আজকের খবর ২০২৫

সরকারি চাকরির নতুন অধ্যাদেশ ২০২৫ । চার অপরাধে শাস্তি ১৪ দিনের মধ্যে শাস্তি দেওয়া যাবে?

সূচীপত্র

সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত চারটি অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই চাকরিচ্যুতির সুযোগ রাখা হয়-যেটি পূর্বের আইনে ০১ বছর কার্যক্রয় পরিচালনা হতো সেটি এখন ১ মাসের মধ্যেই নিষ্পত্তি হবে– সরকারি চাকরির নতুন অধ্যাদেশ ২০২৫

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫কি আছে? এতে চার ধরনের অপরাধের জন্য সরকারি কর্মচারীদের কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- অননুগত্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি বা দায়িত্বে গাফিলতি, অন্যদের উসকানি দেওয়া বা কর্তব্য থেকে বিরত রাখার চেষ্টা এবং অন্যদের কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়া। এই চার অপরাধের জন্য নিম্নপদে অবনমিতকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্তের শাস্তি দেওয়া যাবে।

আদালতের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ নেই? না। সরকার যখন দুর্বল হয় তখনই কিন্তু সে নিবর্তনমূলক আইনের আশ্রয় নেয়। কারণ, তার তো আর কোনো উপায় নেই। দক্ষতা, যোগ্যতা ও নেতৃত্ব দিয়ে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। সেজন্য তারা (সরকার) কঠোর আইনের দিকে যাচ্ছে সেটি প্রয়োগের জন্য চেষ্টা করবে। এটি অপপ্রয়োগে নিম্নগ্রেডের কর্মচারীদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে যা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে।

বাংলাদেশে কি এই কালা কানুন পূর্বেও বহাল ছিল? হ্যাঁ। ১৯৭৯ সালের বিশেষ বিধান অধ‌্যাদেশের আদলে ২০১৮ সালের চাকরি আইন সংশোধনের উদ‌্যোগ নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অনেক নিরীহ কর্মচারী কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাকরিচ্যুত হবেন। এতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সহজে দুর্নীতি করতে পারবে ও চাকরির ভয় দেখিয়ে হয়রানি ও কর্মচারী নিপীড়নের স্টিম রোলার চালাবে।- বাদিউল কবীর। সরকারি কোনো কর্মচারী যদি এমন কোনো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন, যার কারণে অন্য যেকোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে। অন্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে, ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন; অন্য যেকোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন; যেকোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন- তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন।

চার অপরাধের জন্য চাকরিচ্যুতির বিধান রেখে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। বিশেষজ্ঞরা এটিকে ‘জঙ্গি আইন’ আখ্যা দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, এতে অনেক নিরীহ কর্মচারী কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাকরিচ্যুত হবেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা সহজে দুর্নীতি করতে পারবে এবং চাকরির ভয় দেখিয়ে হয়রানি ও নিপীড়নের স্টিম রোলার চালাবে। এতে সবচেয়ে বেশি ভুগবে নিরীহ কর্মচারীরা।

যদি এই আইন প্রয়োগ করা হয় সেটি অসদাচারণের দায়ে প্রয়োগ করা হবে এবং সভা সমাবেশ কমে আসবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। নিম্নগ্রেডের কর্মচারীরা ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে চাকরি চলে যাওয়া ভয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অন্যায় আদেশ মেনে নিতে তারা বাধ্য হবেন বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ পিডিএফ ডাউনলোড

নতুন চাকির আইন ২০২৫ । চার অপরাধের জন্য নিম্নপদে অবনমিতকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্তের শাস্তি দেওয়া যাবে।

  1. অননুগত্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গ
  2. কর্মস্থলে অনুপস্থিতি বা দায়িত্বে গাফিলতি
  3. অন্যদের উসকানি দেওয়া বা কর্তব্য থেকে বিরত রাখার চেষ্টা এবং
  4. অন্যদের কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়া। এই

সরকার কেন এমন কঠোর আইন করলো?

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেই প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন কঠোর করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে কোনো নিবর্তনমূলক আইন করা যাবে না। চাইলেই যে কাউকে চাকরিচ্যুত করার বিধান ভবিষ্যতে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি করবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে চাকরিচ্যুতির মতো কঠিন শাস্তি দিতে হবে। এটি সংবিধানের লঙ্ঘন, এটি কালাকানুন। এ ধরনের জঙ্গি আইন পাস করা উচিত না।- আবু আলম মো. শহীদ খান-একটি পত্রিকাকে জানান তিনি। আন্দোলন-বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে সম্প্রতি ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’ ফের কার্যকর করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়।

ক্ষতিগ্রস্থ কি নিম্নগ্রেডের কর্মচারীরা হবে?

হ্যাঁ। শহীদ খান জাগো নিউজকে বলেন ‘কঠোর আইন করার বিষয়টিকে আমি একেবারে খারাপ বলবো না। এখন কর্মচারীরা নিজেদের স্বার্থের জন্য নেমেছেন, তাদের গোষ্ঠী স্বার্থের জন্য সোচ্চার হয়েছেন। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অচলাবস্থা, মানুষ সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে না। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে।’‘অন্যায্য আন্দোলন দমনের জন্য কঠোর আইন দরকার আছে। তবে সেটা নিবর্তনমূলক হবে না। আমি যাকে খুশি তাকে তার চাকরি খেয়ে ফেলবো, সেটা হবে না। যারা অন‌্যায‌্য আন্দোলন করে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, জনসেবাকে বিঘ্নিত করে, রাস্তাঘাট বন্ধ করে তাদের শায়েস্তা করার জন্য কঠোর আইনের প্রয়োজন রয়েছে। তবে এই আইনের মাধ্যমে নিরীহ কর্মচারীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কর্মচারীদের ভয়টা তো ওখানেই।’ সাবেক আমলা ফিরোজ মিয়া আরও বলেন, ‘তারা (নিরীহ কর্মচারীরা) মনে করে আন্দোলন করবে নেতারা, তারা তো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী থাকে, তাদের চাকরি যাবে না। চাকরি তো যাবে নিরীহদের। ভয়টা এখানেই। এ ধরনের আইনের অপপ্রয়োগের ভয়টা বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রের চাকরি পাওয়াটা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষা, অপেক্ষা, তারপর নিয়োগ হয়। সেক্ষেত্রে এত সহজে তাকে চাকরি থেকে বিদায় করে দেওয়া এটাতো মামা বাড়ির আবদার না!’‘এই আইন বাস্তবায়ন করলে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য গঠন করা হয়েছিল সে কথা বলার আর সুযোগ থাকবে না’- মন্তব‌্য করেন সাবেক এ আমলা।

   
   
   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *