ইন্টারনেট ও কল রেট

মোবাইল ডাটা ও বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে নতুন নির্দেশিকা ২০২২

প্রেস বিজ্ঞপ্তি-মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের ডাটা ও ডাটা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজ সর্ম্পকিত নতুন নির্দেশিকা চালু করেছে বিটিআরসি- ঢাকা, ১৫ মার্চ, ২০২২। বিটিআরসি কর্তৃক গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনায় মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের ডাটা ও ডাটা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজ এর নতুন নির্দেশিকার উদ্বোধন করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোস্তাফা জব্বার।

মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর প্রধান সম্মেলন কক্ষে এ সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে এমন এক মহাসড়ক তৈরি করা হচ্ছে যাতে বাংলাদেশ পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের নেতৃত্ব দিতে পারে। আগামীতে ফোর-জি ও ফাইভ-জি সেবা পাশাপাশি চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, সারাদেশে ফোর-জি নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণে জোর দিতে হবে। ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ আনলিমিটেড রাখতে অপারেটরের প্রতি আহবান জানান তিনি। এছাড়া, কল ড্রপ ও কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতের পাশাপাশি অপারেটরদেরকে ওয়েবসাইটে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভার্সন রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।

সভার শুরুতে বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান জনাব সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ইন্টারনেট এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। সকল স্তরের সকল বয়সের মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়ে ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তি। নতুন ডাটা প্যাকেজ নির্দেশিকা চালুর ফলে গ্রাহক সহজেই প্যাকেজ সর্ম্পকে বিস্তারিত জানতে পারবে।

 পরিবর্তনটা কি হল?

পরবর্তীতে কমিশনের মহাপরিচালক (সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস) ব্রিগে: জেনা: মোঃ নাসিম পারভেজ নতুন প্যাকেজ নির্দেশিকার বিষয়ে কার্যক্রমের আদ্যপান্ত বিশদভাবে উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, প্রতিটি অপারেটর সর্বমোট ৯৫ টি প্যাকেজ চালু করতে পারবে। এর মধ্যে নিয়মিত প্যাকেজ (regular package) এবং গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ (CCSP) মিলে সবোর্চ্চ ৮৫টি এবং রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট (R&D) এর জন্য সর্বোচ্চ ১০ টি প্যাকেজ থাকবে। এছাড়া, সকল প্যাকেজের সময়সীমা হবে ০৩/০৭/১৫/২০ দিন। তিনি আরো বলেন, পূর্বে চারটি অপারেটর মিলে মোট প্যাকেজ সংখ্যা ছিল ৬২৯টি আর বর্তমানে চার অপারেটর মিলে মোট প্যাকেজ সংখ্যা ৩১২টি । ফলে পূর্বের চেয়ে প্যাকেজ সংখ্যা কমেছে ৫০.৪%।

ডাটার মেয়াদ যোগ হবে কিভাবে?

নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড এর ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যদি তিন দিন মেয়াদে ৪ জিবি ডাটা প্যাক ক্রয় করেন এবং তৃতীয় দিনে যদি তার ২ জিবি বা ১জিবি ডাটা অব্যবহৃত থাকে, তাহলে তৃতীয় দিনের মধ্যে গ্রাহক ৪ জিবি ৩০ দিন মেয়াদে একই প্যাক কিনলে তার অব্যহৃত ডাটা নতুন প্যাকের সাথে যোগ হবে এবং তিন দিন প্যাকের অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া, একজন গ্রাহক একই পরিমাণ ডাটা ক্রয় করে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে ডাটা প্যাক ক্রয় করলেও তা ক্যারি ফরওয়ার্ড করার সুযোগ পাবেন।

নতুন নির্দেশিকায় প্যাকেজের নির্দিষ্ট ধরণ, সর্বোচ্চ সংখ্যা, প্যাকেজের কোডভিত্তিক নামকরণ, প্যাকেজের নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ সব প্যাকেজ অপারেটরদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া, যে কোনো অপারেটর একজন গ্রাহককে দিনে সর্বোচ্চ ০৪ (চারটি) কমার্সিয়াল প্যাকেজের এসএমএস পাঠাতে পারবে এবং গ্রাহককে অবশ্যই প্রতি মাসের খরচ হিসাব সম্বলিত বাংলা এসএমএস প্রতিমাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রদান করতে হবে। ইতোমধ্যে মোবাইল অপারেটরগণ বর্তমান নিয়মে সকল ডাটা প্যাকেজ তাদের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করেছেন, যা মোবাইল অপারেটর প্রতিনিধিরা একটি ডেমো প্রদর্শনীর মাধ্যমে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি সাদাত হোসেন বলেন, নতুন ডাটা প্যাকেজ একটি গ্রাহকবান্ধব নির্দেশিকা । দীর্ঘদিন ধরে বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটররা সমন্বয় করে এ খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধান করার পাশাপাশি প্রতিনিয়িত গ্রাহকবান্ধব নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ডাটা প্যাকের মেয়াদ ২০২২
১৭ মার্চ টেলিটক একটি আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ চালু করবে জানিয়ে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সাহাব উদ্দিন বলেন, নতুন প্যাকেজ নীতিমালা একটি মাইলফলক। এর মাধ্যমে গ্রাহক রিচার্জ এমাউন্ট ও ডাটার ব্যবহারের চিত্র পেয়ে যাবে। অপারেটরদের জন্য একটি বাড়তি চাপ হলেও নতুন নির্দেশিকা হবে গ্রাহকবান্ধব।

রবির চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম বলেন, টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা আনয়নে অপারেটর ও বিটিআরসি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। টেলিকম খাতে প্রবৃদ্ধি আনতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এ খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক টেলিকম খাতে বিদ্যমান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে তার ওপর গুরুত্ব প্রদানে বিটিআরসির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, আমাদের এখন প্রতিযোগিতামুলক বাজারে টিকে থাকতে হচ্ছে, তারপরেও গ্রাহকদের স্বার্থে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নতুন নির্দেশিকার ফলে গ্রাহক অভিযোগ কমে আসবে বলেও জানান তিনি।

অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব:) বলেন, বর্তমানে টেলিকম খাত গ্রাহককে ভালোভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে । ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন নির্দেশিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ার ক্ষেত্রে স্মার্টফৈানের ব্যবহার বাড়াতে মোবাইলের মূল্য আরো কমিয়ে আনতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জনাব মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নতুন নির্দেশিকার ফলে টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে শিক্ষিত মানুষের পাশাপাশি যাতে সাধারণ মানুষ প্যাকেজ সর্ম্পকে অবহিত হতে পারে সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া, কলড্রপ ও কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিত করতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর সিকদার জানান, বিটিআরসি সবসময় গ্রাহক স্বার্থ এবং গ্রাহক আত্মতুষ্টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামীতে ভয়েস কলের চেয়ে ডাটা ওপর নির্ভরতা বেশি হবে বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, অপারেটরদেরকে এখন থেকে ডাটার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিটিআরসি ডাটার ফ্লোর প্রাইস র্নিধারণ করতে উদ্যোগ নিবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কলড্রপ নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তুষ্টি আছে, তাই অপারেটরদেরকে ফাইবার অপটিক ও তরঙ্গে ব্যবহার বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যেদের মধ্যে কমিশনার (ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশনস) প্রকৈাশলী মোঃ মহিউদ্দিন আহমেদ, কমিশনার (লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো: দেলোয়ার হোসেন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, মহাপরিচালক (লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডু, মহাপরিচালক (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) প্রকৌশলী মোঃ মেসবাহুজ্জামানসহ বিটিআরসি ও মোবাইল অপারেটরদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বিটিআরসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *