অনলাইন দলিল রেজিস্ট্রেশন

জমি-জমার পুরনো দলিল খুঁজে বের করার নির্ভরযোগ্য উপায়: দালাল নয়, সরকারি পদ্ধতিতেই মিলবে আইনি কপি

সূচীপত্র

জমির পুরনো দলিল (Record of Rights) খুঁজে বের করা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য প্রায়শই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া বা শতবর্ষ পুরাতন দলিলগুলো সংগ্রহ করা বেশ কঠিন মনে হতে পারে। তবে, সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী এই দলিলগুলো খুঁজে বের করার জন্য তিনটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি চালু আছে—অনলাইন, সরাসরি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন এবং সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহের মাধ্যমে। ১৯০০ সাল পর্যন্ত পুরাতন দলিলও এই পদ্ধতিতে সহজে বের করা যায়।

কোথায় এবং কীভাবে পাওয়া যাবে দলিল?

জমির দলিল খুঁজে বের করার প্রধান ও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান হলো যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল—সেই অফিস।

প্রয়োজনীয় তথ্য: দলিল খুঁজে বের করার জন্য আবেদনকারীর কাছে কিছু মৌলিক তথ্য থাকা জরুরি, যা কাজটিকে দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করে:

  • দলিল নম্বর (থাকলে অগ্রাধিকার)

  • দলিলের সাল (কবে দলিলটি করা হয়েছিল)

  • মৌজা নাম

  • দাগ নম্বর

  • ক্রেতা বা বিক্রেতার নাম

দলিল নম্বর না থাকলেও চিন্তা নেই!

অনেকের কাছেই দলিল নম্বর থাকে না। সেক্ষেত্রে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আবেদনকারী যদি খতিয়ান (RS / SA / CS / BS), দাগ নম্বর, এবং মৌজা নাম সরবরাহ করতে পারেন, তবে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ইনডেক্স রেজিস্টার থেকে দলিলটি খুঁজে বের করা সম্ভব।

এই ইনডেক্স রেজিস্টারে খোঁজার পদ্ধতিগুলো হলো:

  1. ক্রেতার নাম ধরে

  2. বিক্রেতার নাম ধরে

  3. দাগ নম্বর ধরে

বিশেষ করে, খতিয়ান দিয়ে দলিল বের করার কৌশলটি অত্যন্ত কার্যকরী। খতিয়ান থেকে দাগ নম্বর নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গেলেই সেই নির্দিষ্ট দাগে যতগুলো দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে—তার সবগুলোর তথ্য পাওয়া যায়।

খরচ ও সময়সীমা

আবেদনকারীকে যে কপিটি সরবরাহ করা হয়, তা হলো ‘সার্টিফায়েড ট্রু কপি’, যা আইনিভাবে সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য এবং আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

  • খরচ: সাধারণত একটি কপির জন্য ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে কপি নিতে চাইলে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে।

  • সময়: সাধারণত দলিল পেতে ১ থেকে ৩ কার্যদিবস সময় লাগে। তবে, দলিলটি যদি খুব পুরনো হয় (যেমন শতবর্ষের কাছাকাছি), তাহলে ৫ থেকে ৭ দিনের মতো সময় লাগতে পারে।

🛑 গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা: দালাল এড়িয়ে চলুন

জমির দলিল সংক্রান্ত কাজে দালালদের দৌরাত্ম্য একটি সাধারণ সমস্যা। এই বিষয়ে নাগরিকদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে:

  1. দালালের হাতে সম্পূর্ণ টাকা দেবেন না।

  2. ফি বাবদ যা জমা দেবেন, তার জন্য সব সময় সরকারি রশিদ (Receipt) গ্রহণ করুন।

  3. মনে রাখবেন, আদালতে শুধুমাত্র “সার্টিফায়েড ট্রু কপি” বা সত্যায়িত সঠিক দলিলই আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য। সাধারণ ফটোকপি বা অন্যান্য কপি গ্রহণযোগ্য নয়।

স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতার জন্য সরকারি নির্দেশিত পথে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগাযোগ করাই সবচেয়ে নিরাপদ ও সঠিক উপায়।

দলিলের কাজ নিজে সাথে থেকে বুঝে করতে হবে?

হ্যাঁ, দলিলের কাজ নিজে সাথে থেকে বুঝে করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বুদ্ধিমানের কাজ।

যদিও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মীদের বা নিয়োগকৃত মোক্তার/আইনজীবীর মাধ্যমে কাজ করানো হয়, তবুও মূল বিষয়গুলো নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রক্রিয়াটি নিজে পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক।

🤔 কেন নিজে সাথে থেকে কাজ বুঝে করবেন?

  • ১. ভুল ও জালিয়াতি রোধ: আপনি নিজে উপস্থিত থাকলে দলিলের তথ্যে (দাগ নম্বর, মৌজা, ক্রেতা-বিক্রেতার নাম, টাকার অঙ্ক) কোনো ভুল হচ্ছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারবেন। এতে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা বা জালিয়াতির ঝুঁকি কমে যায়।

  • ২. দালালের হয়রানি থেকে মুক্তি: নিজে সরাসরি অফিস প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকলে দালালদের মিথ্যা প্রলোভন, বাড়তি অর্থ দাবি এবং হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আপনি সরাসরি অফিস কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে সরকারি রশিদ নিতে পারবেন।

  • ৩. সময় ও খরচ নিয়ন্ত্রণ: কখন কী কাজ হচ্ছে, কত টাকা খরচ হচ্ছে এবং কত সময় লাগছে—এসবের ওপর আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এতে অপ্রয়োজনীয় দেরি বা অতিরিক্ত অর্থ খরচ হওয়া আটকানো যায়।

  • ৪. সঠিক কপি নিশ্চিত করা: আপনি নিজেই নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ‘সার্টিফায়েড ট্রু কপি’ সংগ্রহ করছেন, যা ভবিষ্যতে আদালতে বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে।

  • ৫. প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা: একবার নিজে কাজ করলে জমির দলিল সংক্রান্ত সরকারি প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হবে, যা ভবিষ্যতে আপনার কাজে লাগবে।

উপসংহার: যদিও সামান্য কিছু টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে কাজ দ্রুত করিয়ে নেওয়ার প্রবণতা আছে, তবুও আপনার মূল্যবান সম্পদের দলিল সংক্রান্ত কাজ নিজেকে সময় দিয়ে, সাথে থেকে এবং বুঝে করাটাই সবচেয়ে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *