আজকের খবর ২০২৫

ভুল এড়াতে যা জানা জরুরি ২০২৫ । নতুন দলিল করার সময় ক্রেতার সতর্কতা অপরিহার্য?

জমি কেনা-বেচা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ও আইনি প্রক্রিয়া। সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে মূল দলিলটি যথাযথভাবে প্রস্তুত করা অপরিহার্য। তবে, প্রায়শই দেখা যায়, ক্রেতারা দলিল লেখার পুরো দায়িত্ব ‘দলিল লেখক’-এর ওপর ছেড়ে দেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, পরবর্তীতে দলিলে কোনো ভুল পরিলক্ষিত হলে তার মাশুল দলিল লেখক নয়, বরং গুনতে হয় ক্রেতা বা গ্রহীতাকেই। তাই নতুন দলিল লেখার সময় ক্রেতার সর্বোচ্চ সচেতনতা ও মনোযোগ একান্ত আবশ্যক।

দলিলকে ত্রুটিমুক্ত রাখতে এবং ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়াতে ক্রেতাকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর রাখতে হবে।

ক্রেতাকে যে বিষয়গুলোতে সচেতন থাকতে হবে:

১. বিক্রেতার বৈধতা যাচাই: দলিল সম্পাদনকারী তথা বিক্রেতা আইনের দৃষ্টিতে সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন কি না, এবং আদালত কর্তৃক তিনি দেউলিয়া ঘোষিত কি না, তা ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে।

২. দলিলের সঠিক ধরন নির্বাচন: এটি ‘সাফ কবলা’, ‘বায়না পত্র’, ‘দানপত্র’ নাকি ‘হেবার ঘোষণা পত্র’—দলিলের এই সঠিক ধরনটি নিশ্চিত করতে হবে।

৩. জমির পরিমাণ ও মূল্য: প্রস্তাবিত জমির সঠিক পরিমাণ এবং বিক্রয় মূল্য (বায়না দলিল হলে পরিশোধিত ও বাকি টাকার পরিমাণ) সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কি না, তা দেখে নিতে হবে।

৪. পক্ষ পরিচয় তথ্য: দলিল গ্রহীতা (প্রথম পক্ষ) এবং দলিল দাতা (দ্বিতীয় পক্ষ)—উভয় পক্ষের পূর্ণ নাম, ঠিকানা, পেশা ও ধর্ম নির্ভুলভাবে লেখা হয়েছে কি না, তা মিলিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে, দলিল গ্রহীতার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং দাতার ক্ষেত্রে সর্বশেষ খতিয়ানের (জরিপ/নামজারি) সঙ্গে নাম-ঠিকানার মিল রাখা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করা জরুরি।

৫. স্বত্বের বর্ণনা: বিক্রেতার মালিকানার ভিত্তি কী—দলিল মূলে হলে পূর্বের দলিলের নম্বর ও তারিখ, পর্চা/খতিয়ান নম্বর ইত্যাদি উল্লেখ আছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে।

৬. উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি: জমিটি যদি বিক্রেতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকেন, তবে মূল মালিকের সঙ্গে বিক্রেতার যোগসূত্র বা সম্পর্ক সঠিকভাবে বর্ণিত হয়েছে কি না, তা জেনে নিতে হবে।

৭. জমির তফসিল (তফশিল): দলিলে প্রস্তাবিত জমির তফসিল যেমন—জেলায় নাম, উপজেলা, রেজিস্ট্রি অফিসের নাম, মৌজার নাম, জেএল নম্বর, দাগ নম্বর, খতিয়ান নম্বর এবং জমির শ্রেণি—আগত খতিয়ানের সঙ্গে হুবহু মিলিয়ে নিতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: তফসিল লেখার সময় প্রত্যেক দাগে মোট জমির পরিমাণ কত এবং বিক্রয় দলিলে সেই দাগের মধ্যে কত একর বা শতাংশ জমি বিক্রি হচ্ছে, তা প্রতি ক্ষেত্রে পৃথকভাবে লিখে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কয়েকটি দাগের জমি একত্রে যোগ করে মোট একর/শতাংশ লেখা উচিত হবে না।

৮. জমির চৌহদ্দি: ক্রয়কৃত জমির চৌহদ্দি (চতুঃসীমা) সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কি না, অর্থাত্‍ উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম পাশের জমির বর্ণনা এবং মালিকের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে কি না, তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দলিল সম্পাদনের এই প্রতিটি ধাপে ক্রেতার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং যাচাই-বাছাই ভবিষ্যত্‍ আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য। নিজের সচেতনতাই পারে ভুল-ত্রুটি এড়াতে এবং জমি ক্রয়ের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *