আকুপ্রেশার পদ্ধতি কত পুরাতন, এটি কোন দেশ থেকে আবিস্কৃত হয়েছে, এ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। বিচার্য হলাে যে, আকুপ্রেশার যার কার্যপ্রণালী এবং প্রভাব আকুপাংচারে সমতুল্য। আকুপ্রেশারের আবিস্কার প্রায় ৫০০০ হাজার বছর আগে হয়েছিল । আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের প্রাচীন গ্রন্ত্রগুলিতে ভারতে প্রচলিত আকুপাংচার পদ্ধতির বর্ণনা দেখা যায়। প্রচীনকালে চীন থেকে যে সব পর্যটক ভারত বর্ষে এসেছিলেন তাদের সাহায্যে এই পদ্ধতির জ্ঞান চীনে গিয়ে পৌঁছায়।

সেখানে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে থাকেন। শুধু তাই নয়, একের অধিক লােক সমৃদ্ধ করে প্রয়ােগের মাধ্যমে আশ্চর্যজনক শক্তি লাভ করেন। এ কারণে এটি আজ সারা বিশ্বের চীনদেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতি নামে পরিচিতি হয়ে উঠেছে। ২রা জুলাই ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ভারতের রাজ্যসভায় এর রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে বলেন যে, আকুপাংচার আবিষ্কার চীন দেশে নয়, ভারত বর্ষেই এর আবিষ্কার হয়েছিল। মানব সভ্যতার আদিকাল থেকেই ম্যাসেজ বা মালিশ, ব্যায়াম জলধারা, গরম সেঁক এইসব পদ্ধতি সমূহ শরীরের সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

উপমহাদেশের কয়েক হাজার বছরের পূর্বে নানা প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা আয়ুর্বেদীয় পদ্ধতিতেও শারিরীক উপায়ে চিকিৎসার প্রচলন ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক শপথবাক্য পাঠ করে এ্যালােপ্যথিক ডাক্তাররা চিকিৎসার লাইসেন্স পান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুবলে গণ্য প্রাচীন গ্রীক চিকিৎসা বিজ্ঞানী Hippocrates (খৃঃ পূঃ ৪৬০ অব্দ) আকুপ্রেশার থেরাপীর/রিফেক্সোলজির ব্যবস্থা দিতেন বলে জানা যায়। প্রাচীন ভারতে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি প্রচলিত ছিল বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীনকালে ভারতীয় মূণি ঋষি, যােগী, সন্ন্যাসী, দরবেশ ও আউলিয়াগণ রােগগ্রস্থ মানুষদের এই চিকিৎসা পদ্ধতির সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। তবে ভারতের বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও করতল ও পদতলে এমনকি দেহের অন্যান্য অংশেও চাপ দিয়ে রােগ নির্ণয় ও নিরাময় করা হয়। প্রাচীনতম দেশ চীন, মিশর ও উত্তর আমেরিকার খ্রীষ্টের জন্মের ও দু-আড়াইশ বছর আগে এই চিকিৎসা পদ্ধতি চর্চার নিদর্শন পাওয়া যায়।

আকুপ্রেশার থেরাপি ইতিহাস

প্রাচীনকালে রিফেক্সোলজির দুর্লভ প্রয়ােগ চিত্র।

আকুপ্রেশার যেভাবে কাজ করে

আকুপ্রেশার থেরাপী হল মানুষের হাত, পা, দেহ ও দেহের কিছু প্রধান কেন্দ্রের উপর চাপ দেওয়া। এই কেন্দ্রগুলিকে রেসপন্স সেন্টার বা রিফলেক্স সেন্টার(Reflex) বলা হয় । রােগের অবস্থা অনুসারে এই কেন্দ্রগুলির উপর প্রেশার দিলে খুব যন্ত্রনা হয়, কারণ হলাে এটি খুবই সংবেদনশীল হয়ে থাকে। প্রত্যেক রেসপন্স কেন্দ্র হাত পা ও দেহের উপর প্রায় সময় বিভিন্ন বীজের দানার আকার হয়ে থাকে। প্রত্যেক রেসপন্স কেন্দ্রে চাপ দিলে বা বিন্দুতে প্রেশার নিলে দেহের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া শক্তি জাগ্রত হয়। এই শক্তি বাস্তবে বিদ্যুৎ তরঙ্গের মত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ পত্যঙ্গে কাজ করে। যার ফলে দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং মানব দেহের বিভিন্ন রােগ প্রতিরােধ ও প্রতিকার করা যায়। হাত এবং পায়ের বিন্দু গুলিতে প্রেশার বা চাপ দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের রােগ নির্ণয় করা যায়। আকুপ্রেশার, চাপ প্রয়ােগ করে শক্তি সঞ্চালন ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রতিফলনতত্ত্ব একই ধরনের একটি পদ্ধতি কিন্তু এর কার্যক্ষেত্র প্রধানতঃ হাত ও পা । হাতের তালু ও পায়ের পাতায় সমস্ত স্নায়ুর শেষ প্রান্ত। যেখানে রয়েছে প্রতিফলন অঞ্চল যা শরীর ও মস্তিষ্কের সকল

ক্ষেত্রে সংযােগ রক্ষা করে। আমাদের পায়ের পাতা ও হাতের তালু সমম্পশ্বীয়ভাবে শরীরের সকল অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। এই প্রতিফলন অঙ্গগুলাে সম্পর্কিত অংশের সমস্যার কারণে স্পর্শকাতর হয়ে পরে। শরীরের ডান পাশের অংশের অঙ্গসমূহ ডান হাতে ও পায়ে বাম পাশের অঙ্গসমূহ বাম হাতে ও পায়ে মাঝের অঙ্গগুলাের প্রতিফলন অঞ্চল। উভয় দিকের হাত পায়ে অবস্থিত। হাত ও পায়ের পয়েন্টগুলিতে হাতের আঙ্গুলের মাধ্যমে বা কাঠি দিয়ে চাপ দিলে শরীরের অঞ্চল ভিত্তিক রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তরঙ্গের সৃষ্টি করে। প্রতিফলন তত্ত্ববীদরা বিশ্বাস করেন হাতে ও পায়ের সব পয়েন্টে প্রেশার বা চাপ দিয়ে শরীরকে সম্পুর্ন সুস্থ রাখা সম্ভব।

মানব দেহের গঠন এবং দেহরুপী কারখানা

বিজ্ঞানিদের মতে পৃথিবীর প্রথম মানব দেহের আবির্ভাব ঘটে আজ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ বছর পূর্বে। যা একটি বিস্ময়কর ঘটনা। আশ্চর্যের ব্যাপার হলাে আজকের যান্ত্রিক এবং আধুনিক যুগে, এমন কোন যন্ত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না যা সৃষ্টিকর্তা মানব শরীরে রাখেনি। এই সব কোমল অথচ শক্তিশালী শারীরিক যন্ত্রগুলি এমন কি ১০০ বছর অবধি নিরবিচ্ছিন্নভাবে পারস্পরিক সমন্বয়ের সাথে কাজ করে। সবচেয়ে বড় কথা, এই মানব শরীর নিজেই সব রােগ নিরাময় করতে সমক্ষ। আকুপ্রেশার চিকিৎসা রােগ নির্ণয়, নিরাময় ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে শরীরকে সাহায্য করে এবং সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অন্তস্রাবি অনালগ্রন্থি যথাযথ সক্রিয় রাখে যার ফলে আমরা নিখুঁত স্বাস্থ্যের অধিকারী হই।

আমরা মানব দেহকে একটি অতি আধুনিক সচল এবং উৎপাদন কারখানার সাথে তুলনা করতে পারি। মানবদেহের গঠন কংক্রিটের তৈরি ইমারতের মতই পায়ের উপর স্থাপিত করা। যা শরীরকে চলাফেরায় সাহায্য করে। প্রথম তলা যেটি মধ্যচ্ছদা অবধি বিস্তৃত। তার মধ্যে আছে পুষ্টি উৎপাদনকারী ব্যবস্থা, বিশােধনকারী ব্যবস্থা, ময়লা নিষ্কাশনকারী ব্যবস্থা, যার দ্বারা মল মূত্র ইত্যাদি থেকে দেহ মুক্ত হয়। আশ্চর্যের বিষয় হল মানব দেহে একটি অনুপম প্রজনন ব্যবস্থা রয়েছে দ্বিতীয়তলায় । দেহরুপী ইমারতের তৃতীয় তলা রয়েছে একটি অবিচ্ছিন্ন গতির পাম্প যাকে হৃদপিন্ড বা Heart বলে। এছাড়া রয়েছে বাতাস নিয়ন্ত্রক ফুসফুস। সবচেয়ে উপরের তলাটি গম্বুজ আকৃতির যার ভিতর রয়েছে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানাের মতাে ব্যবস্থা অতি আধুনিক যন্ত্র সুপার কম্পিউটার এবং দূরভাষ নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র যার দ্বারা বহুদূর বিস্তৃত এবং দ্রুত যােগাযােগ সম্পন্ন করা যায়। অবাক হওয়ার বিষয় হল, শরীরের যন্ত্রগুলাে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরস্পরের মধ্যে সু-সমন্বয়ের সাথে কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *