ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই মোটরসাইকেল বা বাইক খুব জনপ্রিয়। তরুন দের মধ্যে এ জনপ্রিয়তা আরো অনেক বেশি। দ্রুত গতি এবং স্বল্প মেইনটেইন খরচ হওয়ার কারনে মোটরসাইকেলের প্রতি আমাদের আকর্ষণ একটু বেশিই। একই সাথে এখানে আমাদের আবেগও কিছুটা জড়িত।
অন্যান্য অনেক দেশে কোন সিসি লিমিট নেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোটরসাইকেল রয়েছে। আর এজন্য মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে তাদের অনেক অপশন রয়েছে। তবে বেশ কিছু বছর ধরে বাংলাদেশে সিসি লিমিট থাকার কারনে চাইলেও বাইরের দেশ থেকে পছন্দের ক্যাটাগরি এবং সিসির বাইক ইমপোর্ট করতে পারা যাচ্ছে না। বর্তমানে আমাদের দেশে ১৬৫ সিসির বাইকের অনুমোদন রয়েছে। তবে, সিসি লিমিট বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা যদি সবশেষে সরকারী নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় তবে অনেক ভালো ভালো বাইক এদেশে আসবে। অন্যদিকে উচ্চ ট্যাক্সের কারণে অন্য যে কোন দেশের তুলনায় আমাদের এখানে দামও অনেক বেশি। আর এ কারনে পছন্দের মোটরসাইকেল কিনতে গিয়ে প্রায়ই আমরা দ্বিধাদন্দে ভোগি। আর এ কারনেই আজ আমরা জানবো বাংলাদেশের সেরা ১০ টি বাইক কি কি? এক্ষেত্রে দাম, মেইনটেনেন্স খরচ ও অন্যান্য কিছু বিষয় বিবেচনায় নেয়া হবে। Bajaj Discover 125 Service manual Bangla pdf । ডিসকভার সার্ভিস ম্যানুয়াল বুক ২০২২
আমাদের আজকের এ লেখায় আপনি বাংলাদেশের সেরা ১০ টি বাইক সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং আপনার পছন্দ অনুযায়ী পছন্দের বাইকটি কিনে নিতে পারেন।
সূচীপত্র
১. Yamaha R15 V 3.0 & V 4.0
তালিকার প্রথমেই আছে Yamaha R15। এটি স্পোর্টস সেগমেন্ট এর বাইক। Yamaha R15 সিরিজকে বাংলাদেশের সব থেকে সুন্দর বাইক বলা যেতে পারে। R15 v3 এর জনপ্রিয়তার পর এর পরবর্তী ভার্সন V 4.0 রিলিজ হয়েছে যা বর্তমানে আমাদের দেশেও পাওয়া যাচ্ছে। Yamaha R15 সিরিজটি আমাদের দেশের তরুনদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। এর অন্যতম কারন হলো এর আধুনিক ডিজাইন, লুকস, আধুনিক টেকনোলজি। এ বাইকের অন্যতম আরেকটি এক্সট্রা ফিচার হলো VVA Technology। এই প্রযুক্তির জন্য এ বাইকের আরো চাহিদা বেড়েছে। এ প্রযুক্তির ফলে বাইকটি যখন ৭৫০০ কিলো তে চলে তখন VVA Technology চালু হয়। যেখানে উচ্চ গতিতে অন্যান্য বাইকের শক্তি কমতে থাকে, সেখানে VVA Technology এর জন্য Yamaha R15 এর গতি আরো বেড়ে যায়।
তবে Yamaha R15 এর সিটিং পজিশন একটু ভিন্ন রকম হওয়ায় দীর্ঘক্ষন চালাতে গেলে হাত প্রচন্ড ব্যাথা করে। অন্যদিকে স্পোর্টস বাইকের একদিকে দাম যেমন বেশি তেমন মেইটেনেন্স খরচও তুলনামূলক বেশি। সুতরাং বাইকটি কিনার আগে বিষয়গুলো মাথায় রাখুন।
স্পেসিফিকেশন
- দাম- 4,95,000 টাকা
- কালার- ঠান্ডার গ্রে, ডার্ক নাইট, রেসিং ব্লু
- ইঞ্জিন সিসি- 155 cc
- গিয়ার- 6 Speed
- মাইলেজ- 30 kmpl
- ওয়েট- 142 KG
- এবিএস- Dual Channel
- ব্রেকস- Double Disk
২. Honda CBR150R
Honda CBR150R একটি জনপ্রিয় স্পোর্টস বাইক। তবে বাংলাদেশে হোন্ডা CBR150R Indonesian ভার্সন আসার পর এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। দেশে এর অনেকগুলো কালার ভেরিয়েশন পাওয়া যাচ্ছে যার প্রতিটি কালারই আকর্ষনীয়। Honda CBR150R বাইকটি দেখতে যেমন সুন্দর এবং এর গতি অনেক আক্রমণাত্মক এবং Yamaha R15 এর সাথে প্রতিযোগিতা করার মতই । Honda CBR150R এর সিটিং স্টাইল অনেক অনেক কমফোর্টেবল এবং এই জায়গাতেই Honda CBR150R, Yamaha R15 এর তুলনায় এগিয়ে থাকবে।
অত্যাধিক দামের পাশাপাশি এর চেইন লুজ হয়ে যাওয়া সমস্যা টা পাওয়া যায়।
স্পেসিফিকেশন
- দাম- 5,50,000 টাকা
- কালার- নিট্রো ব্ল্যাক, রেসিং রেড, রেভুলেশন হোয়াইট, মটো জিপি এডিশন
- ইঞ্জিন সিসি- 155 cc
- গিয়ার- 6 Speed
- মাইলেজ- 30 kmpl
- ওয়েট- 142 KG
- এবিএস- Single Channel
- ব্রেকস- Double Disk
৩. Suzuki GSX R150
সুজুকি একটি ইন্টারন্যাশনাল ব্রান্ড। সুজুকি বাইক গুলো সার্ভিস এবং স্টাইলের দিক দিয়ে সেরা। তাছাড়া সুুজুকি শুধু বাংলাদেশে না সারা পৃথিবীতে এক নামে পরিচিত। রাস্তায় এই বাইক গুলোকে গতি দানব বলা যায় । যাহোক Suzuki GSX R150 একটি স্পোর্টস বাইক আর এ কারনে এর পিলিয়ন বা পেছনের ছিট টা অনেক উঁচু এবং ছোট। স্পোর্টস বাইক পিলিয়ন কে গুরুত্ব দিয়ে বানানো হয় না বিধায় এখানে দীর্ঘক্ষন বসে থাকা খুবই কস্টকর। বিশেষ করে বয়স্ক মহিলা বা পরিবারের সদস্য নিয়ে বসা একে বারেই অসম্ভব। তবে সাইজে ছোট, স্পোর্টস বাইক এবং গতি দানব হিসেবে এই বাইকের তুলনা হয়না।
স্পেসিফিকেশন
- দাম- 3,50,000/3,79,950(ABS) টাকা
- কালার- টাইটান ব্ল্যাক, স্ট্রং রেড, ব্রিলিয়ান্ট হোয়াইট, ম্যাটেলিক ট্রিটন ব্লু, ম্যাটি ব্ল্যাক
- ইঞ্জিন সিসি- 147.3 cc
- গিয়ার- 6 Speed
- মাইলেজ- 45 kmpl
- ওয়েট- 131 KG
- এবিএস- Single Channel
- ব্রেকস- Double Disk
৪. Taro GP-1
Taro GP-1 একটি স্পোর্টস ক্যাটাগরি বাইক। এই বাইকটি বাংলাদেশে অল্প কিছুদিন আগে থেকে পাওয়া যাচ্ছে, এটি আমদানী করেছে টারো বাংলা নামক একটি প্রতিষ্ঠান। Taro GP-1 বাইকটি দেখতে অনেক মাসকুলার এবং স্টাইলিশ। একই সাথে এটি রাইড করতে অনেক কমফোর্টেবল তবে বাইকটি অনেক বড় এবং ভারী একটি বাইক।
স্পেয়ার পার্টস সব জায়গায় পাওয়া যায় না এবং পরবর্তীতে বিক্রয় করতে গেলে রিসেল ভ্যালু কম পাবেন।
স্পেসিফিকেশন
- দাম- 3,06,000/3,36,000 (Double Channel ABS) টাকা
- কালার- ব্ল্যাক
- ইঞ্জিন সিসি- 150 cc
- গিয়ার- 6 Speed
- মাইলেজ- 35 kmpl
- ওয়েট- 155 KG
- এবিএস- Single Channel
- ব্রেকস- Double Disk
৫. Honda CB150R Exmotion
Honda CB150R Exmotion একটি ন্যাকেট স্পোর্টস ক্যাটাগরির বাইক। বাইকটি ইতোমধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জনপ্রিয় বাইকটি বর্তমানে আমাদের দেশেও এভেইলএবল। এর ক্লাসিকাল লুকস যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। এটি ছোটখাট বাইক হলেও এতে পিলিওন নেওয়ার পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। এর আন্ডার ভ্যালি একজস্ট এবং এর সাউন্ড যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
এর দাম অত্যাধিক, ফুয়েল ট্যাংক ছোট (৮.৫ লিটার) এবং মেইনটেনেন্স খরচ বেশি। প্রতিটি স্পেয়ার পার্টসের দাম খুব বেশি।
স্পেসিফিকেশন
- দাম- 5,50,000 টাকা
- কালার- রেড, গ্রিন, গ্রে, ব্ল্যাক
- ইঞ্জিন সিসি- 150 cc
- গিয়ার- 6 Speed
- মাইলেজ- 50 kmpl
- ওয়েট- 123 KG
- এবিএস- Nil
- ব্রেকস- Double Disk
৬. Yamaha MT15
এটি একটি ন্যাকেড স্পোর্টস বাইক। ইয়ামাহার এই বাইকে লেটেস্ট টেকনোলজি ইউজ করা হয়েছে এমনকি এ বাইকে R15 এর সেইম ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। যা এর স্টাইল অনেক হাই ক্লাস করে তুলেছে। এটি একটি অ্যাডভান্স হাইপার ন্যাকেড এবং ডায়নামিক স্পোর্টস বাইক যার ট্যাগ লাইন হলো Dark Side of Japan। এটি রাইড করতে যেমন আরাম তেমন শহরের রাস্তায় মনস্টারের মত ছুটে চলে। বাংলাদেশে ACI Motors এর হাত ধরে Yamaha MT15 অফিসিয়ালি বাংলাদেশে রিলিজ হয়েছে।
স্পেসিফিকেশন
- দাম- 4,28,000 টাকা
- কালার- ডার্ক ম্যাটার ব্লু, ম্যাটেলিক ব্ল্যাক, হোয়াইট অরেঞ্জ
- ইঞ্জিন সিসি- 155 cc
- গিয়ার- 6 Speed
- মাইলেজ- 42 kmpl
৭. ইয়ামাহা FZS সিরিজ (V2, V3)
ইয়ামাহার অন্যতম সেরা মডেল FZS-V3 হলো বর্তমান সময়ে বাইক লাভারদের পছন্দ তালিকায় শীর্ষে থাকা একটি মোটরসাইকেল। ইয়ামাহা FZS-V3 বাইকটা তৈরি করা হয়েছে অসাধারন মাস্কুলার লুক দিয়ে যা সহজেই যে কারই মনযোগ কেড়ে নেওয়ার এবং এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাইকটার দিকে তাকিয়ে রাখার সক্ষমতা আছে। ইয়ামাহা FZS-V3 বাইকটি 149সিসি ইঞ্জিন দিয়ে চলে যা সর্বোচ্চ শক্তি ১৩.২ পিএস @ ৮০০০ আরপিএম উৎপন্ন করে এবং এর সর্বোচ্চ টর্ক ১২.৮ এনএম @ ৬০০০ আরপিএম এবং কোম্পানির তথ্য অনুসারে প্রতি লিটারে ৪৫ কিলোমিটার পথে চলে। ইয়ামাহা FZS-V3 এর বর্তমান দাম ২,৪০,৫০০ টাকা। ইয়ামাহা FZS-V2 বাইক টির ব্রান্ড ভ্যালু, অসাধারন মার্জিত ডিজাইন এবং উচ্চ প্রশংসিত পারফরমেন্স জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন। ইয়ামাহা FZS-V2 এর বর্তমান দাম ২,২৯,০০০ টাকা। Bajaj bike part price bd । ডিসকভার সহ বাজাজ বাইকের পার্টসের দাম ২০২২
৮. সুজুকি জিক্সার সিরিজঃ
বাংলাদেশে সুজুকি ব্রান্ডের বড় একটি অংশ জুড়ে আছে সুজুকি জিক্সার সিরিজ এবং তার থেকেও সাধারন বাইকারদের মনে জায়গা করে নিয়েছে সুজুকি জিক্সারের প্রায় প্রতিটা মডেলই। বর্তমানে সুজুকির জিক্সার সিরিজের প্রায় ৮ টি মডেল বাজারে আছে সর্বনিম্ন দাম ২,২৪,৯৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ দাম ২,৭১,৯৫০ টাকা।
৯. Pulsar 150 & Pulsar 160 NS
বাজাজ ইন্ডিয়ান একটি ব্যান্ড। তবে আমাদের দেশে বাজাজ অনেক পপুলার। কমিউটার সেগমেন্ট বাইক ক্যাটাগরিতে গ্রাম অঞ্চলে বেশ পপুলার পালসার। বাইকটি যে কোন বয়সী মানুষের সাথে মানিয়ে যায় আর তাই আমাদের দেশের সকল শ্রেনী/ বয়সের বাইক প্রেমীদের পছন্দের লিস্টে এই বাইক থাকবেই। মজার ব্যাপার হলো কোনভাবেই কেউই পালসার সিরিজের জনপ্রিয়টা দ্বিমত পোষন করতে পারবেন না।
স্পেসিফিকেশন
- দাম- 1,99,800 টাকা
- কালার- ব্লু, রেড, গ্রে
- ইঞ্জিন সিসি- 160 cc
- গিয়ার- 5 Speed
- মাইলেজ- 42 kmpl
- ওয়েট- 142 KG
- ব্রেকস- Single Disc
১০. হোন্ডা এক্স-ব্লেড
হোন্ডা কোম্পানীর ভরসা আর দামে সহজলভ্য এবং অত্যাধুনিক সব ফিচারস সমৃদ্ধ হউয়ার কারনে হোন্ডা এক্স-ব্লেড প্রায় সকল শ্রেনীর বাইকারের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। হোন্ডা হর্নেটের একচেটিয়া জনপ্রিয়তার পরে হোন্ডা এক্স-ব্লেড হোন্ডার আরেকটি বিশেষ সংস্করন যা খুব সামান্য সময়ের মধ্যে বেশ ভালভাবে বাজার ধরতে সক্ষম হয়েছে। হোন্ডা এক্স-ব্লেড ১৬২.৭১ সিসির ইঞ্জিন দ্বারা চালিত যা সর্বোচ্চ শক্তি উৎপন্ন করে ১৩.৯৩ বিএইচপি @ ৮,৫০০ আরপিএম এবং এর সর্বোচ্চ টর্ক ১৩.৯ এনএম @ ৬,০০০ আরপিএম এবং এটি প্রতি লিটারে ৫৯ কিলোমিটার পর্যন্ত চলে বলে কোম্পানি দাবী করে। এতকিছুর সাথে হোন্ডা এক্স-ব্লেডের বর্তমান দাম ১,৮৯,৫০০ টাকা।
ভালো মাইলেজ পাওয়ার উপায় ২০২২ । বাইকের ভালো মাইলেজ পেতে ১০টি সেরা টিপস