অনেক সময় দেখা যায় যে, কারো একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হয়তো দীর্ঘদিন কোন প্রকার লেনদেনই হয় নি তবু সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বিভিন্ন ধরণের চার্জ কেটে নিয়েছে। এগুলো বন্ধ করতেই বাংলাদেশ ব্যাংক হিসাবের বিভিন্ন চার্জ বা ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। মূলত গ্রাহকদের সুরক্ষা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক এ উদ্দ্যোগ নিয়েছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের মনে করেন তাদের এই উদ্যোগ গ্রাহক বান্ধবই হবে।
ফি নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেন, ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের ঘোষিত আলাদা আলাদা Schedule of Charge থাকে। আর তাই একেক ব্যাংক একেকভাবে তাদের হিসাবের ফি নির্ধারণ করে থাকে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের জন্য একটি মাত্র সাধারণ Schedule of Charge নির্ধারণ করার কারণে এখন সব ব্যাংকের ফি বা চার্জ একই হবে। যার ফলে গ্রাহকরা সুবিধা পাবেন।
একই সাথে গ্রাহকদের যে কোন ব্যাংকে হিসাব খোলার আগে উক্ত ব্যাংকের বিভিন্ন ফি এবং চার্জ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তারপরই উক্ত ব্যাংকে হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ। ব্যাংক চার্জ ২০২২ । এটিকে যে কারণে অপরিচালন ব্যয় বলা যাবে না
ব্যাংক যে সকল ফি আদায় করে
প্রজ্ঞাপন অনুসারে ব্যক্তিগত এবং বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাবের ক্ষেত্রে যেসব ক্ষেত্রে যেসকল ফি আদায় করা যাবে সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১। গ্রাহকদের সঞ্চয়ী হিসাব খোলার জন্য ৫০০ টাকা এবং চলতি হিসাবের জন্য ১০০০ টাকা প্রাথমিক জমা হিসেবে সংশ্লিষ্ট হিসাবে জমা করতে হবে। তবে বিশেষ হিসাব (বিশেষ শ্রেণীর মানুষের ক্ষেত্রে যেমন: কৃষক হিসাব, স্টুডেন্ট হিসাব, পথশিশু হিসাব ইত্যাদি) খোলার ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য হবে না।
২। সঞ্চয়ী হিসাবে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জমা থাকলে কোন রক্ষণাবেক্ষণ ফি লাগবে না। তবে এর বেশি হলে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ১০০ টাকা, ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২০০ টাকা, ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২৫০ টাকা এবং এর চেয়ে বেশি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ ফি আদায় করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
চলতি হিসাবের (Current Account) ক্ষেত্রে প্রতি ৬ মাসে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা এবং স্পেশাল নোটিশ ডিপোজিট হিসাবের (SND) ক্ষেত্রে প্রতি ছয় মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেয়া যাবে।
তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাবের ক্ষেত্রে যেমন: কৃষক হিসাব, স্টুডেন্ট হিসাব, পথশিশু হিসাব ইত্যাদি এই ফি নেয়া যাবে না।
৩। ব্যাংকের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় Account Transfer এর ক্ষেত্রে একই শহরে হলে ৫০ টাকা এবং অন্য জেলার শাখায় হলে ১০০ টাকা ফি আদায় করা যাবে।
৪। সঞ্চয়ী হিসাব সক্রিয় (Inactive Account থেকে Active) করতে কোন ধরণের ফি আদায় করা যাবে না।
৫। বিভিন্ন মাসিক সঞ্চয়ী হিসাব DPS, FDR বা অন্য কোন মেয়াদী আমানত মেয়াদ পূর্তির পূর্বে ভেঙ্গে ফেললে কোন নগদায়ন ফি আরোপ করা যাবে না।
৬। হিসাব বন্ধ করার ক্ষেত্রে সঞ্চয়ী হিসাবে ২০০, চলতি হিসাবে ৩০০ এবং এসএনডি হিসাব বন্ধ করতে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।
৭। যে সকল হিসাবের বিপরীতে চেক বই ইস্যু করা হয়ে সেসকল হিসাবে চেক ইস্যু ফি খরচের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
৮। বিভিন্ন ধরণের চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবে ন্যূনতম ব্যালেন্স ফি, ইনসিডেন্টাল চার্জ, লেজার ফি, সার্ভিস চার্জ, কাউন্টার ট্রানজেকশন ফি বা অনুরূপ ফি আদায় করা যাবে না।
৯। বছরে দুবার হিসাবের স্থিতি নিশ্চিতকরণ সনদ বা ব্যালেন্স কনফার্মেশন সার্টিফিকেট নেয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ফি দিতে হবে না। তবে ২ বারের বেশি নিতে চাইলে প্রতিবার ১০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।
১০। সচ্ছলতা সনদ বা সলভেন্সি সার্টিফিকেট নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবার ২০০ টাকা করে ফি দিতে হবে।
১১। চেক ফেরতের ক্ষেত্রে প্রতিবার সর্বোচ্চ ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।
১২। বিও অ্যাকাউন্টের জন্য বিও সনদ পেতে ১০০ টাকা দিতে হবে।
১৩। পেমেন্ট অর্ডার Stop Payment বা স্থগিত করলে প্রত্যেকবার অনুরোধে ৫০ টাকা দিতে হবে।