সূচীপত্র
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি। এটি কেবল পরিচয়ের প্রমাণ নয়, বরং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সেবা পাওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য মাধ্যম। এই পরিচয়পত্রের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কিছু ফি রয়েছে। এই ফিগুলো মূলত পরিচয়পত্র সংশোধন, হারিয়ে গেলে নতুন করে সংগ্রহ করা (রি-ইস্যু), এবং জরুরি পরিষেবা পাওয়ার জন্য প্রযোজ্য হয়।– জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত বিভিন্ন ফি ২০২৫
এনআইডি সংশোধন ফি কত টাকা? এনআইডি সংশোধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফি আছে। আপনার সংশোধনের ধরনের উপর নির্ভর করে ফি ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, আংশিক সংশোধনের জন্য ২৩০ টাকা এবং পূর্ণ বা আমূল তথ্য পরিবর্তনের জন্য ৩৪৫ টাকা ফি লাগে। তবে, অন্যান্য কিছু সংশোধনের জন্য নির্দিষ্ট ফি হতে পারে:
- আংশিক সংশোধন: ২৩০ টাকা
- পূর্ণ/আমূল তথ্য পরিবর্তন: ৩৪৫ টাকা
- অন্যান্য তথ্য (যেমন: ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, পেশা, ধর্ম ইত্যাদি): ১১৫ টাকা
- হারানো/বিনষ্ট কার্ড উত্তোলন: প্রথমবার ২৩০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩৪৫ টাকা
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে কাগজপত্র কি কি লাগে? জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সংশোধনের জন্য আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। কী কী কাগজপত্র লাগবে তা নির্ভর করে আপনি কী ধরনের তথ্য পরিবর্তন করতে চান তার ওপর। নিচে কিছু সাধারণ সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা দেওয়া হলো: নাম বা জন্ম তারিখ পরিবর্তন। যদি আপনার নাম বা জন্ম তারিখ ভুল থাকে, তাহলে এই তথ্যগুলো প্রমাণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
এসএসসি/সমমানের পরীক্ষার সনদ: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণপত্র। জন্ম নিবন্ধন সনদ: জন্ম তারিখ প্রমাণের জন্য এটি দরকার। পাসপোর্ট (যদি থাকে): যদি আপনার পাসপোর্ট থাকে এবং তাতে সঠিক নাম বা জন্ম তারিখ থাকে, তবে এটিও ব্যবহার করা যেতে পারে। নাগরিকত্ব সনদ: স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত। পিতা-মাতার নাম পরিবর্তন যদি আপনার পিতা বা মাতার নাম ভুল থাকে, তাহলে তাদের নাম প্রমাণের জন্য এই কাগজপত্রগুলো লাগবে। পিতা বা মাতার এনআইডি কার্ডের কপি: এটি সবচেয়ে জরুরি। আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা এসএসসি/সমমানের সনদ: যেখানে পিতা-মাতার নাম সঠিকভাবে লেখা আছে। ঠিকানা পরিবর্তন যদি আপনি বর্তমান ঠিকানা বা স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান, তাহলে প্রয়োজন হতে পারে: বিদ্যুৎ, পানি বা গ্যাস বিলের কপি: নতুন ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে। বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র (যদি থাকে): নতুন ঠিকানায় বসবাসের প্রমাণ হিসেবে। নাগরিকত্ব সনদ: স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক প্রদত্ত।নতুন “জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩“-এর আওতায় এই প্রক্রিয়াগুলো এখন আরো সুসংহত এবং ডিজিটালাইজড করার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে মূল নীতিগুলো প্রায় একই থাকছে: নির্ভুল তথ্য এবং যথাযথ প্রমাণপত্র।
অন্যান্য তথ্য পরিবর্তন বলতে কি তথ্য বোঝায়? যদি আপনি অন্যান্য তথ্য যেমন রক্তের গ্রুপ, ধর্ম, পেশা ইত্যাদি পরিবর্তন করতে চান, তাহলে প্রমাণের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হতে পারে। রক্তের গ্রুপ: ডাক্তারের দেওয়া ব্লাড রিপোর্টের কপি। পেশা: পেশা পরিবর্তনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণপত্র সাধারণত লাগে না, তবে পেশার ধরন অনুযায়ী কিছু প্রমাণপত্র চাওয়া হতে পারে। ধর্ম: সাধারণত কোনো প্রমাণ লাগে না, তবে অনেক সময় হলফনামা বা অ্যাফিডেভিট চাওয়া হতে পারে। সকল কাগজপত্র অবশ্যই সত্যায়িত হতে হবে
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিভিন্ন ফি নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখে দিন
এনআইডি বিধিমালা ২০২৩ । জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন আইনগুলো কি কি? জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধনের প্রক্রিয়াটি মূলত “জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০” এবং পরবর্তী সময়ে প্রণীত বিভিন্ন বিধিমালা ও প্রবিধানমালার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সম্প্রতি, এই আইনটি রহিত করে নতুন “জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩” প্রণীত হয়েছে, যা ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। এই আইন এবং এর অধীন প্রণীত বিধি ও প্রবিধানগুলোই এনআইডি সংশোধনের আইনি ভিত্তি।
- জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩: এটি এনআইডি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রমের মূল আইন। এই আইনে নাগরিকের পরিচয় নিবন্ধন, পরিচয়পত্র প্রদান, এবং তথ্য সংশোধনের বিষয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, কোনো নাগরিকের এনআইডি বা সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্তে ভুল থাকলে তিনি নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিবন্ধকের (রেজিস্ট্রার) কাছে আবেদন করতে পারবেন।
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই এবং সরবরাহ) প্রবিধানমালা, ২০১৪: এটি ২০১০ সালের আইনের অধীনে প্রণীত হয়েছিল এবং এটিই ছিল এনআইডি সংশোধনের প্রধান বিধিমালা। যদিও মূল আইনটি পরিবর্তিত হয়েছে, এই প্রবিধানমালা বা এর সংশোধিত রূপ এখনো অনেক ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। এটি বিভিন্ন ধরনের সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, আবেদন প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নির্ধারণ করে।
- সংশোধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আইনি দিক: উপযুক্ত প্রমাণপত্রের প্রয়োজনীয়তা: আইন ও বিধিমালায় সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, যেকোনো সংশোধনের জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই উপযুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। যেমন: নাম বা জন্ম তারিখ পরিবর্তনের জন্য এসএসসি বা সমমানের সনদ। ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য ইউটিলিটি বিল বা হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ। পিতা-মাতার নাম পরিবর্তনের জন্য তাদের এনআইডি কার্ড।
- ব্যক্তিগত শুনানি: কোনো কোনো ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন নাম বা জন্ম তারিখ আমূল পরিবর্তনের জন্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবেদনকারীর ব্যক্তিগত শুনানি গ্রহণ করতে পারেন
- আপিলের সুযোগ: যদি কোনো আবেদন নামঞ্জুর হয়, তাহলে আবেদনকারী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সাধারণত ৪৫ কার্যদিবস) কমিশনের কাছে আপিল করার সুযোগ পান।
- ভুল তথ্য প্রদানের শাস্তি: আইনে বলা আছে যে, ইচ্ছাকৃতভাবে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনআইডি সংশোধনের চেষ্টা করা হলে জেল বা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
- দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা: আইন অনুযায়ী, এনআইডি সংশোধনের জন্য আবেদন গ্রহণ, যাচাই-বাছাই এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারিত থাকে।
- নতুন “জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩”-এর আওতায় এই প্রক্রিয়াগুলো এখন আরো সুসংহত এবং ডিজিটালাইজড করার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে মূল নীতিগুলো প্রায় একই থাকছে: নির্ভুল তথ্য এবং যথাযথ প্রমাণপত্র।
জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা যায় কি?
হ্যাঁ, জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব, তবে এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় এবং উপযুক্ত প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। জন্ম তারিখের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবর্তন করা খুব সহজ নয়, এবং এর জন্য আবেদন সাধারণত খুবই সতর্কতার সাথে যাচাই করা হয়। জন্ম তারিখ পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র, যেমন: এসএসসি/সমমানের পরীক্ষার সনদ: এটি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণপত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি আপনার এসএসসি বা সমমানের সনদে সঠিক জন্ম তারিখ থাকে, তবে তা জমা দিয়ে আবেদন করা যায়। জেএসসি, এইচএসসি বা অন্যান্য বোর্ড পরীক্ষার সনদ: এগুলোও প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। জন্ম নিবন্ধন সনদ: জন্ম তারিখ প্রমাণের জন্য এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। পাসপোর্ট: যদি আপনার পাসপোর্ট থাকে এবং তাতে সঠিক জন্ম তারিখ উল্লেখ থাকে, তবে সেটিও একটি কার্যকর প্রমাণপত্র হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আবেদন প্রক্রিয়া: অনলাইন আবেদন: আপনাকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে (services.nidw.gov.bd) গিয়ে জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে।
ফর্ম পূরণ: আবেদন ফর্মে আপনি ভুল জন্ম তারিখ এবং তার সাথে সঠিক জন্ম তারিখ উল্লেখ করবেন। একই সাথে আপনার প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
ফি প্রদান: সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি (সাধারণত ৩৪৫ টাকা) প্রদান করতে হবে।
সরাসরি জমা: অনলাইনে আবেদন করার পর, আপনাকে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি এবং মূল কাগজপত্রসহ আপনার সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে জমা দিতে হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
জন্ম তারিখ পরিবর্তন করার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করা হয়, এবং উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া এটি পরিবর্তন করা কঠিন হতে পারে। | যদি আপনার একাধিক সনদে (যেমন: জন্ম নিবন্ধন, এসএসসি সনদ, পাসপোর্ট) বিভিন্ন জন্ম তারিখ থাকে, তাহলে আপনাকে প্রমাণ হিসেবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং পুরনো দলিলগুলো জমা দিতে হবে। | সাধারণত, জন্ম তারিখ একবার সংশোধন করার পর দ্বিতীয়বার আবার পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। তাই আবেদন করার সময় সব তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করে নিতে হবে। |