ঘাড় ব্যাথা – সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঘাড় ব্যাথা অনুভব করছেন? হ্যাঁ শীতের সময় ব্যাথার প্রকোপটি বেড়ে যায়। যদি আপনার ঘাড় ব্যাথা, পিঠ ব্যাথা এবং কোমড় ব্যাথা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে এবং তার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে সাম্যক ধারণা নিতে চান তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য প্রযোজ্য।

প্রথমেই জেনেই নিই ঘাড় ব্যাথা বা পিঠ ব্যাথার কারণ, আপনার জীবনের যাপনের ধরণ কি এবং খাদ্যাভ্যাস কি তা আগে বিশ্লেষণ করুন। পুষ্টিকর ও সুষম খাবার না খেলে যে কোন ধরনের ব্যাথার উদ্রেগ হতে পারে। দ্বিতীয়ত কাজের ধরণ আপনি যদি অফিসিয়াল কাজে কম্পিউটার ব্যবহার করেন এবং তা বিরতিবিহীন দীর্ঘ সময় ধরে এবং এক নাগাড়ে তবে আপনার ঘাড়ে ব্যাথা হতেই পারে। কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঘাড় বাকা করে বা সামনের দিকে ঝুকে যদি আপনি দীর্ঘদিন কম্পিউটার ব্যবহার করেন তবে ঘাড়ে ব্যাথা হতে পারে।

ঘাড় ব্যাথার সাথে পিঠের উপরের দিক একই কারণে ব্যাথা হতে পারে। পিঠ কুজো হয়ে বা সামনের দিকে বাকা হয়ে কম্পিউটার ব্যবহার অথবা বিছানায় বসে সমানের দিকে ঝুকেঁ ল্যাপটপ ব্যবহার করলে ঘাড় এবং পিঠ ব্যাথা হতে পারে। কোমড় ব্যাথার কারণও মোটামুটি একই কারণে হতে পারে।

ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যাথায় যা করবেন / পিঠের উপরের অংশ ব্যাথায় করণীয়

ব্যাথা হঠাৎই শুরু হতে পারে অথবা দীর্ঘ সময় একই ভাবে কাজ করলে ঘাড় ব্যাথা বা পিঠ ব্যাথা অস্বাভাবিক নয়।

ঘাড় ব্যাথায় করণীয়

Caption: ঘাড়, পিঠ ও কোমড় ব্যাথায় করণীয় কি এবং কি কারণে ব্যাথাটি হচ্ছে সেটি আগে নির্ণয় করতে হবে।

ঘাড়, পিঠ ও কোমড় ব্যাথায় যা যা করতে পারেন।

  1. প্রথমত ঘাড়, পিঠ ও কোমড় ব্যাথার কারণটি প্রথমে আপনাকেই চিহ্নিত করতে হবে। ডাক্তার হয়তো টেস্ট করে কিছুটা জানাতে পারবে কিন্তু আপনার জীবন যাপনের তথ্য কেবল আপনিই জানেন। লাইফ স্টাইল ঘাড়, পিঠ ও কোমড় ব্যাথার অন্যতম কারণ।
  2. কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহারের চেয়ার ফেক্সিবল হলে ভাল এবং মনিটর বরাবর চোখ রেখে কাজ করতে চেষ্টা করুন।
  3. ব্যাথার স্থানা মালিশ বা গরম পানির ছ্যাক বা হট ব্যাগের ছ্যাক নিন, ব্যাথা করে যাবে।
  4. বিছানায় শোয়ার সময় ঠিক ঘাড়ের নিচে বালিশ রাখুন। প্রয়োজনে মাথা থেকে টেনে নিচে এনে ঘাড় বরাবর বালিশ রাখুন।
  5. পারলে শক্ত বিছানায় ঘুমানোর চেষ্টা করুন। নরম বিছানা ব্যাথার জন্য অনেকটা দায়ী।
  6. ব্যাথা নাশক ঔষুধ সেবুন করুন, যেমন প্যারাসিটামল জাতীয়। তবে বেশি ব্যাথার ঔষুধ খাবেন না কারণ এটি কিডনী বিকল করে দিতে পারে।
  7. মনে রাখবেন ঔষুধ মাত্র ২০% নিরাময় দেয়, এসব ক্ষেত্রে ৮০% নিরাময় আসে আপনার লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে। যেমন আপনি ব্যায়ামের অভ্যাস করে তুলুন। ইয়োগা বা হিট এক্সারসাইজ ইত্যাদি কিছু কিছু চেষ্টা করুন।
  8. কম্পিউটার বা বসা কাজ হতে আপনি কিছুক্ষন পর হতে বিরতি দিন। যেমন ধরুন, ১৫-৩০ মিনিট কাজ করার পর আপনি উঠে একটু ঘুরে এসে আবার কাজে বসুন।
  9. ব্যাথা নিরাময়ে আপনার উদ্যোগটিই অনেক বড়, তাই ডাক্তারের উপর ভরসা না করে আপনি নিজের উপর ভরসা রাখুন এবং নিজে নিজেই চেষ্টা করতে থাকুন।
  10. ভাল ঘুম নিশ্চিত করা ছাড়া আপনি বিভিন্ন ব্যাথা কমাতে পারবেন না।
  11. শেষ কথাটি হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার খান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

নিজেকে সুস্থ্য রাখতে প্রতিদিন কি করা উচিত?

এই প্রশ্নটি সহজ এবং সিম্পল উত্তর হচ্ছে, পুষ্টিকর খাবার খান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠুন এবং যত তারাতারি পারেন ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত ১০ টার পর কোন ভাবে জেগে থাকবেন না। ছোট বেলায় আপনিও পড়েছেন, “Early to Bed, Early to Raise”। তাই যত দ্রুত ঘুমাবেন তত দ্রুতই আপনি ঘুম থেকে উঠবেন, প্রডাক্টটিভিটি বাড়াতে এবং নিজেকে সুস্থ রাখতে আপনাকে ভাল ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। ভাল ঘুম, পুষ্টিকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে আপনি অবশ্যই দীর্ঘদিন সুস্থ্য থাকবেন। মনে রাখবেন ৩০ পেরোলে আপনাকে আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হতেই হবে। অন্যথায় আপনার শরীর ভেঙ্গে পড়বেন। ছোট বেলায় সকল বেলায় ১০ ঘুম থেকে উঠলেও তেমন ক্ষতি হবে না কিন্তু ত্রিশ পেরোলে ৭টার পর ঘুম থেকে উঠলেই শরীরে রোগ ব্যাধি বাসা বাধবে। তাই তারাতারি ঘুমিয়ে পড়ুন এবং খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করুন, সুস্থ্য জীবনযাপন করুন।

সূত্র: প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন