সূচীপত্র

কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন বৈধ পন্থায় জমির মালিকানা অর্জন করলে, সরকারি রেকর্ড সংশােধন করে তার নামে রেকর্ড হালনাগাদ করাকেই নামজারি বলা হয়। কোনাে কারণে জমি হস্তান্তর হলে খতিয়ানে পুরােনাে মালিকের নাম বাদ দিয়ে নতুন মালিকের নাম প্রতিস্থাপন করাননাকে মিউটেশন বা নামজারি বলে।

ভূমি জরিপকালে চুড়ান্ত খতিয়ান প্রস্তত করার পূর্বে ভূমি মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি ভূমি মালিকদের প্রদান করা করা হয়। তাকে “মাঠ পর্চা” বলে। এই মাঠ পর্চা রাজস্ব অফিসার কর্তৃক সত্যায়ন হওয়ার পর যদি কারাে কোন আপত্তি
থাকে তাহলে তা শােনানির পর খতিয়ান চুড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়। আর চুড়ান্ত খতিয়ানের অনুলিপিকে “পর্চা” বলে।

খতিয়ান কি? মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভুমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জমির দাগ নং, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে।

এসএ খতিয়ান কি? SA-এর পূর্ণরূপ হলাে State Acquisition Survey. ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর সরকার ১৯৫৬ সালে সমগ্র পূর্ববঙ্গ প্রদেশে জমিদারী অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ২/৪/১৯৫৬ তারিখে এই আইনের ৩ ধারার আওতাধীন বিজ্ঞপ্তির মুলে। সরকার কর্তৃক সকল জমিদারি দখল নেয়ার পর উক্ত এ্যাক্টের ১৭ ধারা মােতাবেক যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় তা এস এ খতিয়ান বলে পরিচিত ।

আরও দেখুন: অনলাইন খতিয়ান/ পর্চা প্রাপ্তির আবেদনের অবস্থা ২০২২। যেভাবে ভূমি অফিসের আবেদনের অবস্থা দেখবেন

দাখিলা কি? ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের বিপরীতে প্রদত্ত রসিদকে দাখিলা বলে।

সিএস খতিয়ান কি? cs-এর পূর্ণরূপ হলাে Cadastral Survey. একে ভারত উপমহাদেশের প্রথম জরিপ বলা হয় যা ১৮৮৮ (ভূমি মন্ত্রণালয়। অনসারে ১৮৮৭) সাল হতে ১৯৪০সালের মধ্যে পরিচালিত হয়। এই জরিপ ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র আইনের ১০ম পরিচ্ছেদে অনুসারে সিলেট ও পার্বত্য জেলা ব্যতীত সারা দেশে পরিচালিত হয়। উক্ত জরিপের মাধ্যমে | জমির বিস্তারিত মৌজা নকশা (ম্যাপ) প্রস্তুত করা হয় এবং প্রত্যেক মালিকের জন্য দাগ নম্বর উল্লেখপূর্বক ভুমির বাস্তব অবস্থা, আয়তন, শ্রেণী, পরিমাণ, খাজনার পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখপূর্বক খতিয়ান প্রস্তুত করা হয়।

আর এস খতিয়ান কি?  RS এর পূর্ণরূপ হলাে Revisional Survey. সি.এস. জরিপ সম্পন্ন হওয়ার সুদীর্ঘ ৫০ বছর পর এই জরিপ পরিচালিত হয়। জমির অবস্থা, প্রকৃতি, মালিক, দখলদার ইত্যাদি হালনাগাদ করার লক্ষ্যে এ জরিপ সম্পন্ন করা হয়। এস.এ. জরিপের সময় সরেজমিনে তদন্ত বা জরিপ। কার্যক্রম পরিচালনা হয়নি। জমিদারদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এস.এ জরিপ বা খাতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছিল যার কারণে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যায়। এই ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরেজমিনে ভূমি জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেয় যা আর.এস বা. Revisional Survey জরিপ হিসেবে পরিচিত। এই জরিপে প্রস্তুতকৃত নকশা (ম্যাপ) এবং খতিয়ান নির্ভূল হিসেবে গ্রহণীয়।

বি এস খতিয়ান কি? BS-এর পূর্ণরূপ হলাে Bangladesh survey. ১৯৯৮-৯৯ সাল হতে বর্তমানে চলমান জরিপকে বি, এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ বলে। যা এখনাে চলমান। পি এস খতিয়ান কি? PS-এর পূর্ণরূপ হলাে Pakistan Survey. এস.এ. জরিপকেই পি.এস, জরিপ বলে। ১৯৫৬ হতে ১৯৬২ পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়।

আরও দেখুন- জমির মালিকানা কার? দলিল, খতিয়ান ও দখল দিয়ে জমির মালিকানা নির্ণয় করার নিয়ম

তফসিল কি? জমির পরিচয় বহন করে এমন বিস্তারিত বিবরণকে “তফসিল” বলে। তফসিলে, মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ার নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ থাকে।

মৌজা কি? যখন CS জরিপ করা হয়। তখন থানা ভিত্তিক এক বা একাধিক গ্রাম, ইউনিয়ন, পাড়া, মহল্লা আলাদা করে বিভিন্ন এককে ভাগ করে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে চিতি করা হয়েছে। আর বিভক্তকৃত | এই প্রত্যেকটি একককে মৌজা বলে।

দাগ নং কি? যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়। তখন মৌজা নক্সায় ভুমির সীমানা চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা। আলাদ নাম্বার দেয়া হয়। আর এই নাম্বারকে নাম্বার বলে। একেক নাম্বারে বিভিন্ন পরিমাণ ভুমি থাকতে পারে। মূলত, নাম্বার অনুসারে একটি মৌজার অধীনে ভূমি মালিকের সীমানা ঘূর্টি বা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রর্দশন করা হয়।

জমির হিসাব পদ্ধতি

Caption: Land Measurement Formulus

নকশায় ভুল বসত কোনাে প্লট এর দাগ নম্বর বাদ পড়লে, শেষ প্লট নম্বরটির পরের নম্বরটি নিচে লিখে এবং বাদ পড়া প্লটের নম্বরটি উপরে লিখে (ভগ্নাংশের ন্যায়) প্রাপ্ত যে নম্বর পাওয়া যায় তা দিয়ে বাদ পড়া প্লটটি চিহ্নিত করা হয় তাকে বাটা দাগ বলে।

ভুমি জরিপকালে প্রাথমিক অবস্থায় নকশা প্রস্তুত অথবা সংশােধনের সময় নকশার প্রতিটি ভুমি এককে যে নাম্বার দেওয়া হয় সে সময় যদি কোন নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে তাবে ছুটা বলে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দুটি একত্র করে নকশা পুন: সংশােধন করা হয় তখন যে নাম্বার বাদ যায় তাকেও ছুটা বলে।

খাস জমি কি? সরকারের ভূমি মন্ত্রনালয়ের | আওতাধিন যে জমি। সরকারের পক্ষে কালেক্টর বা ডিসি তত্ত্বাবধান করেন এমন জমিকে খাস জমি বলে।

কবুলিয়ত কি? সরকার কর্তৃক কৃষককে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।

DCR কি?

ভূমি কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায় করার পর যে নির্ধারিত ফর্মে (ফর্ম নং ২২২) রশিদ দেওয়া হয় তাকে DCR বলে।

দলিল কি? যে কোন লিখিত বিবরণ আইনগত সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযােগ্য তাকে দলিল বলা হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন আইনের বিধান মােতাবেক জমি ক্রেতা এবং বিক্রেতা সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য যে চুক্তিপত্র সম্পাদন ও রেজিস্ট্রি করেন সাধারন ভাবে তাকে দলিল বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *