত্রে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যদি ওয়ারিশগণ জমাভাগের মাধ্যমে পৃথক পৃথকভাবে খতিয়ান সৃজন করতে এবং আলাদাভাবে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে চান, তবে সকল ওয়ারিশ মিলে কে কোন দাগে বা দাগের কোন অংশে জমি ভোগ-দখল করবেন তা নির্ধারণ করে একটি আপস বণ্টননামা দলিল সম্পাদন করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কেবল রেজিস্টার্ড বণ্টননামা দলিল ব্যবহার করেই ওয়ারিশগণ পৃথক পৃথক নামজারির আবেদন করতে পারবেন।
নাগরিক দুর্ভোগ নিরসনে ভূমিকা
নামজারির ক্ষেত্রে সৃষ্ট দীর্ঘদিনের এই জটিলতা নিরসনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র অত্যন্ত সময়োপযোগী বলে মনে করছেন ভূমি বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে:
সময় ও অর্থ সাশ্রয়: বন্টননামা দলিলের জন্য ওয়ারিশদের এক জায়গায় হওয়ার বাধ্যবাধকতা এবং অতিরিক্ত খরচ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
দ্রুত সম্পত্তি হস্তান্তর: জরুরি প্রয়োজনে কোনো ওয়ারিশ তার অংশীদারী সম্পত্তি দ্রুত বিক্রি বা বন্ধক রেখে অর্থসংস্থানের সুযোগ পাবেন।
সরকারের এই পদক্ষেপ ই-নামজারি প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও জনবান্ধব করবে এবং জমির মালিকানা সংক্রান্ত দীর্ঘসূত্রিতা ও হয়রানি অনেকাংশে হ্রাস করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওয়ারিশদের এখন শুধু প্রয়োজনীয় ওয়ারিশন সনদ এবং অন্যান্য কাগজপত্রসহ সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে যৌথভাবে আবেদন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *