ভূমি আইন ২০২৪

জমি দুই বার বিক্রি ২০২৪ । সম্পত্তি বিক্রির আগের দলিল নাকি পরেরটি টিকবে?

প্রতারকগণ অনেক সময় প্রতারণা করে একই জমি একাধিক বার একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে থাকে। এ বিক্রি কখনো একই দিনেও সম্পন্ন করতে পারে। আবার একাধিক দিনও এ বিক্রি সম্পন্ন হতে পারে। আবার প্রতারক বিক্রেতা প্রথমেই উক্ত জমি নিজের স্ত্রীর নামে হেবা করে দিয়ে পরবর্তীতে অন্য কারো কাছে বিক্রি করতে পারে। এসকল ক্ষেত্রে কার মালিকানা স্বত্ব বা দলিল টিকবে? আসুন বিস্তারিত জানি।

আসুন প্রথমেই জানি, দলিল কিভাবে সম্পাদিত হয়।

দলিল হলো সম্পত্তি হস্তান্তরের মাধ্যম। দলিলের মাধ্যমেই সাধারনত সম্পত্তি হস্তান্তরিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের বর্তমান প্রচলিত আইন অনুযায়ী, সম্পাদিত যেকোন দলিলকে নিবন্ধিত বা Registered হতে হবে। দলিলটি সাব কওলা দলিল হোক, হেবা দলিল হোক, বন্টননামা দলিল হোক, দান দলিল হোক, বিনিময় দলিল হোক ইত্যাদি যে দলিলই হোক না কেন রেজিষ্ট্রেশন আইন অনুযায়ী উক্ত দলিল কে অবশ্যই Registered বা নিবন্ধিত হতে হবে।

এবার আসুন মূল প্রসঙ্গে আসি। প্রতারক একই জমি একাধিক বার বিক্রি করলে কোন দলিল টিকবে?

এক্ষেত্রে, আমাদেরকে দুইটি আইনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একটি হলো, রেজিষ্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৪৭ ধারা এবং আরেকটি হলো সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৪৮ ধারা। আইনের এ দুটি ধারায় প্রতারক কর্তৃক সৃষ্ট উক্ত সমস্যার সমাধান দেয়া আছে।

রেজিষ্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৪৭ ধারা অনুযায়ী, যে দলিলটি পূর্বে সম্পাদিত হয়েছে সে দলিল টিই কার্যকর হবে। দলিল সম্পাদনা মানে হলো, জমি বিক্রেতা বা দলিলদাতা যখন দলিল প্রস্তুত করে ২ জন স্বাক্ষী ও সনাক্তকারীর সম্মুখে প্রত্যেকে স্বাক্ষর করবেন তখন দলিলটি প্রাথমিকভাবে সম্পাদিত হয়। পরবর্তীতে উক্ত দলিল টি ০৩ (তিন) মাসের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন করা যায়। কোন কারনে ৩ মাসের মধ্যে সম্পাদিত দলিলটি রেজিষ্ট্রেশন না করা গেলে জরিমানা দিয়ে পরবর্তীতে আরো ৪ মাস সময় বাড়ানো যায়। রেজিস্ট্রেশন এর জন্য দলিল প্রস্তুত করে রেজিস্ট্রার বা সাব রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করতে হয়। রেজিস্ট্রার বা সাব রেজিস্ট্রার উক্ত দলিল দেখে এবং সেখানে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয় ঠিকঠাক থাকলে দলিলটি রেজিষ্ট্রেশন করে দিবে এবং সিল মেরে দিবেন। বর্তমানে অনিবন্ধিত দলিলের কোন মূল্য বা ভিত্তি নেই। রেজিষ্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৪৭ ধারা অনুযায়ী, যে দলিলটি পূর্বে সম্পাদিত হয়েছে সে দলিল টিই কার্যকর হবে।

সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৪৮ ধারা অনুযায়ী সময়ের দিক থেকে যিনি আগে দলিল সম্পাদনা করবেন তিনিই প্রাধান্য পাবেন।

যেহেতু, আইন অনুযায়ী দলিল রেজিষ্ট্রেশনের জন্য ৩ মাস প্রকারান্তরে ৭ মাস সময় পাওয়া যায় আর প্রতারকগণ এই সুবিধা নিয়ে থাকে।

সুতরাং, আমরা জানলাম রেজিষ্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ৪৭ ধারা এবং সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৪৮ ধারা অনুযায়ী, যে দলিল টি আগে সম্পাদিত এবং রেজিস্টার্ড হবে সেটিই কার্যকর হবে ও প্রাধান্য পাবে।

33 thoughts on “জমি দুই বার বিক্রি ২০২৪ । সম্পত্তি বিক্রির আগের দলিল নাকি পরেরটি টিকবে?

  • আচ্ছা, বোনের ভাগের জমি , ভাইয়ে বিক্রি করে খাইছে ১৯৮০/৮৬ সালে কিন্তু এখনো দেখা যাচ্ছে ,যে বোনের নামে রেকর্ড হয়েছে, এক্ষেত্রে বোন কি সেই জমি বিক্রি করতে পারবেন,,,একটু বলবেন।

    Reply
      • একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন

        Reply
        • আসসালামুআলাইকুম স্যার আমি জানতে চাচ্ছি আমার ৭.৩০ জমি ক্রয় করেছিলাম ২৮ বছর আগে কিন্তুু ক্রয় এর ১৫ বছর আগের একটি দলিল আছে এখন আমি বিক্রি করতে গেলে হুমকি দিচ্ছে । কিন্তুু আমার কাগজ পত্র এ টু জেড ওকে জানালে উপকৃত হতাম ধন্যবাদ প্রিয়

          Reply
          • দলিলটির নকল উঠিয়ে দেখুন। যদি দলিল ভূয়া বা দাগ নম্বর বা অন্য কোন তথ্য ঠিক না থাকে তবে আপনার দলিল বলবৎ থাকবে। আর ইচ্ছে করলেই জমি কেউ দখল নিতে পারবে না যদি আপনার দখলে থাকে।

          • সার একটি জমি Cs rs bs খতিয়ানে 18 শতক নকশায় 16 শতক এখানে rs মালিক দুইজন কিন্ত bs খতিয়ানে যথাক্রমে 9.4.3.2 এভাবে 18শতক খতিয়ান হয় কিন্ত 9 শতক একজন আগে বিক্রয় এরপর 3 শতক 4 শতক এবং সর্বশেষ 2 শতক এখন কীভাবে ভাগ হবে কি আগের দলিল টিকবে না হিস্যা হিসাবে নিতে হবে?

          • ৪,৩,২ এর মোট ৯ অর্থাৎ ৮ এর অংশ। ৮/৯ = .৮৮৮ দিয়ে ৪,৩ ও ২ কে গুন দিতে হবে। ৩.৫৫ অংশ পাবে ৪ এর মালিক। এভাবে বের করে নিবেন।

        • ২২.০৪.২০২৩ তারিখে আমি একটি জমি ক্রয় করি এবং মিউটেশন করে ১৪৩০ সাল পর্যন্ত খাজনাও পরিশোধ করেছি এখন শুনছি ঔ জমির নাকি আগের দলিল আছে। দয়াকরে পরামর্শ দিলে উপকৃত হবো।

          Reply
          • আগের দলিল বৈধ কিনা সেটি দেখতে হবে। নকল উঠিয়ে দেখুন। রেজিস্ট্রেশন করা দলিল না থাকলে আপনারটি কার্যকর হবে। যদি বৈধ হয় তবে আপনার ক্রয় বাতিল হবে।

  • দলিল কাকে বলে এই তা জানালে ভালো

    Reply
      • স্যার পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি পুকুর নাল সহ মোট ৪ দাগে সম্পওি৷ এক ভাই সবার প্রথমে বাড়ি আর পুকুর দিয়ে কম বিক্রি করে দিয়ে নালে দিয়ে বেশি বিক্রি করে দিয়েছে। এবং নামজারিও হয়েছে। অন্য দিকে অপর ভাই ঠিক একই দলিল করে আরেক ভাইকে সম্পওি হস্তান্তর করে। এখন এর সমাধান কি? জমির দখল পরবর্তীতে যিনি দলিল করেছিল তার হাতে

        Reply
        • দলিলে যদি চারটি দাগই উল্লেখ থাকে তবে সুনির্দিষ্ট করে নিয়ে বাটয়ারা করে নিতে হবে। কাতে করা দলিল থাকলে মিউচুয়ালী বাটোয়ারা দলিল করে ভোগ করতে হবে। কোন ভাই বেশি বিক্রি করলে সেটি কার্যকর হবে না। তা সে নামজারিই হোক বা অন্য কিছু।

          Reply
  • অনেক ভালো হইসে , পরে অনেক উপকার হইসে

    Reply
      • একটি জমি 30 বছর আগে নাবালক সুত্রে বিক্রি করেছে নাবালক 30 বছর পর সাবালক সুত্রে বিক্রি করেছে অন‍্য জন কে সে খেত্রে মালিক কে

        Reply
        • সাবালক থাকাকালীন যে বিক্রি হয়েছে সেটি বৈধ হবে।

          Reply
  • অনেক ইনফরমেশন আছে এইখানে অনেক ধন্যবাদ

    Reply
  • আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুলিল্লাহ। স্যার আমার একটা প্রশ্ন আছে, পিতা তার ২য় স্ত্রীর নাবালক ছেলেকে সম্পত্তি হেবা দলিল করে দিয়েছেন 1984 সালে। সেই পিতার পরবর্তীতে টাকার বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায়, সেই জমি ১ম স্ত্রীর বড় ছেলের কাছে বিক্রয় করেন 1996 সালে। বড় ছেলে এককালীন দানপত্র দলিল করে নেন এবং জমি নামজারি করে নিয়েছেন। সেই জায়গায় বাড়ি তৈরি করেন ও দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছেন। বর্তমানে ঐ পিতা মারা যাওয়ায়, ঐ ছোট ছেলে দলিল নিয়ে আসছে তাকে অনেক আগেই জমি দলিল করে দিয়েছেন, বড় ছেলে জমি ক্রয় করে খারিজ করে বাড়ি করে বসবাস করছেন। তাই জমি দিতে রাজি নন। আমি কিছু মিডিয়ায় দেখেছি হেবা দলিলের জমি দখল বুঝে নিতে হয়। এখন জমি বড় ছেলের কাছে দখলে স্যার এখানে আইন কি বলে, বড় ছেলে পাবে নাকি ছোট ছেলে পাবে পরামর্শ চাই?

    Reply
    • বর্তমান আইনে বড় ছেলেই ভোগী কিন্তু নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে পূর্বে দলিল অর্থাৎ ছোট ছেলের দলিল কার্যকর হতে পারে যদি সঠিক নিয়মে রেজিস্ট্রেশন করে থাকেন। নাবালকের বরাবর হেবা বিষয়ক ঘোষণাপত্র দলিল করার নিয়ম যদি প্রতিপালন করে থাকে তবে পূর্বে দলিল কার্যকর হইবে।

      Reply
  • যদি কোন ব্যক্তি তার ক্রয়কৃত জমি প্রথমে নিজের স্ত্রীর নামে হেবা বা দানপত্র করে তার কিছুদিন পর উক্ত স্বামী সেই অংশ টুকুই অন্যত্র সাব কবলা দলিলে বিক্রয় করেন। তবে জমি কে পাবেন।
    উল্লেখ: জমির হাল রেকর্ড হয়েছে সাব কবলা গ্রহীতার নামে। কিন্তু সেই স্ত্রী দানপত্র দলিলে জমির দাবিদার।

    Reply
    • স্ত্রী হেবা জমি দাবী করলেও স্বামী জীবিত থাকলে তা ফিরে পাবে না। কারণ স্বামী হেলা বাতিল করতে পারে। তবুও ভূমি অফিসে হেবা দলিল দিয়ে প্রাপ্যতা দাবী করতে বলুন। এমন প্রতারণার মিমাংসা করা যেতে পারে।

      Reply
    • একিই মালিক একই দাগে দুইটি খতিয়ানে ১৩ শতাংশ জমির মালিক। একটি খতিয়ান ১৮১৩ মালিকের মালিকানা ৯ শতাংশ। অপর খতিয়ান ২২৩২ জমির পরিমান ৪ শতাংশ উভয় খতিয়ানের দাগ নং ৫৭৬৮। এখন মালিক ২২৩২ খতিয়ানের ৪ শতাংশ জমি ১৯৯৭ সালে বিক্রি করেন। আবার একই মালিক ২০০০ সালে ১৮১৩ খতিয়ান থেকে ৫ শতাংশ এবং ২২৩২ খতিয়ান থেকে ৪ শতাংশ জমি বিক্রি করেন এখন দ্বিতীয় দলিল সম্পূর্ন জমি পাবে কি না

      Reply
      • দ্বিতীয় দলিল টিকবে। যদি দুটি খতিয়ান ও দাগ উল্লেখ করে দ্বিতীয় ক্রয় করে থাকে তবে অন্য দাগ থেকে জমি নেবে।

        Reply
  • ভাইয়ের মেয়েকে হেবা করে দেয়ার পর হেবা দান কারী ঐ জমি পুনরায় বিক্রয় করেছে। হেবা দান কারী মারা যাবার পর হেবা গ্রহিতার ওয়ারিশ ঐ জমি নিজ নামে খারিজ করে পুনরায় অন্যত্র বিক্রয় করেছে । বর্তমান গ্রহিতা নিজ নামে খারিজ করে খাজনাদি হালনাগাদ করেছে । এখানে মুল মালিক কে হবে?

    Reply
    • মূল মালিক ভাইয়ের মেয়ে। কারণ হেবাকারী হেবা বাতিল না করেই জমি বিক্রি করেছে।

      Reply
  • কাউকে হেবা বেল এওয়াজনামা করার পর হেবা দান কারী ঐ জমি পুনরায় অন্যত্র বিক্রি করেছে। হেবা দানকারী মারা যাবার ২৫ বছর পর হেবা গ্রহীতার ওয়ারিশ নিজ নামে খারিজ করে তা অন্যত্র বিক্রি করেছে। নতুন গ্রহীতা নিজ নামে তা খারিজ করে খাজনাদি পরিশোধ করে আসছে। এখানে বর্তমান মালিক কে ?

    Reply
    • হেবা বাতিল না করে থাকলে প্রথম হেবা গ্রহণকারী মালিক।

      Reply
      • আসসালামু আলাইকুম
        (আর ও আর মূলে দুই ভাই মালিক
        আর ও আর এর চারটি দাগ আছে ২ একর জমি)

        (নিলামের বয় নামা মূলে দুই ভাই সমান মালিক
        মোট চারটে দাগ ২ একর জমি)

        নিলামের বয়নামা+আর ও আর (৪ একর জমি)

        নিলামের বয়নামা থেকে পাওয়া জমিনের ১ একর ৬০ এক ভাই একাই বিক্রি করে দিছে।
        আরেক ভাই চল্লিশ শতাংশ জায়গা পাইছে।

        আর ও আর থেকে পাওয়া সম্পত্তির ৬০ শতাংশ এক ভাই বিক্রি করে দিছে(যে ভাই নিলামের ওইখানে কম পাইছে)
        বাকি অংশ দুই ভাইয়ের নামে সমান সমান বি আরএস আসছে।
        যে ভাই এখানে কম পাইছে ওই ভাই এটা মানতে নারাজ।

        এখন আমার কথা হচ্ছে… দুই ভাই এর জায়গায় এক ভাই যে বিক্রি করে দিচ্ছে।
        আরেক ভাই কি ওই ভাইয়ের নামে যেইখানে জায়গা আছে ওইখানে দখল করতে পারবে??

        Reply
        • না। অংশের বেশি যে টুকু বিক্রি করছে সেটুকু টিকার কথা নয়। যে ভাই কম পাইছে সেই ভাই ক্লেইম করুন।

          Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *