জমির মালিকানা কার? দলিল, খতিয়ান ও দখল দিয়ে জমির মালিকানা নির্ণয় করার নিয়ম

বিখ্যাত সংগীত শিল্পী আব্দুল আলীমের গানের সুরে বলতে হয়—পরের জায়গা পরের জমিন—- ঘর বানাইয়া আমি রই—-আমি তো এই ঘরের মালিক নই।

জমির প্রকৃত মালিক কে, তা নিয়ে ঝামেলা কম নয়। আর তাই- জমি তুমি কার? এই প্রশ্ন টি প্রায়ই আমরা শুনি। প্রশ্ন গুলো মূলত নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়েঃ

  • দলিল এবং খতিয়ান ছাড়া শুধু দখলে থেকে কি জমির মালিক হওয়া যায়?
  • আবার শুধুমাত্র বৈধ দলিল থাকলেই কি জমির মালিক হওয়া যায়, যদি জমির দখল না থাকে?
  • দলিল এবং দখল ছাড়া শুধু খতিয়ান দিয়ে কি জমির মালিক হওয়া যায়?

আসুন প্রশ্ন গুলোর উত্তর জানি।

প্রথমেই জানি, দলিল দিয়ে মালিকানার বিষয়।

রহমান সাহেবের একখন্ড জমির দলিল রয়েছে। তবে উক্ত জমির কোন খতিয়ান তার নিজ নামে নাই এমনকি জমির দখলও নাই। এমতাবস্থায়, উক্ত জমিতে রহমান সাহেবের মালিকানার অবস্থান কি?

মনে রাখতে হবে, দলিল হলো কোন জমির মালিকানার অন্যতম উপাদান। দলিলের মাধ্যমেই সাধারনত জমির মালিকানা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ রহমান সাহেবের দলিল যদি বৈধ হয়ে থাকে বা বৈধ প্রক্রিয়ায় তিনি মালিক হয়ে থাকেন, তবে জমির দখল না থাকলেও তিনি তা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। এক্ষেত্রে, প্রথম করনীয় হলো অবৈধ দখলদারকে রহমান সাহেবের মালিকানার বিষয়ে জানাতে হবে এবং দখল খালি করে দিতে বলতে হবে। পরবর্তীতে দখলদার উক্ত জমি খালি না করে দেন তবে আদালতে মামলা দায়ের করে ডিক্রিজারির মাধ্যমে উক্ত জমি রহমান সাহেব পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। অন্যদিকে, এ মামলা অবশ্যই অবৈধ দখলের ১২ বছরের মধ্যে হতে হবে।

এবার আসুন জানি, শুধুমাত্র খতিয়ানের মাধ্যমে জমির মালিকানা সম্পর্কে।

একখন্ড জমির খতিয়ানে করিম সাহেবের নাম রয়েছে। তবে উক্ত জমির মালিকানা দলিল অথবা দখল কোনটিই করিম সাহেবের নেই। শুধুমাত্র খতিয়ান দিয়ে কি করিম সাহেব জমির মালিকানা দাবি করতে পারবেন?

খতিয়ান হলো সরকারের খাজনা আদায়ের একটা মাধ্যম। খতিয়ানের মাধ্যমে সরকার নিশ্চিত হয়, জমি কার দখলে আছে, পরিমান কত, জমির প্রকৃতি কি? শুধুমাত্র একটি খতিয়ান দিয়ে জমির মালিক হওয়া যায় না। কারণ, সরকার কর্তৃক জমি জরিপকালে অবৈধ পন্থায় খতিয়ান তৈরি করা যায়। আর তাই এরূপ খতিয়ান দিয়ে জমির মালিক হওয়া যায় না। খতিয়ান সংশোধনের জন্য মামলা দায়েরের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নাই (১২ বছর বা এরকম কিছু)। যেকোন সময় মামলা দায়ের করে খতিয়ান সংশোধন করা যায়।

তবে খতিয়ান যদি পূর্ব মালিকানার ধারাবাহিক ভাবে/ পর্যায়ক্রমে হয়ে থাকে অর্থাৎ C.S, S.A, R.S থেকে হয়ে থাকে তবে সেটি ভিন্ন কথা। শুধু একটি খতিয়ান দিয়ে জমির মালিকানা ফিরে পাওয়া কঠিন।

এবার আসুন জানি, শুধু দখল থাকলে জমির মালিকানা কি হবে? অর্থাৎ কোন ব্যক্তির যদি জমির দখল থাকে, অন্য কোন দলিল এবং খতিয়ান না থাকে তবে মালিকানা কি হবে?

শুধু দখলে থেকে জমির মালিক হওয়া যায় তবে বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। কোন ব্যক্তি জমির দখলে থেকে যদি বিরোধ বা আপত্তি ছাড়া ১২ বছর কাল জমির ভোগদখল করেন তবে তামাদি আইনের ২৮ ধারায় মামলা করে আদালতের ডিক্রি নিয়ে মালিকানা সৃষ্টি করা যায়। এক্ষেত্রে, বিরোধ-আপত্তি না থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *