আজকের খবর ২০২৫

সরকারি কর্মচারীগণের পেনশন সহজীকরণ আদেশ ২০২০ । দ্রুত সুবিধা নিশ্চিত, ই-চাকরি বৃত্তান্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে কি?

সরকারি কর্মচারীদের অবসরজনিত সুবিধাদি এবং তাদের মৃত্যুর পর পরিবারবর্গের প্রাপ্য সুবিধা সঠিক সময়ে প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ কর্তৃক গত ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে জারি করা হয়েছে “সরকারি কর্মচারীগণের পেনশন সহজীকরণ আদেশ, ২০২০” এই আদেশের মাধ্যমে ২০০৯ সালের পুরোনো বিধি/পদ্ধতি প্রতিস্থাপন করে পেনশন প্রক্রিয়াকে অধিকতর সহজ ও গতিশীল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তবে এটি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য হবে না

নতুন আদেশের কিছু মূল দিক নিচে তুলে ধরা হলো:

১. সময়সীমা কঠোর করা:

  • প্রত্যাশিত শেষ বেতনপত্র (ইএলপিসি) জারি: সরকারি কর্মচারী অবসর-উত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার ১১ (এগার) মাস পূর্বে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিস/আয়ন ও ব্যয়ন কর্মকর্তা ইএলপিসি জারি করবেন
  • পেনশন মঞ্জুরির সময়সীমা: পেনশনের আবেদন প্রাপ্তির ৫ (পাঁচ) মাসের মধ্যে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কর্মচারীর সার্ভিস বুক ও ই-চাকরি বৃত্তান্ত হালনাগাদ করে তিন (৩) মাসের মধ্যে অবসর-উত্তর ছুটি, ছুটি নগদায়ন (লাম্পগ্রান্ট) ও পেনশন মঞ্জুরিপত্র যুগপৎ জারি করবেন
  • পেনশন পরিশোধ আদেশ (পিপিও) ও অর্থ প্রদান: পেনশন মঞ্জুরির কাগজপত্র প্রাপ্তির ১০ (দশ) কর্মদিবসের মধ্যে হিসাবরক্ষণ অফিস পিপিও জারি করবে
    • লাম্পগ্রান্টের চেক/ইএফটি পিআরএল-এ গমনের পরবর্তী ০৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে কর্মচারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে
    • আনুতোষিকের চেক/ইএফটি চূড়ান্ত অবসরগ্রহণের দিন/পিআরএল শেষ হওয়ার পরের দিন প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে

২. ডিজিটাল রেকর্ড ও কল্যাণ কর্মকর্তা:

  • ই-চাকরি বৃত্তান্ত বাধ্যতামূলক: নন-গেজেটেড ও গেজেটেড উভয় প্রকার সরকারি কর্মচারীর চাকরি সংক্রান্ত সকল তথ্য (নিয়োগ, পদোন্নতি, ছুটি, অডিট আপত্তি, বিভাগীয় মামলা ইত্যাদি) নির্ধারিত ফরম্যাটে ‘ই-চাকরি বৃত্তান্তে’ ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিতভাবে অর্থ বিভাগের IBAS++ সিস্টেমে এন্ট্রি দিতে হবে
  • কল্যাণ কর্মকর্তা মনোনয়ন: পেনশন মামলার প্রক্রিয়াকরণে সহায়তা করার জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগ/অধিদপ্তরে একজন কল্যাণ কর্মকর্তা মনোনয়ন নিশ্চিত করতে হবে। কল্যাণ কর্মকর্তা পেনশন মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ ও হিসাবরক্ষণ অফিসের মধ্যে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করবেন

৩. আর্থিক সুবিধা ও পুনঃস্থাপন:

  • বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট: পেনশনারগণ/পারিবারিক পেনশনারগণ মাসিক পেনশনের ওপর ৫% হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য হবেন
  • পেনশন পুনঃস্থাপন: শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের অবসরগ্রহণের তারিখ (বা পিআরএল শেষ হওয়ার পরের দিন) থেকে ১৫ বছর সময় অতিক্রান্তের পর পেনশন পুনঃস্থাপন করা হবে
  • চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা: পেনশনার/পরিবার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) মাসিক পেনশনের পাশাপাশি চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা প্রাপ্য হবেন

৪. পারিবারিক পেনশন সহজীকরণ:

  • বিধবা স্ত্রী/বিপত্মীক স্বামী: মৃত মহিলা কর্মচারীর স্বামী পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হইলে বিধবা স্ত্রীর অনুরূপ হারে ও পদ্ধতিতে আজীবন পারিবারিক পেনশন প্রাপ্য হবেন
  • প্রতিবন্ধী সন্তানের আজীবন পেনশন: সরকারি কর্মচারীর প্রতিবন্ধী সন্তান যদি দৈহিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ীভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতাহীন হয়ে উপার্জনে অক্ষম হন, তবে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন ও মেডিকেল বোর্ডের সনদ সাপেক্ষে তিনি আজীবন পারিবারিক পেনশন প্রাপ্য হবেন
  • আত্মহত্যার ক্ষেত্রে পেনশন: আত্মহত্যার কারণে মৃত কর্মচারীর পরিবারকে স্বাভাবিক মৃত্যুর ন্যায় প্রচলিত বিধি অনুযায়ী পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক প্রদান করতে হবে

৫. জটিলতা হ্রাস ও সাময়িক পেনশন:

  • অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি: অবসরগ্রহণকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অডিট আপত্তিতে ব্যক্তিগত দায় অনধিক ০৩ (তিন) মাসের মধ্যে নির্ধারণ করতে হবে ব্যক্তিগত দায় না থাকলে পেনশন মঞ্জুরিতে কোনো বিলম্ব করা যাবে না অডিট অসম্পন্ন থাকার কারণেও পেনশন মঞ্জুরিতে বিলম্ব করা যাবে না
  • সাময়িক পেনশন প্রদান: না-দাবী প্রত্যয়নপত্র বা অন্যান্য কাগজপত্রাদির অভাবে পেনশন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা না গেলে, আবেদনক্রমে প্রাপ্য আনুতোষিকের শতকরা ৮০ ভাগ এবং প্রাপ্য পূর্ণ নিট পেনশন সাময়িকভাবে প্রদান করতে হবে
  • বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন: পেনশন মঞ্জুরির ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন বিবেচনার প্রয়োজন হবে না

     

পেনশন নীতিমালা ২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *