ভূমি আইন ২০২৫

নতুন ভূমি আইন ২০২৫: ভূমি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির পথে এক নতুন দিগন্ত

ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ – দেশের বিচারব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে নতুন ‘ভূমি আইন ২০২৫’ পাসের মাধ্যমে। এই আইন ভূমি-সম্পর্কিত দেওয়ানী মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির পথ খুলে দিয়েছে। এখন থেকে ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকবে না; বরং সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যেই এর নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নতুন এই আইনটি দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও আধুনিক, স্বচ্ছ এবং জনবান্ধব করে তুলবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন, তারা সহজে ও দ্রুত বিচার পাবেন।

আইনের মূল সুবিধাগুলো

নতুন আইনের কয়েকটি মূল সুবিধা নিচে তুলে ধরা হলো:

১. সময়সীমার সীমাবদ্ধতা: ভূমি মামলার দীর্ঘসূত্রিতা রোধ করতে এই আইনে সময় আবেদনের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। এখন থেকে কোনো একটি মামলায় বাদী এবং বিবাদী উভয়েই সর্বোচ্চ ২ বার করে সময় চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। ফলে একটি মামলায় মোট ৪ বারের বেশি সময় চাওয়া যাবে না, যা মামলাটিকে এক বছরের মধ্যে শেষ করতে বাধ্য করবে।

২. ডিজিটাল মাধ্যমে সমন জারি: এতদিন ডাকযোগে সমন পাঠানো একটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া ছিল। নতুন আইনে এই পদ্ধতিকে সহজ করতে ইমেইল এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সমন জারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটি বিচার প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করবে।

৩. ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য: এখন থেকে দেশের বাইরে থাকা সাক্ষীও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য দিতে পারবেন। এর ফলে সাক্ষী হাজির না হওয়ার কারণে কোনো মামলার কার্যক্রম আর আটকে থাকবে না।

আরও একটি বড় পরিবর্তন

এই আইনের অধীনে, মামলা জেতার পর ডিক্রি জারির জন্য নতুন করে কোনো মামলা করতে হবে না। আদালত রায় দেওয়ার পর সরকার নিজ উদ্যোগে প্রশাসনের মাধ্যমে বিজয়ী পক্ষকে জমির দখল বুঝিয়ে দেবে। এটি বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটি বড় স্বস্তি।

ভূমি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এই আইনের প্রশংসা করে বলেন, “এই সংস্কার বিচারব্যবস্থায় গতি আনবে এবং সাধারণ মানুষের ভূমি-সংক্রান্ত হয়রানি বন্ধ করবে। এটি জমির অবৈধ দখল এবং কূটকৌশলের অবসান ঘটাবে।”

এই আইনটি ভূমি মামলার জটিলতা কমিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর করে তুলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। তবে এই আইনের সুফল পেতে হলে মামলা দায়েরের সময় সঠিক প্রক্রিয়া এবং যথাযথ কাগজপত্র অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।

সূত্র দেখুন: ভূমি আপীল বোর্ড বিধিমালা, ২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *