সূচীপত্র
বিদ্যুৎ বিলে ইউনিট প্রতি চার্জ, মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জ এবং ভ্যাট ট্যাক্সসহ অন্যান্য ব্যয় থাকে- এখানে ডিমান্ড চার্জের পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল হতেও বেশি হতে পারে–বিদ্যুৎ বিলে ডিমান্ড চার্জ ২০২৪
ডিমান্ড চার্জ কি? – ডিমান্ড চার্জ নিয়ে ফেসবুক এবং অন্যান্য প্লাটফর্মে আলোচনা হয়। চলুন আজ ডিমান্ড চার্জ নিয়ে জানি এবং এটি বাতিল করার উপায় আছে কিনা জেনে নিই। বিদ্যুৎ বিলের ক্ষেত্রে ডিমান্ড চার্জ হলো গ্রাহকের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা বা চুক্তিবদ্ধ লোডের উপর নির্ধারিত চার্জ। ডিমান্ড চার্জের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, মালামাল, এবং অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ আদায় করে।
ডিমান্ড চার্জ সরকার নাকি কোম্পানি খায়? যখন কোন একজন গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে মিটারের জন্য আবেদন করে, তখন উক্ত গ্রাহকের ব্যবহার সীমা কতটুকু হবে, তা উল্লেখ করে তাকে ফর্মে অঙ্গীকার/স্বাক্ষর দিতে হয়। যেমন, কোন গ্রাহক যদি বলে তার ২ কিঃওঃ (কিলোওয়াট) লাগবে। তার মানে উক্ত গ্রাহকের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমা ২কিঃওঃ। এই ২ কিঃ ওঃ হলো তার চুক্তিবদ্ধ লোড। এই সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সীমা বা চুক্তিবদ্ধ লোডের উপর যে চার্জ ধার্য করা হয় তাকেই ডিমান্ড চার্জ বলা হয়। গ্রাহকের সেই চুক্তিবদ্ধ লোড সরবরাহ করার জন্য বিদ্যুৎ বিতরণকারী সকল প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, মালামাল সহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে উক্ত গ্রাহকের সরবরাহ নিশ্চিত করে থাকে। যেমন, ট্রান্সফরমার, খুঁটি, তার ইত্যাদি। এসব যন্ত্রপাতি ও মালামালের টাকা যেমন সরকার বহন করে, তেমনি ডিমান্ড চার্জের মাধ্যমে এই টাকা সরকার আবার ফেরতও নেয়।
বিকাশ ছাড়া আর কি উপায়ে বিদ্যুৎ বিল দেয়া যায়? উপায়, একপে, জিপে, টেলিক্যাশ, ট্যাপ (tap), নগদ, বিকাশ, মাইক্যাশ, রকেট, রবিক্যাশ ও শিওরক্যাশ সার্ভিসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ সবুজ ও ঝামেলামুক্ত। স্পে অনলাইন ব্যাংক সমূহঃ অগ্রণী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়া ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমান ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মধুমতি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাং ইসলামী ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের যে কোন শাখায় বিদ্যুৎ বিল পরিশোষ করুন।
বিদ্যুৎ বিলের ডিমান্ড চার্জ ও মিটার ভাড়া নিয়ে কনফিউশন পরিস্কারকরণ / সঠিক তথ্য জানিয়ে দিন অন্যদের
বিদ্যুৎ বিল ৪৬ টাকা কিন্তু ডিমান্ড চার্জ ৮৪ টাকা। বিদ্যুৎ কোম্পানি চাইলেই এই ডিমান্ড চার্জ বাদ দিতে পারবেন না। ডিমান্ড চার্জ কেউ চাইলে নিজের ইচ্ছামত ধার্য করতে পারে না। ইহা নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা Bangladesh Energy Regulatory Commission (BERC). বিদ্যুৎ সংক্রান্ত বেচা, কেনা, উৎপাদন, বিতরন, জরিমানা, ভর্তুকি, বিলের রেট, ডিমান্ড চার্জ, ভ্যাট সব কিছু নির্ধারণ করে দেয়। যেমন- আবাসিক, সেচ-কৃষি কাজের গ্রাহকদের জন্য ডিমান্ড চার্জ প্রতি কিলোওয়াট ৩০ টাকা, বানিজ্যিক বিপণনের জন্য ৬০ টাকা ইত্যাদি ধার্য করে দিয়েছে BERC. উক্ত ডিমান্ড চার্জ ও ব্যবহৃত বিদ্যুৎ খরচের উপরই মোট বিল হিসাব করা হয়। এই টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা হয়। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই টাকার মালিক না।
Caption: Electricity Bill
মিটার ভাড়া কি ও কেন ২০২৪ । মিটার কিনে আবার ভাড়া দিতে হবে কেন?
- পল্লী বিদ্যুৎ বেশিরভাগই গ্রামীণ মানুষকে বিদ্যুৎ সেবা দিয়ে থাকে। যাদের অধিকাংশ সচ্ছল না।
- একটি ১ ফেইজ মিটারের দাম ১২০০/১৫০০ টাকা।
- অনেক গ্রাহকের উক্ত টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়ার মতো সাধ্য নাই।
- তাই ১০ টাকা মাস প্রতি নিয়ে থাকে। একটি মিটারের আয়ু সচরাচর ১০ বছর।
- তাহলে ১০ বছর x ১২ মাস x ১০ টাকা = ১২০০ টাকা। তবে মিটার বেশিরভাগই ১০ বছরের আগেই নষ্ট হয়ে যায়।এমনকি ১০ দিন কিংবা ১ মাসেও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তখন গ্রাহককে বিনামূল্যে পুনরায় নতুন মিটার দেওয়া হয়।
- প্রতি মাসে ১০ টাকা গ্রাহক স্বার্থেই করা হয়, যাতে গ্রাহক সুবিধা পায়। কিন্তু, কোন গ্রাহক যদি নিজে মিটার কিনে নেয়, তবে তাকে মিটার ভাড়া দিতে হয় না। এক্ষেত্রে যদি মিটার নষ্ট হয়ে যায় তবে গ্রাহককে আবার টাকা দিয়ে কিনতে হবে।
- ১০ বছর পরেও কি মিটার ভাড়া চলতেই থাকবে? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। কারণ, ১ মাস পরেও যদি কোন গ্রাহকের মিটার নষ্ট হয়, তখন যেহেতু কোন টাকা নেওয়া হয় না, তাই ১০ বছর পরেও যদি মিটার ভালো থাকে, মিটার ভাড়া চলতেই থাকবে।
- আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৪.৩৬৭৯ টাকা রেটে বিদ্যুৎ ক্রয় করে থাকে। কিন্তু, গ্রামের আবাসিক গ্রাহকদেরকে ০-৭৫ ইউনিটের দাম নিচ্ছে ৪.১৯ টাকা রেটে।
- পল্লী বিদ্যুতায়নের আওতায় মোট গ্রাহক ২ কোটি ৮২ লক্ষ। ৭৫ ইউনিটের নিচে ব্যবহারকারী গ্রাহক রয়েছে প্রায় ২ কোটি। এই বিরাট সংখ্যক গ্রাহকদেরকে ক্রয়মূল্যের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছে তাদের সুবিধার জন্য।
বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক কখন বিচ্ছিন্ন করা হয়?
বিদ্যুৎ বিলে উল্লিখিত “পরিশোধের শেষ তারিখ” টি শুধুমাত্র চলতি মাসের বিলের জন্য প্রযোজ্য। চলতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের অতিরিক্ত যদি আর কোন বকেয়া বিদ্যুৎ বিল উপরোক্ত বিবরণ অনুযায়ী আপনার নিকট পাওনা থাকে তবে বকেয়া বিল আদায়ের জন্য বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী যে কোন সময় আপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও পুনঃসংযোগ ফি পরিশোধ সাপেক্ষে নিয়ম অনু হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলাপূর্ণ। এমতাবস্থায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করণের মত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি পরিহার করার লক্ষ্যে অবিলম্বে সমুদয় বকেয়া বিদ্যুৎ বিল (যদি থাকে) পরিশোধ করতে হবে।