মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন । মৃত ব্যক্তি রেখে গেল বাবা, এক স্ত্রী, দুই ভাই ও এক মেয়ে, ভাগাভাগি কিভাবে?

বাবা ও অবশিষ্টভোগী ভাই -এখানে স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবেন এবং একক কন্যা হিসেবে মোট সম্পদের অর্ধাংশ পাবেন সেখানে তারা বঞ্চিত হতে পারে না– মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন

সম্পত্তি বন্টন নিয়ে ঝামেলা কি? –জনাব বাকের ৪৫ বছর বয়সে হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গেল। তিনি কৃষিকাজ করতেন এবং ৩৩০ শতাংশ জমি ও বসত বাড়ি রেখে গেছেন। উত্তরাধিকারী হিসেবে গেছেন বাবা, স্ত্রী শাবানা, দুই ভাই জামালা ও কামাল ও এক মেয়ে কবিতা। বাকেরের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ও মেয়েকে কোন সম্পত্তির ভাগ দিয়ে চাচ্ছে না বাবা ও ভায়েরা, একন অসহায় অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে শাবানা বাপের বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। আসলেই কি তিনি কোন সম্পত্তির ভাগ পাবে না?

এডভোকেট ছাড়া কি অংশ সম্পর্কে জানা যায় না? যায়। কোন আইনজীবী বা কোন জানুয়া ব্যক্তির নিকট না গিয়েও এখন আপনি সরকার ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে হিসাবটি করতে পারেন। অংশ পাবে কি পাবেনা সেটিও জানতে পারেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, আপনি অংশও দেখতে পারবেন এবং সে মোতাবেক বিধিও জানতে পারবেন। উত্তরাধিকার.বাংলা ক্যালকুলেটরটি আপনার জন্য বিধি খুজেঁ বের করবেন এবং অংশ দেখাবে।

কন্যা তাহলে ৯০ শতাংশের মধ্যে কত অংশ পাবে? স্ত্রী এবং কন্যাকে অংশ বা হিস্যা প্রদানের পর পিতা ও ভাইয়েরা অংশ পাবেন। তাই এ কথা সম্পূর্ণ ভুল এবং নীতি বর্হিভূত যে, স্ত্রী ও কন্যা কোন অংশ পাবে না। চলুন বিধি জেনে নিই, স্ত্রী ১/৮ অংশ পাবে যখন সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে। কন্যা ১/২ অংশ পাবে যখন একজন মাত্র কন্যা থাকে এবং পুত্র না থাকে। পিতা ১/৬ অংশ পাবে যখন সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকে। পিতা একমাত্র অবশিষ্ট ভোগী হিসেবে অবশিষ্ট সম্পতির উত্তরাধিকারী হয়। যেখানে একমাত্র কন্যা হিসেবে মোট সম্পদের অর্ধেক পাবেন সেখানে তাকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ অন্যায় তাই কন্যা এবং স্ত্রী বঞ্চিত সম্পদের জন্য মামলা করতে পারবেন।

উত্তরাধিকার.বাংলা-এক ক্লিকেই সম্পত্তির হিসাব / শুধুমাত্র অংশীকার সিলেক্ট করে জমির পরিমান উল্লেখ করে ফলাফল ক্লিক করুন ব্যাস। মোট কথা কোন বিধি বিধান না জানলেও আপনি হিস্যা বের করতে পারবেন।

কোন নারী বা পুরুষের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে মৃতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের খরচ, দেনাশোধ বা মৃতব্যক্তি যদি কোন উইল সম্পাদন করে যান তবে তা হস্তান্তরের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে তার উপর মৃতের সন্তান সন্তানাদি ও আত্মীয় স্বজনের যে অধিকার জন্মায় তাকে উত্তরাধিকার বলে। বাবা থাকার কারণে ভাইয়েরা এখানে কোন সম্পত্তিই পাবে না।

মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন । মৃত ব্যক্তি রেখে গেল বাবা, এক স্ত্রী, দুই ভাই ও এক মেয়ে, ভাগাভাগি কিভাবে?

Caption: uttaradhikar.Bangla Calculator

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী স্ত্রী কি সম্পত্তির উত্তরাধিকার? অবশ্যই উত্তরাধিকার হিসেবে গন্য হবে

  1. মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে ৩ শ্রেণীর মধ্যে অংশীদারগণই প্রধান উত্তরাধিকার। কোরআনে নির্ধারিত অংশ তাদেরকে দেয়ার পর যদি সম্পত্তি থাকে তবে তা অন্যদের মধ্যে বন্টন করতে হবে অর্থাৎ

  2. অংশীদারগণ সকল উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অগ্রাধিকার পান। অংশীদারগণের মধ্যে স্ত্রী অন্যতম।
  3. মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে নিচের ৬ জন কোন অবস্থায়ই উত্তরাধিকার হতে বাদ যায় না- স্ত্রী/স্বামী, ছেলে, মেয়ে, পিতা, মাতা। উল্লেখ্য, স্বামীর অবর্তমানে স্ত্রী এবং স্ত্রীর অবর্তমানে স্বামী সম্পত্তি পাবেন।
  4. মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে মোট ১২ জন অংশীদার আছেন। তাদের ৪ জন পুরুষ এবং ৮ জন নারী। পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, কন্যাসহ অন্যরা হলেন-দাদা, পুত্রের কন্যা, দাদী বা নানী, আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন, বৈপিত্রেয় ভাই, বৈপিত্রেয় বোন।
  5. মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র বা পুত্রের পুত্র, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে বাবা ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬) পাবেন।
  6. পুত্র, পুত্রের পুত্র না থাকলে কিন্তু কন্যা, পুত্রের কন্যা থাকলে ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন এবং তাদের দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তাও পাবেন।
  7. মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে অন্যান্য অংশীদারদের দেয়ার পর বাকী সমস্ত সম্পত্তি পিতা পাবেন।
  8. মৃত ব্যক্তির মাতা তিনভাবে উত্তরাধিকার লাভ করতে পারেন– মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে অথবা যদি পূর্ণ, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকলে এবং যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) পাবেন। কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকলে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকলে এবং যদি মৃত ব্যক্তি স্বামী বা স্ত্রী হয়, তবে তার স্বামী বা স্ত্রী, মাতা ও পিতা উত্তরাধিকারী হলে সেই স্বামী বা স্ত্রীর অংশ বাদ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) মাতা পাবেন। মৃত ব্যক্তির এক ভাই থাকলেও মাতা ১/৩ অংশ পাবেন।

  9. স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন- সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকলে স্বামী স্ত্রীর সম্পত্তির চারভাগের একভাগ (১/৪) পাবেন। যদি সন্তান বা সন্তানের সন্তান, যত নিম্নের হউক, না থাকে তাহলে স্বামী মোট সম্পত্তির দুই ভাগের এক ভাগ (১/২) পাবেন।
  10.  স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন- সন্তান বা পুত্রের সন্তান, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) পাবেন। যদি সন্তান না থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) পাবেন। এখানে উল্লেখ্য, যদি মৃতের একাদিক স্ত্রী থাকেন তাহলে কোরআনে বর্ণিত অংশ স্ত্রীদের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ হবে।
  11. মৃত ব্যক্তির ছেলে / ছেলেরা সকল ক্ষেত্রেই সম্পত্তি লাভ করবেন। যেক্ষেত্রে মৃতব্যক্তির ছেলে ও মেয়ে বর্তমান সেক্ষেত্রে ছেলে/ ছেলেরা, মেয়ে বা মেয়েদের দ্বিগুন সম্পত্তি পাবেন। মৃতব্যক্তির সম্পত্তিতে পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী নির্দিষ্ট সম্পত্তি পাওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্টন করা হবে। তবে মেয়ে না থাকলে অংশীদারদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে বাকী সম্পূর্ণ সম্পত্তি ছেলে পাবে।
  12. উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে মেয়ে তিনভাবে সম্পত্তি পেতে পারেন-ক. একজন কন্যার অংশ দুইভাগের একভাগ (১/২) খ. একাধিক মেয়ে হলে সকলে মিলে সমানভাবে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) পাবে। গ. যদি পুত্র থাকে তবে পুত্র ও কন্যার সম্পত্তির অনুপাত হবে ২:১ অর্থাৎ এক মেয়ে এক ছেলের অর্ধেক অংশ পাবে।
  13. মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন সন্তানকে ত্যাজ্য করা যায় না। ফলে সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিতও করা যায় না। তবে কোন ব্যক্তি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে গেলে এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে সন্তানের অংশ উল্লেখ না করে গেলে ঐ সন্তান সম্পত্তি পাবে না।
  14. উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে জানার পর শাবান তার অংশের সম্পত্তির দাবি করেন। সে বাকের সাহেবের সম্পত্তির ১/৮ বা ৩/২৪ অংশ পায়, মেয়ে পায় সম্পত্তির ১/২ বা ১২/২৪ অংশ এবং বাবা অংশীদার হিসেবে ১/৬ বা ৪/২৪অংশ ও অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে ৫/২৪ অংশ (বাবা মোট পায় ৯/২৪ অংশ)। বাবা থাকায় এক্ষেত্রে ভাইয়েরা কোন সম্পত্তি পায় নি। 

অবশিষ্টভোগী কাদেরকে বলা হয়?

যে নির্দিষ্ট আইন দ্বারা মৃতের সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টন করা হয় তাকে উত্তরাধিকার আইন বলে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে ৩ শ্রেনীর উত্তরাধিকার আছে। যেমন : অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী, দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ। যে উত্তরাধিকারীদের অংশ কোরআনে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তারাই অংশীদার।  কোরআনে নির্দিষ্ট অংশীদারদের সম্পত্তি বন্টনের পর মৃতের সাথে যাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে এবং অবশিষ্ট সম্পত্তিতে যাদের অধিকার রয়েছে তারাই অবশিষ্টাংশ ভোগী।  যাদের সাথে মৃতের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তারা অংশীদার বা অবশিষ্টাংশভোগী নয় তারাই মৃতের দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ। যদি মৃতের অংশীদার এবং অবশিষ্টাংশ ভোগী উত্তরাধিকার না থাকে তাহলেই কেবল মৃতের দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ সম্পত্তি পাবেন।

সূত্র দেখুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *