সূচীপত্র
সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই সংশোধনে, অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে এবং অপরাধের ধরণের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে– সরকারি চাকরির নতুন (২য়) অধ্যাদেশ ২০২৫
বৈধ আদেশ মানতে হবে? নতুন অধ্যাদেশে সরকারের ‘বৈধ আদেশ’ অমান্য করাকে ‘সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের প্রতি বৈধ আদেশ বলতে বোঝায়—উচ্চতর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত এমন কোনো নির্দেশ যা আইনগতভাবে প্রদত্ত — আদেশটি বিদ্যমান আইন, বিধিমালা বা সরকারি নীতিমালার পরিপন্থী নয়। কর্তৃত্বাধীন ব্যক্তি বা দপ্তরের পক্ষ থেকে দেওয়া — যে কর্মকর্তা আদেশ দিচ্ছেন, তিনি সেই বিষয়ে আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। আদেশটি সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব ও দায়িত্বক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে। আদেশটি অসদাচরণ, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নির্দেশ দেয় না। বৈধ আদেশ পালন না করলে সেটা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবে গণ্য হতে পারে, যার জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। তবে, যদি আদেশটি হয় অবৈধ, বেআইনি বা অনৈতিক — যেমন ঘুষ নেওয়ার নির্দেশ, মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরি করা — তবে সেই আদেশ পালন না করাই একজন সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব।
আদালতের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ নেই? না। সরকার যখন দুর্বল হয় তখনই কিন্তু সে নিবর্তনমূলক আইনের আশ্রয় নেয়। কারণ, তার তো আর কোনো উপায় নেই। দক্ষতা, যোগ্যতা ও নেতৃত্ব দিয়ে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। সেজন্য তারা (সরকার) কঠোর আইনের দিকে যাচ্ছে সেটি প্রয়োগের জন্য চেষ্টা করবে। তবে এখন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্রপতির নিকট ৩০ দিনের ভিতর রিভিউ আবেদন করা যাবে। ৩০ দিন অতিবাহিত হলে আর আপীল করার সুযোগ থাকবে না।
প্রতিবেদন সময়মত জমা না দিলে তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? হ্যাঁ। তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারলে নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারলে তা তাদের অদক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এটি সরকারি কর্মচারী বাতায়ন ও ডোসিয়ারে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষিণ করা হবে। এছাড়া চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
নতুন সংশোধিত চাকরি আইন ২০২৫ । ২য় সংশোধনেও অভিযুক্ত জবাব দিলে বা না দিলে তদন্ত থেমে থাকবে না। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তির কপি ও তদন্ত রিপোর্ট সহ কর্মচারীকে প্রেরণ করা হবে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি নোটিশের জবাব দিলে অথবা জবাব না দিলেও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তি তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। তদন্ত কমিটির সদস্যদের অভিযুক্ত ব্যক্তির থেকে কর্মে জ্যেষ্ঠ হতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি নারী হলে তদন্ত কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্যকে রাখতে হবে। তদন্তের আদেশ পাওয়ার পরবর্তী ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। যুক্তিসঙ্গত কারণে এই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারলে সর্বোচ্চ একবারের জন্য সাত কার্যদিবস সময় বাড়ানো যাবে।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ পিডিএফ ডাউনলোড
নতুন আইনে পরিবর্তন ২০২৫ । সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে এই অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে
- তদন্ত কমিটি গঠন: অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
- অপরাধের ধরণে পরিবর্তন: “অসদাচরণ” এর সংজ্ঞায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যেখানে “অনানুগত্য” শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
- অপসারণের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক অবসর: “অপসারণ” এর পরিবর্তে “বাধ্যতামূলক অবসর” এর বিধান রাখা হয়েছে।
- অন্যান্য সুবিধা: বাধ্যতামূলক অবসরে গেলেও পিআরএল এবং ছুটি নগদায়নের সুবিধা পাবেন কর্মকর্তারা।
- এই পরিবর্তনগুলো মূলত সরকারি কর্মচারীদের সুরক্ষার জন্য করা হয়েছে এবং তাদের প্রতি সরকারের মনোভাব আরও সহানুভূতিশীল হবে।
সরকারি কাজে বিঘ্ন ঘটালে শাস্তি?
হ্যাঁ। “৩৭ক। সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান— এই আইন বা এই আইনের অধীন প্রণীত বিধিমালায় যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোনো সরকারি কর্মচারী— ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন, আইনসংগত কারণ ছাড়া সরকারের কোনো আদেশ, পরিপত্র এবং নির্দেশ অমান্য করেন বা তার বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করেন বা এসব কাজে অন্য কোনো সরকারি কর্মচারীকে প্ররোচিত করেন, অথবা ছুটি বা যুক্তিসংগত কোনো কারণে ব্যতীত অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে সমবেতভাবে নিজ কর্ম হতে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন, অথবা যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য পালনে বাধাগ্রস্ত করেন, তা হলে তা হবে ‘সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ’। আর এ জন্য তাঁকে নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনতিকরণ বা বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া বা চাকরি হতে বরখাস্ত করা যাবে।
নারীগণ কি এখন সুরক্ষিত?
হ্যাঁ। অনানুগত্য শব্দটি বাদ এবং কমিটিতে নারী সদস্য অন্তর্ভূক্ত করার ফলে নারীরা সুরক্ষিত থাকেব। অভিযুক্ত ব্যক্তি নোটিশের জবাব দিলে অথবা জবাব না দিলেও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা অভিযোগ গঠনকারী ব্যক্তি তিন দিনের মধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে। তদন্ত কমিটির সদস্যদের অভিযুক্ত ব্যক্তির থেকে কর্মে জ্যেষ্ঠ হতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি নারী হলে তদন্ত কমিটিতে আবশ্যিকভাবে একজন নারী সদস্যকে রাখতে হবে। তদন্তের আদেশ পাওয়ার পরবর্তী ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। যুক্তিসঙ্গত কারণে এই সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারলে সর্বোচ্চ একবারের জন্য সাত কার্যদিবস সময় বাড়ানো যাবে।