সূচীপত্র
আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হলেন সরকারি অফিসে নিযুক্ত এমন একজন ব্যক্তি যিনি ট্রেজারী থেকে টাকা তোলা এবং ব্যয় করার জন্য সরকার কর্তৃক ক্ষমতা প্রাপ্ত। গেজেটেড কর্মকর্তাগণ তাদের বেতন ভাতার বিল নিজেরাই স্বাক্ষর করতে পারেন এবং সরকারি ট্রেজারী থেকে অর্থাৎ প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (CAO), বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক (DCA), জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (DAO) এবং উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (UAO) হতে এ বাবদ টাকা তুলতে পারেন। কিন্তু নন-গেজেটেড কর্মচারীগণ তাদের নিজ নিজ বিল তুলতে পারেন না। তাদের বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য প্রাপ্য পরিশোধের জন্য একজন আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার প্রয়োজন। এতদ্ব্যতীত, অফিসের বিভিন্ন সরবরাহ ও সেবা খাতে ব্যয় মেটানোর জন্যও নগদ টাকা তোলার প্রয়োজন হয়। এজন্য একজন আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা (DDO) প্রয়োজন।– Govt. DDO Responsibility 2025
সাধারণভাবে সকল অফিস প্রধানই সরকারি ট্রেজারী হতে টাকা তোলার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত (Subsidiary Rule (SR-৬৫)। এ কাজটি তিনি নিজেই করতে পারেন অথবা তাঁর অফিসের কোন গেজেটেড অফিসারের উপর এ দায়িত্ব তিনি অর্পণ করতে পারেন। শেষোক্ত ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নাম ও নমুনা স্বাক্ষর একাউন্টস অফিস ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অফিসে পাঠাতে হয়। অতঃপর এ কর্মকর্তা আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার (DDO) দায়িত্ব পালন করবেন। তবে এরূপে ক্ষমতা অর্পণের পরও অফিস প্রধান কোন মতেই তাঁর নিজ দায়িত্ব হতে মুক্ত হবেন না। তাঁর অফিসের সমস্ত লেনদেনের জন্য তিনিই দায়ী থাকবেন। কোন বিশেষ ক্ষেত্রে কোন গেজেটেড কর্মকর্তা পাওয়া না গেলে অফিস প্রধান নন-গেজেটেড কর্মচারীদের মধ্য হতে সবচেয়ে সিনিয়র কর্মচারীকে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা (DDO) হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন। তবে এরূপ ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রধানের পূর্বানুমোদন প্রয়োজন হবে।
১.২ আর্থিক ঔচিত্যবোধের মানদন্ড (Standards of Financial Properiety): সরকারি তহবিল হতে অর্থ ব্যয় বা অর্থ ব্যয়ের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক কর্মকর্তাই অর্থ-ব্যয়ের ঔচিত্য সম্পর্কিত নিম্নলিখিত সাধারণ নীতিমালা অনুসরণ করবেন : ১. নিজস্ব অর্থ ব্যয় সম্পর্কে একজন সাধারণ বিচক্ষণ ব্যক্তি যেরূপ সতর্কতা অবলম্বন করেন, সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও প্রত্যেকটি সরকারি কর্মকর্তার নিকট হতে অনুরূপ বিচক্ষণতা আশা করা হয়; ২. দৃশ্যতঃ কোন খরচ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হওয়া উচিত নয়; ৩. কোন কর্তৃপক্ষই এমন কোন ব্যয় অনুমোদনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করবে না, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর নিজের সুবিধার জন্য হতে পারে; ৪. সরকারি অর্থ কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অংশবিশেষের কল্যাণের জন্য ব্যয় করা হবে না, যদি না- ক) সংশ্লিষ্ট অর্থের পরিমাণটি অকিঞ্চিৎকর হয়; খ) এই অর্থের দাবিটি কোন আইনী আদালতে বলবৎ যোগ্য হয়; এবং গ) অর্থ ব্যয়টি কোন স্বীকৃত নীতি বা রীতি অনুসরণে হয়। ৫. কোন বিশেষ শ্রেণীর ব্যয় নির্বাহের জন্য অনুমোদিত ভাতার পরিমাণটি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে যাতে ভাতাটি প্রাপকের জন্য সঠিকভাবে একটি লাভের উৎস না হয়।
১.৩ সরকারি ট্রেজারী হতে অর্থ উত্তোলনের উদ্দেশ্য: শুধুমাত্র সরকার অনুমোদিত ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারি ট্রেজারী হতে তহবিল উত্তোলন করা যেতে পারে এবং নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যে CAO/DCA/DAO/UAO এভাবে টাকা উত্তোলনের অনুমতি দিতে পারেন: ১) সরকারের নিকট হতে প্রাপ্য টাকা DDO কে প্রদানের জন্য; ২) সরকারী কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা প্রদানের জন্য DDO কে প্রয়োজনীয় তহবিল প্রদানের উদ্দেশ্যে; ৩) অপর একজন সরকারি কর্মচারীকে অর্থ প্রদানের উদ্দেশ্যে, যাতে তিনি সরকারের পাওনা অর্থ পরিশোধ করতে পারেন; ৪) সরকারে তহবিল বিনিয়োগের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে টাকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে; এবং ৫) অফিসের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও সেবা সম্পর্কিত ব্যয় নির্বাহের জন্য নগদ অর্থ পুনর্ভরণ বাবদ।
সরকারি অফিসের ডিডিও ক্ষমতা ২০২৫ / আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তা অর্থ উত্তোলন ও ব্যয় করবেন
১.৪ বাজেট নিয়ন্ত্রণ: সরকারি অর্থ ব্যয় করতে হলে দুটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তা হল: (১) বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে এবং (২) উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মঞ্জুরি থাকতে হবে। কোন ব্যয় নির্বাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কোডের বিপরীতে বাজেট বরাদ্দ না থাকলে ব্যয় করা যাবে না। কোনক্রমেই এক কোডের বিপরীতে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোডের কাজে ব্যয় করা যাবে না। সুতরাং কোন ব্যয় নির্বাহের পূর্বে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, ক) প্রস্তাবিত ব্যয় মেটানোর জন্য বাজেট বরাদ্দ আছে: খ) উক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন আছে; এবং গ) সরকারি অর্থ ব্যয়ের জন্য প্রতিপালনযোগ্য সাধারণ নীতিমালাসমূহ পালন করা হয়েছে। আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা ছাড়া বাজেট নিয়ন্ত্রণে মঞ্জুরিকারী কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে। কোন ব্যয় প্রস্তাবে মঞ্জুরি প্রদানের পূর্বে মঞ্জুরিকারী কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত হতে হবে যে, ১) প্রস্তাবিত ব্যয় নির্বাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কোডের বিপরীতে বাজেট বরাদ্দ রয়েছে কিনা: ২) আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ আদেশে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তার প্রস্তাবিত ব্যয় মঞ্জুরি প্রদানের ক্ষমতা আছে কিনা; এবং ৩) প্রস্তাবিত ব্যয় সংঘটনের জন্য যে সব পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন প্রস্তাবিত ক্ষেত্রে তা অনুসরণ করা হয়েছে কিনা এবং প্রযোজ্য বিধি-বিধান পালন করা হয়েছে কিনা।
Caption: Govt. DDO Responsibility pdf
১.৫ সরকারি একাউন্ট হতে অর্থ উত্তোলনের পদ্ধতি:
- বিধি অনুসারে হিসাব রক্ষণ বিল পেশ করে সরকারি একাউন্ট হতে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাগণ অর্থ উত্তোলন করতে পারেন। গেজেটেড কর্মকর্তাগণ স্বয়ং উত্তোলনকারী কর্মকর্তা (Self-drawing) হিসেবে নিজেদের বিলে স্বাক্ষর করবেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাগণ (DDO) বিলে স্বাক্ষর করবেন। বিল প্রণয়নের সময়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে:
- ১) বিল প্রণয়ন করতে হবে নির্ধারিত ফরমে। যতদূর সম্ভব বাংলায় মুদ্রিত ফরম ব্যবহার করতে হবে;
- ২) সমস্ত বিল কালি দিয়ে প্রণয়ন ও স্বাক্ষর করতে হবে;
- ৩) বিলের টাকার অংক সংখ্যায় ও অক্ষরে লিখতে হবে;
- ৪) বিলের সর্বমোট টাকার অংকের সমস্ত শুদ্ধিকরণ উত্তোলনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক অনুস্বাক্ষরের পরিবর্তে তারিখসহ পূর্ণাঙ্গ স্বাক্ষর দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে;
- ৫) ঘষা মোছা এবং লেখার উপরে লেখা, তা যে আকারেই হোক না কেন, সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং অবশ্যই পরিহার করতে হবে। যদি কোন সংশোধন প্রয়োজন হয়, তা হলে ভুল লেখাগুলো লাল কালিতে পরিষ্কারভাবে কেটে দিতে হবে এবং নির্ভুল লেখাটি বসাতে হবে এবং প্রতিটি শুদ্ধির ক্ষেত্রে উত্তোলনকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তারিখসহ নামের অনুস্বাক্ষর দিয়ে সত্যায়িত করতে হবে;
- ৬) ব্যয় সম্পর্কিত সঠিক শ্রেণী বিন্যাস কোড বিলের উপরে লিখতে হবে; প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিলের গায়ে অর্থের উৎস উল্লেখকারী (যথা- ‘আরপিএ জিওবি’ ও ‘জিওবি’) চিহ্ন ব্যবহারক রতে হবে; এবং
- ৭) একমাত্র বেতন বিল ব্যতীত সমস্ত বিলের সাথে মঞ্জুরি পত্র সংলগ্ন করতে হবে। কোন বিল প্রণয়নের অব্যবহিত পরেই তা বিল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং এই অন্তর্ভুক্তি সত্যায়নের উদ্দেশ্য বিল রেজিস্টারের নির্ধারিত স্থানে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা (DDO) তাঁর স্বাক্ষর দেবেন। বিল পেশের সাথে সাথে হিসাব রক্ষণ অফিস যে টোকেন নম্বরটি দেবে তা সংশ্লিষ্ট বিলটির পার্শ্বে বিল রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোন বিলের বিপরীতে নগদে বা চেক মারফত যে পরিমাণ টাকাই পাওয়া যাক না কেন, তা প্রথমে ক্যাশ বহিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং তার পরেই টাকা বিতরণ করা যাবে। বেতন ও ভাতা বিতরণের ক্ষেত্রে একটি পরিশোধ রোল/ রেজিস্টার (Acquittance Roll/Registrar) অবশ্যই রাখতে হবে।
আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাদের (DDO) রীতিনীতি সম্পর্কিত বিধিবিধান কি?
প্রত্যেক আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাকেই আর্থিক বিধি, চাকুরি বিধি এবং সরকারি বিধি-বিধান যথা: ফান্ডামেন্টাল রুলস্ এন্ড সাপ্লিমেন্টারী রুলস, জেনারেল ফাইনান্সিয়াল রুলস, ট্রেজারী রুলস এন্ড সাবসিডিয়ারী রুলস, একাউন্ট কোড, বাংলাদেশ সার্ভিস রুল (BSR) এবং সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত পরিপত্রসমূহ সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত হতে হবে। আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা (DDO) সমস্ত প্রাপ্তি এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রদত্ত অর্থ সম্পর্কে এবং তাদের অধীন কর্মকর্তাগণ কর্তৃক আর্থিক লেনদেন সম্পর্কেও দায়ী থাকবেন। নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা ও আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব হল সর্বপ্রকার আর্থিক কার্যাবলির ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ এবং ব্যয়কে বাজেট বরাদ্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। বিভিন্ন বিষয়ে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নে উল্লেখ করা হল। ১.৬.১ সরকারি অর্থপ্রাপ্তি (Receipt of Government Money): সরকারি অর্থ প্রাপ্তির সাথে সাথে প্রত্যেকটি আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা (DDO) নিম্নলিখিত পন্থা অবলম্বন করবেন: ১) সমস্ত প্রাপ্তি অবিলম্বে ক্যাশ বহিতে লিপিবদ্ধ করা; ২) কোন সরকারি ঋণ পরিশোধের জন্য বা সরকারি তহবিলে জমা করার জন্য কোন টাকা প্রাপ্তির সাথে সাথে তা সরকারি একাউন্টে জমা করা; ৩) যদি সরকারি পদে বহাল থাকার কারণে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা এমন কোন অর্থ পান যা সরকারের পাওনা নয় অথবা যা সরকারি খাতে জমা করার অনুমতি নাই, তাহলে তা সোনালী ব্যাংকের শাখায় বা পোস্টাল সেভিংস ব্যাংকে একটি একাউন্ট খুলে তাতে জমা করতে হবে।
সরকারি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কি অনুমতি নিতে হয়? হ্যাঁ। অন্য কোন ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য সরকারের পূর্ব অনুমোদন নেয়া আবশ্যক; ৪) যে কর্মকর্তা সরকারি অর্থ প্রাপ্ত হবেন তিনি নিরাপত্তা, হিসাবরক্ষণ এবং ব্যয়ের জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। ১.৬.২ বেতন ও ভাতা প্রদান: বেতন ও ভাতা প্রদান সম্পর্কিত সাধারণ বিধি-বিধান নিম্নে উল্লেখ করা হল: ১) অফিস প্রধান বা অফিস প্রধানের পক্ষে যে কর্মকর্তা কোন টাকা উত্তোলনের জন্য বিলে স্বাক্ষর করেন, তিনিই ব্যক্তিগতভাবে ঐ টাকার জন্য দায়ী থাকবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ টাকা প্রাপকের নিকট বিতরণ করা না হয় এবং বিলের অফিস কপির উপরে তার প্রাপ্তি স্বীকার স্বাক্ষরিত না হয়। ২) কোন নতুন জায়গায় বদলি হয়ে আসলে কোন সরকারি কর্মচারীকে, গেজেটেড কর্মকর্তার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী চাকুরী স্থানের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার (Accounts Officer) নিকট হতে এবং কোন নন-গেজেটেড কর্মচারীর ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী অফিস প্রধানের নিকট হতে প্রাপ্ত Last Pay Certificate (LPC) ব্যতীত বেতন ও ভাতা প্রদান করা যাবে না। ৩) প্রথম বিনিয়োগের পর অথবা পদত্যাগ বা অবসর গ্রহণের পর পুনর্নিয়োগের পর Medical Certificate of Fitness ব্যতীত কোন সরকারি কর্মচারীকে বেতন ও ভাতা দেওয়া যাবে না। ৪) কোন সরকারি কর্মচারীর চাকরি হতে অবসর গ্রহণ, পদত্যাগ, অপসারণ বা মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটি No Demand Certificate’ ব্যতীত সর্বশেষ বেতন প্রদান করা যাবে না।
কেউ মারা গেলে ঐ দিন পর্যন্ত বেতন দেওয়া যাবে? হ্যাঁ। যদি কোন সরকারি কর্মচারী চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে মৃত্যুদিবস পর্যন্ত বেতন ও ভাতা তার উত্তরাধিকারীদেরকে দেয়া হবে। কোন সরকারি কর্মচারীর কোন মাসের বেতন ও ভাতা পরবর্তী মাসের প্রথম কর্মদিবসে পাওনা হবে। তবে নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে কোন মাস শেষ হওয়ায় পূর্বে মাসের অংশবিশেষের বিল হিসাব রক্ষণ অফিসে (Accounts Office) পেশ করতে হবে। যখন কোন সরকারি কর্মচারী প্রেষণে বা ছুটিতে বাংলাদেশের বাইরে যান; যখন কোন সরকারি কর্মচারীকে Parent Department হতে রেলওয়ে বিভাগ, টেলিগ্রাম ও টেলিফোন বোর্ড এবং বন বিভাগে বদলি করা হয়; এবং যখন কোন সরকারি কর্মচারী চূড়ান্তভাবে চাকরি ছেড়ে যান বা বৈদেশিক চাকুরীতে (Foreign Service) গমন করেন। কোন মাসের প্রথম ছয় দিন যদি সরকারি ছুটির দিন হয়, যে সময়ে ব্যাংক হতে বেতন ও ভাতা বিতরণ করা হয় না, তাহলে সরকার স্বীয় বিবেচনায় নির্দেশ দিতে পারবে যে, ছুটির পূর্বে সর্বশেষ কার্য দিবসে নন-গেজেটেড কর্মচারীদের মাসিক বেতন প্রদান করা যাবে। উপরোক্ত কারণ ছাড়াও সরকার বিশেষ উপলক্ষে মাস সমাপ্তির পূর্বে সম্পূর্ণ বা আংশিক বেতন ভাতা পরিশোধ করে থাকে, যেমন ঈদে মুসলমান ও দুর্গা পূজায় হিন্দু কর্মচারীদেরকে বেতন ভাতা অগ্রিম প্রদান করা হয়ে থাকে।
ভ্রমণ ভাতা বিল প্রদানের ক্ষেত্রে ডিডিও দায়িত্ব কি? ভ্রমণ ভাতা বিল প্রত্যয়ন বা অনুমোদনের পূর্বে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা (Drawing and Disbusrshing Officer) পরীক্ষা করে দেখবেন বিলটি নির্ধারিত ফর্মে প্রস্তুত করা হয়েছে কিনা, এবং ভ্রমণটি সংক্ষিপ্ততম পথে করা হয়েছে কিনা, এবং সর্বাপেক্ষা কম ব্যয়ে এবং কম সময় লাগানো হয়েছে কিনা। বদলিজনিত ভ্রমণ ভাতা বিলের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, পরিবারের সদস্য সংখ্যা সঠিকভাবে এবং বাস্তবানুগভাবে দেখানো হয়েছে কিনা। সরবরাহ এবং সেবা প্রদানের জন্য বিল পরিশোধের পূর্বে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা (DDO) নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পরীক্ষা করে দেখবেন: নিশ্চিত হতে হবে যে, এই ব্যয় নির্বাহের জন্য বাজেট বরাদ্দ আছে; নিশ্চিত হতে হবে যে, এই সব ক্রমেয় ব্যাপারে সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয়েছে; আসবাবপত্র ও মনোহরী দ্রব্যের ক্ষেত্রে প্রাপক (Receipient) উহা প্রাপ্তির অধিকারী কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে; কোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, সরবরাহকৃত দ্রব্যটি কার্যাদেশপত্রে প্রদর্শিত নমুনার অনুরূপ কিনা এবং ভাল অবস্থায় আছে কিনা। উপরি-উক্তি শর্ত দুইটি যদি সন্তোষজনক হয় তা হলে প্রাপ্ত দ্রব্যগুলি Stock Register-A লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং বিলের উপরে এই মর্মে সার্টিফিকেট দিতে হবে। মালামাল বা সেবা প্রাপ্তির পূর্বে কোন অর্থ প্রদান করা যাবে না।
ক্যাশবই ও অন্যান্য রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণ: আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাকে যেসব রেজিস্টার রাখতে হবে, তা হলো:
- ১) ক্যাশ বই
- ২) কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য প্রাপ্য বিতরণের স্বীকৃতি রেজিস্টার (Acquittance Register)
- ৩) বরাদ্দ রেজিস্টার (Allotment Register)
- ৪) পেটি-ক্যাশ রেজিস্টার
- ৫) অগ্রিম রেজিস্টার
- ৬) বিভিন্ন বিল রেজিস্টার, যেমন, ভ্রমণ ভাতা বিল রেজিস্টার, সরবরাহ ও সেবা রেজিস্টার
- ৭) চেক রেজিস্টার
- ৮) ভ্যাট রেজিস্টার
- ৯) আয়কর রেজিস্টার
নগদ অর্থ প্রাপ্তি ও প্রদানের নিয়ম কি? কোন বিভাগীয় বিধি-বিধানের ভিন্নরূপ সুস্পষ্ট নির্দেশ না থাকলে সমস্ত আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাকে নগদ অর্থ প্রাপ্তি ও প্রদান সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিধানগুলি অনুসরণ করতে হবে: TR Form-৩ ফরম্যাট এ একটি ক্যাশ বই রাখতে হবে; সর্বপ্রকার আর্থিক লেনদেনের অব্যবহিত পরেই উহা ক্যাশ বইতে লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং লিপিবদ্ধকৃত সমস্ত বিষয়ই অফিস প্রধান কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে; কোন দিনে যেসব লেনদেন হয় তা ঐ দিনেই ক্যাশ-বই-এ লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং ক্যাশ বই বন্ধ (close) করতে হবে। অফিস প্রধান স্বয়ং অথবা কর্মচারীদের মধ্য হতে একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির সাহায্যে যোগফলের নির্ভুলতা পরীক্ষা করবেন এবং যদি কোন ভুল পাওয়া যায় তা হলে সংশ্লিষ্ট রদবদলের ক্ষেত্রে স্বাক্ষর করবেন; প্রত্যেক মাসের শেষে অফিস প্রধান নগদ জের (Cash Balance) পরীক্ষা করবেন এবং স্বাক্ষর ও তারিখসহ একটি সার্টিফিকেট রেকর্ড করবেন; এবং ক্যাশ বই-এ কিছু ঘষে মুছে ফেলা এবং লেখার উপরে লেখা সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ। যদি কোন ভুল ভ্রান্তি পাওয়া যায় তা হলে ভুল লেখাটি কেটে দিতে হবে এবং দুই লাইনের মধ্যবর্তী স্থানে লাল কালিতে শুদ্ধ বিষয়টি লিপিবদ্ধ করতে হবে। এইরূপ প্রত্যেকটি লেখাই অফিস প্রধানের অনুস্বাক্ষর ও তারিখসহ প্রত্যায়িত হবে। অপারেশনাল ইউনিট ও ডিডিও বা কষ্ট ইউনিট ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে সঠিক সময়ে মাসিক হিসাবের সঙ্গতি সাধন করতে হবে। সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়নের লক্ষ্যে যাতে নিয়মিতভাবে মাসিকভিত্তিতে হিসাব প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট হিসাব অফিসের সাথে হিসাব সঙ্গতি সাধন (Reconciliation) যথাসময়ে সম্পন্ন করতে হবে। ফলে প্রশাসনিক চ্যানেলে প্রেরিত হিসাব এবং হিসাব অফিস কর্তৃক প্রেরিত জাতীয় হিসাব সঠিক হয়। উভয় হিসাবে কোনরূপ পার্থক্য থাকে না। প্রশাসনিক চ্যানেলে প্রণীত হিসাব এবং সিএও কর্তৃক সংকলিত হিসাবের মধ্যে নিয়মিতভাবে সঙ্গতি বিধানের উপর উপযোজন হিসাবের শুদ্ধতা বহুলাংশে নির্ভরশীল।
এ সম্পর্কে জেনারেল ফিন্যান্সিয়াল রুলস ৯৮(৪) এর নিম্নোলিখিত বিধানের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়: ১) হিসাব রক্ষণ অফিসারের কার্যালয়ে সংরক্ষিত হিসাবই চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়; এবং ২) সঙ্গতি সাধনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, বিভাগীয় হিসাব যেন যথেষ্ট নির্ভুল হয় এবং উহার উপর ভিত্তি করে বিভাগীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণ দক্ষতার সঙ্গে সম্পাদন করা যায়। বিভাগীয় হিসাবের সাথে হিসাব রক্ষণ অফিস কর্তৃক প্রণীত হিসাবের সঙ্গতি সাধনের পর্যায়ে নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে (সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল: বিধি-৬.২.৪) প্রতি মাসের মাসিক হিসাব সমাপ্তির তিনদিনের মধ্যে হিসাব রক্ষণ অফিসসমূহ তাদের আওতাধীন আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তাগণকে পনের দিনের মধ্যে হিসাবের সঙ্গতি সাধনের অনুরোধ জানাবেন। যদি হিসাব রক্ষণ অফিস কর্তৃক প্রেরিত উপাত্তের সাথে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাগণ কর্তৃক সংরক্ষিত হিসাবের মধ্যে পার্থক্য, না দেখা দেয় তাহলে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাগণ তা গ্রহণ করবেন। যদি পার্থক্য, না দেখা দেয় তাহলে আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তাগণ তা গ্রহণ করবেন। যদি পার্থক্য দেখা দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা তাঁর কর্মকর্তাকে সঙ্গতি সাধনের জন্য হিসাব রক্ষণ অফিসে প্রেরণ করবেন। যদি পনের দিনের মধ্যে কোন স্বীকৃতি (acceptance) পাওয়া না যায় কিংবা আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা তার কোন কর্মকর্তাকে হিসাব রক্ষণ অফিসে না পাঠান তাহলে আরও পনের দিনের সময় দিয়ে তাগিদ পত্র দিতে হবে। যদি সঙ্গতি সাধন না করা হয় তাহলে হিসাব রক্ষণ অফিস কর্তৃক প্রণীত হিসাব চূড়ান্ত বলে গণ্য করা হবে।
জেলা/উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস কর্তৃক প্রেরিত হিসাবে অবশ্যই একটি হিসাবের সঙ্গতি বিধায়ক বিবৃতি থাকতে হবে। ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস জেলা/উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে প্রাপ্ত হিসাবের সঙ্গতি বিধায়ক বিবৃতিগুলো তার নিজের অফিসের অনুরূপ বিবৃতির সাথে একত্র করে পাঁচ দিনের মধ্যে সঙ্কলিত সঙ্গতিবিধায়ক বিবৃতি প্রদান হিসাব রক্ষণ অফিসে প্রেরণ করবেন। প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা তার মন্ত্রণালয়ের সাথে হিসাবের সঙ্গতি সাধন করে সঙ্গতি বিধায়ক বিবৃতিসহ হিসাব সমাপ্তির পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে হিসাব মহা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন। হিসাব মহা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের হিসাব শাখা এবং সেন্টার ডাকা প্রসেসিং ইউনিট (সিডিপিউ) প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এবং ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি সংশ্লিষ্ট রেজিস্টার লিপিবদ্ধ করে প্রয়োজনীয় মন্ত ব্যসহ পাঁচদিনের মধ্যে নথি উপস্থাপন করবেন।