দেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত হাজার হাজার আউটসোর্সিং কর্মী নতুন নীতিমালায় দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় হতাশ-সরকারের বিভিন্ন সরকারি ও আধা-সরকারি দপ্তরে বছরের পর বছর ধরে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় কর্মরত হাজার হাজার কর্মচারী ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’-এ তাদের মূল দাবিগুলো উপেক্ষিত হওয়ায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নীতিমালায় চাকরির স্থায়িত্ব, ন্যায্য বেতন-ভাতা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য শ্রমিক অধিকারের প্রতিফলন না ঘটায় হতাশ কর্মীরা এখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথে হাঁটছেন।
কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বার্তায় বলা হয়েছে, “আমরা যারা বিভিন্ন সরকারি/আধা-সরকারি দপ্তরে বছরের পর বছর ধরে আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে কাজ করছি, আমাদের একটা ন্যায্য প্রত্যাশা ছিল—২০২৫ সালের নীতিমালায় আমাদের নিয়োগে স্থায়িত্ব, চাকরি সুরক্ষা, নির্ধারিত ন্যূনতম বেতন, ছুটি ও অন্যান্য শ্রমিক অধিকার অন্তর্ভুক্ত থাকবে।”
দুঃখজনকভাবে, নীতিমালায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ দাবির প্রতিফলন ঘটেনি, তার মধ্যে অন্যতম:
- চাকরি স্থায়ীকরণের স্পষ্ট রূপরেখা: কর্মীদের মূল দাবি ছিল চাকরির স্থায়ীকরণ বা কমপক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় পর নিয়মিতকরণের সুযোগ।
- সমান কাজের জন্য সমান বেতন: একই কাজ করে সরকারি ও আউটসোর্সিং কর্মীদের বেতনে যে বিশাল বৈষম্য রয়েছে, তার নিরসন হয়নি।
- বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
- সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কাভারেজ: বীমা, পূর্ণাঙ্গ পেনশন (সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কথা বলা হলেও তা সম্পূর্ণভাবে সরকারি কর্মীদের মতো নয়) বা অন্যান্য পূর্ণাঙ্গ সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
- প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নির্ধারিত সুযোগ: কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নির্দিষ্ট সুযোগ বা বাজেট রাখা হয়নি।
আউটসোর্সিং কর্মীরা নিজেদের “রাষ্ট্রের চাকা সচল রাখার অংশীদার” হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে নীতিমালায় বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
কর্মীদের প্রস্তাবিত কর্মপন্থা:
এই পরিস্থিতিতে নিজেদের দাবি আদায়ে আউটসোর্সিং কর্মীরা নিম্নোক্ত কর্মপন্থা অনুসরণ করার ঘোষণা দিয়েছেন:
১. ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠন: জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে আউটসোর্সিং কর্মীদের নিয়ে একটি যৌথ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। ২. গণস্বাক্ষর অভিযান: দাবি সম্বলিত একটি পত্রে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হবে। ৩. গণমাধ্যমের সহযোগিতা: সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জনসম্মুখে তুলে ধরা হবে। ৪. সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি: #আউটসোর্সিং_কর্মচারীর_ন্যায্য_দাবি, #চাকরি_সুরক্ষা_চাই -এর মতো হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হবে। ৫. শান্তিপূর্ণ স্মারকলিপি ও কর্মসূচি: জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদান এবং ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এই নীতিমালা জারি হওয়ার পর সরকারি দপ্তরের কাজ চলমান রাখার ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের এই অসন্তোষ দ্রুত নিরসন না হলে সরকারি কার্যক্রমে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দেশের হাজার হাজার আউটসোর্সিং কর্মী।