সূচীপত্র
রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর ধারা ১৭ অনুসারে বিক্রয়, হস্তান্তর, দান বা ইজারা দেওয়ার উদ্দেশ্যে একটি সম্পত্তি নিবন্ধিত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দলিলের নিবন্ধন আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করে-দুটি পক্ষের উপস্থিতে দলিল সম্পাদিত হয়ে থাকে – দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন ধাপসমূহ
জমি বা ফ্ল্যাট দলিল রেজিস্ট্রেশন কে করেন? – মনে করি ‘ক’ একখন্ড জমি বা একটি দোকান বা ফ্ল্যাট বা প্লট ‘খ’ এর নিকট বিক্রয় করেছে। নিবন্ধন আইনের বিধান অনুযায়ী এই বিক্রয়ের দলিল নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে ‘ক’ বিক্রেতা আর ‘খ’ হল ক্রেতা। বিশেষত তার স্বার্থেই দলিল প্রস্তুত করা হয়ে থাকে এবং সেটি সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে উপস্থাপনের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়।
দলিল করতে কি কি কাগজপত্র লাগে? নিবন্ধন আইন, ১৯০৮ এর ধারা ৫২ক, ধারা ২২ক(১), ধারা ২২ক(২), ধারা ২২ক(৩) অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্ধারিত কাগজ-পত্রাদি আবশ্যিকভাবে প্রয়োজন। যেমন -সংশ্লিষ্ট জমির সিএস/এসএ/আরএস/বিএস/বিআরএস অথবা নামজারি খতিয়ানের মূল কপি অথবা সহি মোহরীয় নকল। হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধের রশিদ (দাখিলা)। ক্রেতা এবং বিক্রেতাগণের জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদ/পাসপোর্ট এর কপি। উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার/ওয়ারিশ সনদ। ক্রেতা এবং বিক্রেতাগণের সদ্যতোলা পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। প্রয়োজনীয় বায়া দলিল সমূহের মূল কপি অথবা সার্টিফাইড কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং জেলা সদরের পৌরসভার অধীন ১ লক্ষ টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দলিলের ক্রেতা এবং বিক্রেতার E-TIN লাগবে। সম্পত্তির বাজারমূল্যে রেজিস্ট্রেশন আদেশ ২০২৩ । ফ্ল্যাটসহ শহুরে ভূমি রেজিস্ট্রেশন ব্যয় বেড়ে যাবে
জমি রেজিস্ট্রি খরচ ২০২৩ কেমন? রেজিস্ট্রি ফি ৫,০০,০০০/-এর ১%=৫০০০/- টাকা। স্ট্যাম্প শুল্ক ফি ৫,০০,০০০/-এর ১.৫%=৭৫০০/- টাকা। স্থানীয় সরকার ফি ৫০০০০০/- এর ৩%=১৫০০০/- টাকা। উৎস কর ফি ৫০০০০০/- এর ১%=৫০০০/-টাকা(ইউনিয়ন এলাকার জন্য) এবং পৌরসভা এলাকার জন্য ৫০০০০০/- এর ২% =১০০০০/- টাকা। যদিও উৎসে করা হার বর্তমানে পরিবর্তন করা হয়েছে কিন্তু উপজেলা লেভেলে তা অপরিবর্তিত রয়েছে। দলিল ফি ক্যালকুলেটর ২০২৩ । জমি রেজিস্ট্রি খরচ নিজে নিজেই হিসাব করে বের করুন
ঢাকা শহরে দলিল মুল্যের ৮% অথবা সর্বনিম্ন ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর গুণতে হয় / দলিল সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন
সাফ কবলা হস্তান্তরিত সম্পত্তির দলিলে লিখিত মোট মূল্যের ১% টাকা। দলিলের মূল্য ২৪,০০০ টাকা বা তার কম হলে রেজিস্ট্রি অফিসে নগদ অর্থে এবং ২৪,০০০ টাকার বেশি হলে স্থানীয় সোনালী ব্যাংক লিঃ এ জমা করে পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।
Caption: Check Sample of Dolil
দলিল রেজিস্ট্রেশন ধাপ সমূহ । যে ধাপগুলো অনুসরণ করে দলিল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে
- ধাপ-১ঃ বিক্রয় দলিল নিবন্ধনের প্রথম ধাপে একজন ক্রেতার দায়িত্ব হলো হস্তান্তরিত সম্পত্তির স্বত্ব এবং গত ২৫ বৎসরে হস্তান্তরের তথ্য যাচাই করা। একটি সম্পত্তির পূর্ববর্তী ধারাবাহিক মালিকানারা ইতিহাস যাচাই করার জন্য ক্রেতার নিকট থেকে সকল বায়া দলিল ও খতিয়ানের কপি চেয়ে নিতে হবে এবং তা সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এবং খতিয়ান সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে যাচাই করে নিতে হবে। এই ধাপে তল্লাশকারক/দলিল লেখকের সহায়তা নিইয়ে উক্ত জমির হস্তান্তর সম্পর্কিত তথ্য সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে তল্লাশ করতে হবে।
- ধাপ-২ঃ আলোচ্য হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সংগ্রহ, যথা: (ক) বিক্রেতা বা তার পূর্ববর্তীর নামে সর্বশেষ খতিয়ান; (খ) ক্রেতা ও বিক্রেতার পাসপোর্ট আকারের ছবি; (গ) জমিটি সরকারি কোন কর্তৃপক্ষের অধীনস্ত থাকলে উক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা ছাড়পত্র ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিস এবং ভূমি অফিসে আবেদনের মাধ্যমে উক্ত কাগজ-পত্র সংগ্রহ করা যাবে।
- ধাপ-৩ঃ (ক) দলিলের খসড়া প্রস্তুতকরণ এবং (খ) প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর খসড়া দৃষ্টে স্ট্যাম্প কাগজে পরিচ্ছন্ন আকারে দলিল প্রস্তুতকরণ। হস্তান্তরিত সম্পত্তির বায়া দলিল ও অন্যান্য কাগজ-পত্র দৃষ্টে দলিলের খসড়া প্রস্তুত করতে হবে। বিক্রেতা/দাতা স্বয়ং বা ক্রেতা কর্তৃক নিয়োজিত আইনজীবী বা দলিল লেখক।
- ধাপ-৪ঃ দলিল নিবন্ধন বাবদ ফি ও শুল্ক, যথা: (ক) রেজিঃ ফি, (খ) স্থনীয় কর, (গ) স্ট্যাম্প শুল্ক; (ঘ) উৎসে কর এবং (ঙ) ভ্যাট (বিক্রেতা ভূমি বা ভবন উন্নয়নকারী হলে) জমাকরণ। (ক) হতে (ঘ) পে অর্ডারের মাধ্যমে এবং (ঙ) চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায়।
- ধাপ-৫ঃ (ক) দলিল সম্পাদন এবং (খ) সম্পাদনের ৩ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধনের জন্য মূল পে-অর্ডার, চালান ও অন্যান্য কাগজ-পত্র সহকারে দলিল দাখিল। (ক) বিক্রেতা কর্তৃক দলিলে স্বাক্ষর বা টিপ প্রদানের মাধ্যমে সম্পাদন; (খ) সাব-রেজিস্ট্রি অফিস।
- ধাপ-৬ঃ সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক দলিল সম্পাদনকারী এবং তার সনাক্তকারীর পরিচিতি এবং দাখিলকৃত কাগজ-পত্রের বৈধতা যাচাইকরণ। (ক) সঠিক পাওয়া গেলে পে-অর্ডার, চালানসহ রেজিস্ট্রির জন্য দলিল গ্রহণ; এবং (খ) অন্যথা হলে ভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ। (ক) দলিল সম্পাদনকারী ও তার সনাক্তকারীর স্বাক্ষর; সরকারি বইয়ে টিপ গ্রহণ এবং দলিল দাখিলকারীকে রসিদ প্রদান; এবং অন্যথা হলে (খ) দলিল নিবন্ধন অগ্রাহ্যের আদেশ প্রদান।
- ধাপ-৭ঃ দলিলটি নিবন্ধনের জন্য গৃহীত হলে দলিলের বিপরীতে অফিস কর্তৃক প্রদত্ত রসিদটি ক্রেতা রেখে দিবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর রসিদ দাখিল করে মূল দলিলটি ফেরত নিবেন।
- ধাপ-৮ঃ দলিলটির নিবন্ধন অগ্রাহ্য হলে ক্রেতা মূল দলিল এবং অগ্রাহ্য আদেশের নকল সংগ্রহ করবেন।
- ধাপ-৯ঃ অগ্রাহ্য আদেশ প্রদানের ৩০ দিনের মধ্যে ক্রেতা অগ্রাহ্য আদেশের নকলসহ মূল দলিল জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর দাখিল করে আপিল মামলা দায়ের করবেন। (১) ক্রেতা কর্তৃক নিয়োজিত আইনজীবী; (২) জেলা রেজিস্ট্রারের অফিস।
- ধাপ-১০ঃ দলিলটি নিবন্ধনেরজন্য আদেশ দেয়া হলে তা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নিবন্ধিত হবে; অথবা দলিলটি নিবন্ধনের আবেদন আপিলকারী কর্তৃপক্ষ (জেলা রেজিস্ট্রার) কর্তৃক প্রত্যাখাত হলে ক্রেতা প্রতিকারের নিমিত্ত দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। জেলা রেজিস্ট্রার কর্তৃক নিবন্ধন আইনের অধীন তদন্ত বা শুনানি সম্পন্নকরণ।
জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পর দলিল পাওয়া যায়?
একদিন পরই নকল বা অনুলিপি দলিল নিতে পারবেন। জেলা রেজিস্ট্রার শুনানি গ্রহনের পর দলিলটি রেজিস্ট্রেশনের আদেশ দিলে ৩০ দিনের মধ্যে সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট দলিলটি দাখিল করতে হবে। জমির বায়নানামা সম্পাদনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে বায়নাটি রেজিস্ট্রি করতে হবে। আর শর্ত অনুযায়ী বায়নার চুক্তি অনুযায়ী রেজিস্ট্রি করার সব পদ্ধতি মেনে সাব-কবলা দলিলটি সম্পাদিত হলে সম্পাদনের পর থেকে তিন মাসের মধ্যে সাব-কবলা দলিলটি রেজিস্ট্রি করাতে হবে। আইন অনুযায়ী, তিন মাস পার হয়ে গেলে রেজিস্ট্রি করা যাবে না। দলিল রেজিস্ট্রেশনের ৯০ দিনের মধ্যে দলিল পাওয়ার বিধান থাকলেও কোন কোন ক্ষেত্রে ২ বছরও লেগে যাচ্ছে। তবে গাজীপুরের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে মাত্র ১৫ দিন পরই মূল দলিল পাওয়া যায়।
দলিল নমুনা ফরম ২০২৩ । সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল PDF or Word Format সংগ্রহ করুন